Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Celeb Death Anniversary

‘অভিনেতা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে হিংসে করিনি! মুকুটে পালক জুড়লে আনন্দে নেচেছি

“বাড়িতে থাকলে বাবা খাওয়ার টেবিলে অপেক্ষা করতেন। তখন বকাবকি করেছি। এখন সেই ‘অপেক্ষা’টাই নেই”, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে মেয়ে পৌলমী।

‘বাবা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ফিরে দেখলেন ‘কন্যা’ পৌলমী বসু।

‘বাবা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ফিরে দেখলেন ‘কন্যা’ পৌলমী বসু। ছবি: ফেসবুক।

পৌলমী বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১৩
Share: Save:

চারটে বছর পার। নিজেকে ধাতস্থ করে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমি পারলাম কই? প্রতি মুহূর্তে বাবাকে যেন বেশি করে হারাই। কিছু না কিছু নিয়ে বাপিকে মনে পড়ছেই। একসঙ্গে বিটোফেন শোনা, টেবিলে খেতে খেতে ভাল বই নিয়ে আলোচনা করা— সব, স-ব। আরও বেশি করে মনে পড়ছে ছেলেমেয়েদের কারণে। ছেলে রণদীপ আগের তুলনায় অনেক সুস্থ। মেয়ে মেখলা হিন্দি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছে। বাপি থাকলে কী খুশিই যে হত! ওদের দেখছি, আর বারে বারে বাবাকে খুঁজছি।

বাপির অভাবে মনখারাপ হওয়ার আরও কারণ আছে। ‘বাবা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কোনও দিন তাঁর সন্তানদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখেননি। বাড়িতে পা দেওয়ামাত্র তিনি অভিনেতার খোলস খুলে আদ্যোপান্ত ‘বাবা’। সেই বাবা, যিনি আমার বা আমার দাদার যে কোনও খারাপ পরিস্থিতিতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেই বাবা, যিনি একই ভাবে ভাল সময় সকলকে নিয়ে উপভোগ করেছেন। আবার যে কোনও কাজে সবার আগে আমাকে ফোন করেছেন। শেষ বারের মতো যে দিন হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তখনও। ফোন করে বললেন, “আমার বই, চশমা, ডায়েরি, কলম পাঠিয়ে দিও। এ সব ছাড়াই চলে এসেছি, অসুবিধে হচ্ছে।” আবার, বাপি বাড়িতে মানেই খাওয়ার টেবিলে আমার জন্য প্রতীক্ষা। আমি হয়তো কাজে, বাড়ির বাইরে। যত ক্ষণ না ফিরেছি বসে থেকেছে।

সন্তানের কাছে মা-বাবা তো অমর! ওঁরাও যে কোনও দিন বিদায় নেবেন, ভাবনার বাইরে। ফলে, সেই সময় বাপিকে যথেষ্ট বকাবকি করেছি। বলেছি, এ ভাবে বসে থাকার কী প্রয়োজন? খিদে পেলে খেয়ে নিয়ো। এখন সেই ‘অপেক্ষা’টাই আর নেই। ইদানীং, খাওয়ার টেবিলে একা খেতে খেতে বাপিকে বড্ড দরকার পড়ছে। লোকে বলে, আমি নাকি ওর ছায়ায় ঢাকা পড়েছিলাম। বাস্তবে ‘অভিনেতা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে কিন্তু কোনও দিন হিংসে করিনি। বাপি সেই সুযোগটাই দেয়নি কখনও। বাপির মুকুটে একটি করে পালক যোগ হয়েছে। আমি আনন্দে আত্মহারা। বাপি জাতীয়-আন্তর্জাতিক স্তরে একের পর এক পুরস্কার পেয়েছে। আমি আনন্দে নেচেছি। বাপি উল্টে বিব্রত, “এ সব কী হচ্ছে! এত বাড়াবাড়ির কোনও মানে হয়?”

বাপির কথা মনে পড়ে বর্তমান বাংলা বিনোদন দুনিয়া, সামাজিক প্রেক্ষাপট দেখেও। বেশ কিছু দিন ধরে একটা কথা খুব শুনছি, ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’। আমার বাপি কিন্তু তাঁর সময়ে টেকনিশিয়ানদের হয়ে প্রকাশ্যে লড়েছিলেন। তার জন্য বাবা ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ও হয়েছিলেন। ইদানীং টলিউড যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাপি থাকলে এখনও একই ভাবে সোচ্চার হত। বয়সের ভারে চুপ থাকত না।

অন্য বিষয়গুলি:

soumitra chatterjee Poulami Bose Remembrance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy