রুদ্রনীল এবং সায়ন্তিকা।
রাজনীতির ময়দানে সার দিয়ে তারকার মুখ। সব দলই চায় তারকা ম্যাজিক কাজে লাগিয়ে ভোটের বাজি জিততে। অতীতে এই ম্যাজিক বহুবার কাজ করেছে, আবার বিফলও হয়েছে। কেউ কেউ তার পর রাজনীতি থেকে পিঠটান দিয়েছেন, কেউ মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন। ভোটের ময়দানে আসা সব তারকারই দাবি, তাঁরা মানুষের জন্য কাজ করতে চান। হঠাৎ করে ইন্ডাস্ট্রির বড়-মেজ-সেজ তারকার জনসেবার তাগিদ জাগল কেন? এই প্রশ্নও ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জনহিতকর কাজ করার জন্য প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগদান কি সত্যিই আবশ্যক? হাতের সামনে দৃষ্টান্ত সোনু সুদ।
তারকাদের রং বাছাবাছির পর্ব নিয়ে নেট-মাধ্যমেও চটুল আলোচনা চলছে। সেলেবদের কেরিয়ার নিয়ে কাটাছেঁড়া হচ্ছে। এ দিন যেমন একই পরিবারের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া নেটিজ়েনদের খোরাক জুগিয়েছে। এ বারের ভোট পর্বে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের সিনেমার কেরিয়ার যে খুব একটা মোলায়েম, এমন নয়। তার পর উপরে করোনা-পর্ব ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত করে দিয়েছে। রাজনীতি কি তাঁদের কাছে ‘কেরিয়ার অপশন’— এই প্রশ্নটাও উঠছে।
নিজের রাজনৈতিক মতামত খোলাখুলি ব্যক্ত করতে দ্বিধা নেই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সকলের একসঙ্গে ঠিক এই সময়েই জনসেবার ইচ্ছে জাগল কী করে, সেটা বুঝে উঠতে পারছি না!’’ তিনি নিজে কি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসতে চান? ‘‘না। কোনও দলে না গিয়ে, বাইরে থেকে রাজনীতি নিয়ে কথা বলবে এমন মানুষের প্রয়োজন আজ বেশি। সবাই কোনও না কোনও দলে ঢুকে পড়লে কী করে চলবে,’’ স্পষ্ট জবাব পরমব্রতের। তাঁর বন্ধু এবং বিজেপি সদস্য রুদ্রনীল ঘোষ অবশ্য অন্য কথা বলছেন। ‘‘অরাজনৈতিক ভাবে মানুষের হয়ে কাজ করাই যায়, কিন্তু সেখানে কিছু লিমিটেশন থাকে। বেশি সংখ্যক মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসতে হবে,’’ বক্তব্য রুদ্রনীলের। টলিউডের শিল্পীদের কাছে পলিটিক্স কি এখন কেরিয়ার অপশন? অভিনেতার কথায়, ‘‘কেরিয়ার কি না, বলতে পারব না। আমার মতে, এই কাজটা ভালবাসা থেকে করা উচিত। প্যাশন না থাকলে এ জিনিস হবে না। আর যদি কেরিয়ার বলে ভাবি, তা হলেও তো কাজটা ভালবেসে করতে হবে।’’
অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী যেমন বললেন, ‘‘কে কী ভেবে কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন জানি না। তবে রাজনীতি কারও কেরিয়ার হতেই পারে। আর কমবয়সে এই পেশায় আসাটা ভাল লক্ষণ।’’ তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য সুদেষ্ণা রায় মনে করেন, রাজনীতি অবশ্যই কেরিয়ার অপশন হওয়া উচিত। ‘‘না হলে শিক্ষিত যুবসমাজ রাজনীতিতে আসবে কী করে? রাজনৈতিক পরিবারের ছেলেমেয়েরাই শুধু এই পেশায় আসবে, এমন তো না। আমি রাজনীতিকে পেশা হিসেবেই দেখি। এটাও কাজ, যা দায়িত্ব নিয়ে করতে হয়,’’ বলছেন সুদেষ্ণা। তিনি মহুয়া মৈত্র, ব্রাত্য বসুর উদাহরণ দিলেন, যাঁরা অন্য পেশা ছেড়ে রাজনীতিকে বেছে নিয়েছেন। ব্রাত্য অবশ্য অধ্যাপনা ছেড়ে দিলেও, নাটক-সিনেমার সঙ্গে এখনও যুক্ত।
উজ্জ্বল কেরিয়ার ছেড়ে প্যাশনের টানে রাজনীতিতে যোগ এক রকম। আর ধুঁকতে থাকা কেরিয়ারে অক্সিজেন জোগাতে জনসেবার ইচ্ছে জাগা আর এক রকম। ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে এ ধরনের চর্চা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। সদ্য রাজনীতিতে পা রাখা পায়েল সরকার, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, যশ দাশগুপ্ত কিন্তু স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাঁরা অভিনয় ছাড়বেন না। কারণ, এর থেকেই তাঁদের পরিচিতি, জনপ্রিয়তা। শ্রাবন্তীর দু’-একটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। তার বাইরে ছোট পর্দার একটি রিয়্যালিটি শো ছাড়া তাঁর হাতে কাজ নেই। বাকি নায়িকাদের ফিল্ম কেরিয়ারে এই মুহূর্তে উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ নেই। উপরন্তু মাচা থেকে যে রোজগার তাঁরা করেন, করোনার কারণে এ বার সেটিও হয়নি। হিরণ বা যশের হাতেও বলার মতো কাজ নেই। সায়ন্তিকা যেমন বিকল্প কেরিয়ার হিসেবে কিছু দিন আগে ডান্স স্কুল চালু করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও দিন প্ল্যান করে কাজ করিনি। ইনস্টিংক্টে চলি। এখন রাজনীতিতেই ফোকাস করতে চাই। তার মানে অভিনয়-নাচ ছেড়ে দেব, এমন নয়। এত বছর ধরে মানুষ আমাকে ভালবেসেছেন। এ বার আমার তাঁদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।’’ পায়েল সরকার বলছেন, ‘‘আমার পেশা অভিনয়। রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ থাকলেও, অ্যাক্টিভ পলিটিক্স এই প্রথম করছি। কেরিয়ার অপশন হিসেবে রাজনীতি বাছব কি না, তা নির্ভর করবে কতটা সময় দিতে পারছি তার উপরে।’’
রাজনীতি আর অভিনয়, দুটো যে একসঙ্গে করা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের তিন সাংসদ— দেব, নুসরত জাহান এবং মিমি চক্রবর্তী। কেরিয়ারের শেষলগ্নে নয়, তুঙ্গ মুহূর্তেই এরা পলিটিক্সে এসেছিলেন। এই দুই নায়িকাকে দেখেই যে অনেকে রাজনীতির উঠোনে পা রাখছেন, তা আলাদা করে বলে দিতে হয় না। মিমি যেমন বলছিলেন, ‘‘রাজনীতি আমার কাছে দায়িত্ব।’’ তিনি কিছু পাওয়ার জন্য এ কাজে আসেননি। অভিনয়-শো এগুলোই যে তাঁর জীবিকা, সেটাও স্পষ্ট করে দিলেন।
দেব বা মিমি-নুসরত যে সময়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন, তার চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। একের পর এক তারকার রাজনীতির মঞ্চে প্রবেশের পিছনে কি কোনও ‘খেলা’ই নেই? এই ‘রিক্রুটিং’-এর আড়ালে যে বড় প্রযোজক সংস্থা, সে খবরও বাতাসে ভাসছে। বড় কর্তার পরামর্শে ছোট কর্তা ফোন করে ‘প্রস্তাব’ দিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারকার ওজন হিসেবে প্রস্তাবের ওজন নির্ধারিত হচ্ছে। রাজনীতিমনস্ক এক অভিনেতা যেমন বলেই বসলেন, ‘‘কারও হাতে কাজ নেই। মাচাও হয়নি এ বার। তাই হয়তো জনসেবার পোকা বেশি কামড়াচ্ছে!’’
জনকল্যাণ না আত্মকল্যাণ, কে কোন উদ্দেশে এই রাস্তায় হাঁটছেন, তা সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy