Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

সিরিয়াল দেখাই কাল হল, বলছে মৌমিতার পরিবার

পাড়ার মেয়ে সিরিয়ালে অভিনয় করে, এ নিয়ে গর্বের শেষ ছিল না ব্যান্ডেল কাজিডাঙা জোড়া অশ্বত্থতলার বাসিন্দাদের। কিন্তু শনিবার থেকেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। সকাল থেকেই টিভির খবরে দেখাচ্ছে পাড়ার মেয়েটাকে।

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৌমিতার পরিজনরা। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৌমিতার পরিজনরা। নিজস্ব চিত্র

তাপস ঘোষ
ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৯
Share: Save:

থম মেরে গিয়েছে পুরো পাড়াটা।

পাড়ার মেয়ে সিরিয়ালে অভিনয় করে, এ নিয়ে গর্বের শেষ ছিল না ব্যান্ডেল কাজিডাঙা জোড়া অশ্বত্থতলার বাসিন্দাদের। কিন্তু শনিবার থেকেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। সকাল থেকেই টিভির খবরে দেখাচ্ছে পাড়ার মেয়েটাকে। রিজেন্ট পার্কের আবাসন থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে মৌমিতা সাহা নামে ওই অভিনেত্রীর ঝুলন্ত দেহ।

এলাকায় গিয়ে জানা গেল, স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল সাহা এবং শ্যামলীদেবীর দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোট মৌমিতা। ছেলেবেলা ছেকেই তাঁর সিরিয়াল দেখার শখ। ছোট থেকে সেজে আয়নার সামনের দাঁড়িয়ে অভিনয়ও করতেন। অনেক অভিনেত্রীকে অনুকরণ করে তাক লাগিয়ে দিতেন পড়শিদের। ব্যান্ডেল বিদ্যামন্দির স্কুলে পড়াশোনা করার সময়ই মৌমিতা তাঁর অভিনেত্রীর হওয়ার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন দাদু কানাই দে-কে। কানাইবাবু কলকাতার টালিগঞ্জে ট্যাক্সি চালাতেন। সেই সূত্রে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গেও তাঁর পরিচয় ছিল। ছোট নাতনির সঙ্গে সেই রঙিন দুনিয়ার কথা ভাগ করে নিতেন দাদু। আর সেই গল্প মুগ্ধ হয়ে শুনতেন মৌমিতা।

মাধ্যমিক দিয়ে পড়া ছেড়ে মডেলিং করার সিদ্ধান্ত নেন মৌমিতা। তা নিয়ে অবশ্য পরিবারের অসম্মতি ছিল। কিন্তু এ বিষয়েও তিনি পাশে পেয়েছিলেন সেই দাদুকেই। নাতনির ইচ্ছেপূরণের জন্য টলিউডের অভিনেতা এবং সিনেমা জগতের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন কানাইবাবু। ব্যান্ডেল থেকে রোজ টালিগঞ্জে যাতায়াতে সমস্যা হওয়ায় কলকাতার রিজেন্ট পার্কে বাড়ি ভাড়া নেন তিনি।

সুযোগও আসে। বেশ কিছু বাংলা সিরিয়ালে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন মৌমিতা। এর মাঝে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। পার্শ্ব চরিত্রের বদলে এ বার মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মৌমিতা। কিন্তু তেমন কোনও ডাক আসেনি। মৌমিতার মা শ্যামলীদেবী জানান, ‘‘কয়েক মাস ধরেই কেমন মনমরা হয়েছিল মেয়েটা। বলছিল, এত পরিশ্রম করি, কেউ দাম দেয় না।’’ সম্প্রতি বাবা-মায়ের সঙ্গে কিছুটা মনোমালিন্যও হয়েছিল। সপ্তাহ খানেক আগে শ্যামলীদেবীই কলকাতায় মেয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁর অভিমান ভাঙিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি ফেরার পরও ফোন ধরছিলেন না মৌমিতা। শ্যামলীদেবী বলেন, ‘‘শনিবার সকালে মেয়েকে খবরে দেখেই বুঝি, সব শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছেন না বছর ছেষট্টির কানাই দে। মাথায় হাত দিয়ে বসে কেবলই বলে চলেছেন, ‘‘কেন যে সিনেমা করার ভূত মেয়েটার মাথায় ঢ়ুকিয়েছিলাম! ওই সিরিয়াল দেখাই ওর কাল হল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy