ফাইল ছবি
কেন্দ্রের ডাকে সাড়া দিতে দল-মত-রং নির্বিশেষে উপস্থিত ছিল টলিউড। তবে রাজ্য-রাজনীতির বিচারে সেলেবদের ‘অরাজনৈতিক’ থাকা কি এখন বিশ্বাসযোগ্য?
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আর মাসদুয়েক বাকি। তার আগে গত সোমবার কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এসে টালিগঞ্জের শিল্পী-পরিচালক-প্রযোজক-হলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক সেরে গেলেন। রাজ্যের বিনোদন দুনিয়ার বিভিন্ন সমস্যা, তার সমাধানের প্রস্তাব-সহ নানা প্রতিশ্রুতি উঠে এল বৈঠকে। এনএফডিসির আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দল-মত-রং নির্বিশেষে টালিগঞ্জের বহু মুখ যেমন উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে, তেমনই হাজির ছিলেন তথাকথিত ‘রংহীন’ ব্যক্তিত্বরাও। নির্বাচনের ঠিক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমন উদ্যোগ বড় একটা দেখা যায়নি। তাই এনএফডিসি এবং কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের বৈঠকে হাজির হওয়া নামেদের উপস্থিতি কতটা রাজনৈতিক ইঙ্গিতবাহী, তা নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তাঁদের কাছেই।
এ প্রসঙ্গে পরিচালক গৌতম ঘোষের সাফ বক্তব্য, ‘‘আমি একজন সিনিয়র পরিচালক। এনএফডিসির সঙ্গে আমার অনেক বছরের সম্পর্ক। ওদের ছবি করেছি, ওদের বোর্ড অব মেম্বারস-এও ছিলাম। তাই আমার কাছে যখন আমন্ত্রণ এসেছিল, তখন বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে দেখিনি।’’ এনএফডিসি-র আমন্ত্রণে সাড়া দিতেই যে বৈঠকে যাওয়া, সে প্রসঙ্গে একমত প্রায় সকলেই। আবীর চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘রাজনৈতিক দিকটা আমি বলতে পারব না। হয়তো নির্বাচনের আগে এটা হল বলেই এত কথা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, এই মিটিং আগেই হওয়ার কথা ছিল। তা কোভিডের কারণে সম্ভব হয়নি।’’ শাসকদল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পরিচালক অরিন্দম শীলের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা তুঙ্গে। তিনিও হাজির হয়েছিলেন বৈঠকে। ‘‘এর মধ্যে রাজনৈতিক গন্ধ না খুঁজতে যাওয়াই ভাল,’’ বক্তব্য তাঁর। একই কথা উঠে এল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বয়ানেও, ‘‘ঘোষিত বামপন্থী, দক্ষিণপন্থী, তৃণমূল, অরাজনৈতিক... সব মানুষই ছিলেন বৈঠকে। তাই এখানে জোর করে রাজনীতি ঢোকানোর মানে নেই।’’ এসেছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের মতো পরিচালকেরাও।
তবে ইন্ডাস্ট্রির অনেকে বিষয়টিকে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে দেখতে নারাজ। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় যেমন বললেন, ‘‘আমি আমন্ত্রণ পাইনি। নির্বাচনের আগে প্রকাশ জাভড়েকর টলিউডের লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন, সেটা তো রাজনীতির বাইরে হতে পারে না। তবে বিষয়টিকে রংহীন দেখানোর একটা চেষ্টা করা হয়েছে। যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের অবস্থানের যে বদল হয়েছে, তা বলছি না। তবে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট নয়, সেটা তো বোঝাই যায়। অনীক দত্ত, এই একটা নাম নিয়ে আমার একটু সংশয় রয়েছে।’’ বাম মনোভাবাপন্ন বলে পরিচিত অনীক দত্ত জানালেন, বিজেপির মতাদর্শের সঙ্গে তাঁর ঘোরতর বিরোধ রয়েছে। এই বৈঠকের কোনও রাজনৈতিক রং নেই জেনেই তিনি যোগ দিতে রাজি হয়েছিলেন। ‘‘কে কী উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন, তা আমার জানার কথা নয়। আমি কোনও পার্টিতে না থাকলেও আমার অবস্থানটা কমবেশি সকলেই জানেন। বৈঠকে শাসকদল-ঘনিষ্ঠ অনেককেই দেখলাম। এক দু’-বছর আগে হলেও এই বৈঠকে তাঁদের দেখা যেত কি না, জানি না। তাঁরা কি এখন ভয় পাচ্ছেন না? না কি অন্য ভয় পাচ্ছেন, সেটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল।’’ তবে সোমবারের বৈঠকে ডাক পাননি সাংসদ-অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পাওলি দামের মতো অভিনত্রী যোগ দিয়েছিলেন এ দিনের মিটিংয়ে। নির্বাচনের আগে নামে রাজনৈতিক রং লাগার ব্যাপারে ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘সিনেমা সংক্রান্ত ব্যাপারে ডেকেছিল বলেই আমি গিয়েছিলাম। যদি রাজনৈতিক কিছু হত, তা হলে হয়তো যেতাম না। হ্যাঁ সময়টা ভোটের আগে। তাতে তো আমার কিছু করার নেই।’’
১০০ শতাংশ হল অকুপেন্সির পরেও প্রযোজকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, জাতীয় স্তরের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলা ছবির জায়গা না পাওয়া-সহ নানা সমস্যা উঠে এসেছিল এ দিনের আলোচনায়। মহেন্দ্র সোনি, নিসপাল সিংহ, অশোক ধানুকার মতো প্রযোজকরা ছিলেন বৈঠকে। বাংলার সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আলোচনা করতে আসাকে সদর্থক ভাবেই দেখছেন এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকা, ‘‘৩২ বছর এই পেশায় আছি। কোনও দিন কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক আমাদের সঙ্গে বসে কথা বলেনি। আর আমি দলীয় রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসায়ী, ব্যবসাই বুঝি। ভোটের কারণে হোক বা যে কারণেই হোক, এই উদ্যোগ ভাল লেগেছে।’’
ভাল ছবি দেখানোর মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনকে ব্যবহার করা, এনএফডিসি-র প্রযোজনায় আরও বাংলা ছবি তৈরি, বাংলাদেশে বাংলা ছবির রিলিজ় ও ডিস্ট্রিবিউশনের প্রস্তাব উঠেছিল বৈঠকে। ক্ষমতা ও দলবদলের রাজনীতিতে এই প্রস্তাব ও প্রতিশ্রুতি যাতে হারিয়ে না যায়, তার আশাতেই রয়েছেন চলচ্চিত্রবেত্তারা। বৈঠকে উপস্থিত চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় যেমন বললেন, ‘‘ভোটের আগে সকলেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেন। তার মধ্যে কিছু করা হয়, কিছু হয় না। তা বলে প্রতিশ্রুতিগুলোকে খাটো করে দেখতে চাই না। ‘কন্যাশ্রী’র মতো ভাল কর্মসূচি রাজ্য সরকার আয়োজিত বলে কি সেখানে যাব না? ভাল কাজ, তা যে-ই করুন না কেন, তার পাশে থাকা উচিত। মুখ্যমন্ত্রী যেমন আমাদের সুবিধে-অসুবিধের খেয়াল রাখেন, তেমন উদ্যোগ যদি কেন্দ্র নেয়, তাতে তো ক্ষতি নেই।’’
বৈঠকের আয়োজন ও যোগদানের উদ্দেশ্য যা-ই হোক, সমস্যা ও তা নিয়ে আলোচনা যাতে জারি থাকে— তার পক্ষে ভোট দিলেন সকলেই। কারণ, অতিমারির হানায় চলচ্চিত্র-জগতে রাজনীতির চেয়েও এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্ন। যার মোকাবিলায় জোট বাঁধা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy