পার্নো মিত্র। অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে খুঁজে পেয়েছেন আলোর রেখা।
তিনিও অভিনেতা ছিলেন। দাঁতে দাঁত চেপে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছিলেন সেই তরুণও। কিন্তু আজ কেন আমি সেই সুশান্ত সিংহ রাজপুতের কথা তুলছি?
কারণ, সুশান্তের পথের পথিক হতে চেয়েছিলাম আমিও... হ্যাঁ, আমিও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। আর আমিও অভিনেতা, আমিও বয়সে তরুণ।
আসলে কি জানেন, বেঁচে থাকার সব দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায়, মুছে যায় শেষ আশাটুকুও, তখনই মানুষ চরম সিদ্ধান্ত নেয়। আমি নিজেও এই অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। গত দেড় বছর ধরে টানা ওষুধ খাচ্ছি আমিও! এই কথাগুলো লিখতে গিয়ে বার বার যন্ত্রণায় বুজে আসছে আমার গলা।
সুশান্তের ব্যথা হয়তো আমি অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারছি। একটা সময় আমিও ওঁর মতোই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আত্মহত্যা করব। অনেক বার গুগল সার্চ করেছি, সুইসাইডের উপায় জানতে। যেহেতু আমার দিকে পরিবারের অনেকগুলো মুখ তাকিয়ে তাই একটা সময় কাজের পরে কাজ করে যেতে হয়েছে, এখনও করছি। সমস্ত যন্ত্রণা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছি। এই যন্ত্রণা কিছু শব্দ বা বাক্য দিয়ে বোঝানোর নয়। এই ব্যথা উপলব্ধি করতে হয় মনের গভীর থেকে।
আরও পড়ুন: ‘সুশান্তের মৃত্যু পরিকল্পিত খুন’, বলিউডের প্রভাবশালীদের দিকে তির কঙ্গনার
কেন এত যন্ত্রণা আমার? কেনই বা সুশান্তের নেওয়া পথই বেছে নিতে চেয়েছিলাম আমি?
আমার বাবা ছিলেন হোমিয়োপ্যাথ। তাঁর কাছে বহু মানুষ আসতেন তাঁদের মানসিক অবসাদ নিয়ে। এর থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে চাইতেন তাঁরা। আমার মনে পড়ছে, অনেকে এসে বলতেন, ‘আমার শরীর খারাপ। মনও খারাপ। তাই বলে ভাববেন না আমি পাগল। আমায় ভাল করে দিন।’ এ দিকে বাড়িতে কিন্তু আমার মা-ও গভীর অবসাদের রোগী।
আমি ছিলাম বাবা অন্ত প্রাণ। বাবা ছাড়া কিছু বুঝতাম না। সেই বাবা এক দিন আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেল। যে মানুষটাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারতাম না, সেই মানুষটাকে ছেড়ে বাঁচব কী করে— এই ভাবনা কুরে কুরে খেত... তার সঙ্গে জুড়ে গেল আরও কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা। গভীর অবসাদে ডুবে যেতে লাগলাম আমি...। বার বার মনে হত, আমি ওয়ার্থলেস। আমার কোনও প্রয়োজন নেই বেঁচে থাকার।
শেষমেশ অবসাদই গ্রাস করে নিল সুশান্তকে।—ফাইল চিত্র।
সত্যি বলছি, বার বার মনে হত, আমি ওয়ার্থলেস... আমি ওয়ার্থলেস... আমি ওয়ার্থলেস...!
এই অবস্থা যখন চলতে থাকে সে সময় আমার কত নামডাক, আমি দেখতে কতটা সুন্দর, অর্থ, প্রতিপত্তি— কিচ্ছু মাথায় থাকে না। একটাই কথা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে, জীবনের আর কোনও মানে নেই। আশা নেই। ক্লান্তিতে মন এতটাই ভরা থাকে যে মনে হয় সব ছেড়ে যাই এ বার! নতুন ছবি সাইনের কথাও তখন মাথায় থাকে না।
জানেন, মনের দিক থেকে এলোমেলো মানুষগুলোকে বাইরে থেকে দেখে একটুও বোঝা যায় না, এঁদের ভেতরে কী ঝড় চলছে! বাইরে এঁরা যতটাই শান্ত, ভেতরে সাঙ্ঘাতিক অশান্ত। সুশান্তকে বাইরে থেকে দেখেও কি কিছু বোঝা যেত?
আরও পড়ুন: মৃত্যুর আগের রাতে সুশান্তের ফোন ধরেননি রিয়া, সম্পর্ক কি একেবারেই তলানিতে ঠেকেছিল দু’জনের?
জানতে চাইছেন তো, সেই অবস্থা থেকে কী ভাবে আলোর পথ দেখলাম?
গত দেড় বছর ধরে আমি এই অবস্থার ভেতর দিয়ে গিয়েছি। এখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারিনি। এখনও নিয়ম করে ওষুধ খেতে হয়। সেই সময় ভাগ্যিস পাশে পেয়েছিলাম বাড়ির লোকেদের। তাঁরা আমায় ফিল করতে পেরেছিলেন। যদিও শুধু বাড়ির লোকের মাধ্যমে অবসাদ কাটানো যায় না। অবসাদ একটি অসুখ। অবসাদ কাটাতে অবশ্যই ডাক্তার বা থেরাপিস্টের কাছেই যেতে হবে। বন্ধুদের সঙ্গে কফি খেতে গেলে বা হ্যাংআউটে গেলে অবসাদ কাটবে না। যাঁরা অবসাদে ভুগছেন তাঁরা কিন্তু তা লুকিয়ে রাখবেন না বা লজ্জা পাবেন না। এমনকি, সামান্য স্ট্রেসড হলেও থেরাপিস্টের কাছে যান। ওঁদের কারণেই কিন্তু আমি এখন অনেকটাই রিল্যাক্সড।
আরও পড়ুন: অনেক রহস্য রেখেই যাত্রা শেষ সুশান্ত সিংহহ রাজপুতের
যদিও আমার ম্যানেজার, যে আমার খুব বন্ধুও বটে, মাঝেমধ্যেই জিজ্ঞেস করে, তুমি এত প্রাণবন্ত... বন্ধুদের সঙ্গে এত আড্ডা দাও... তা-ও কেন ডাক্তারের কাছে যাও? ওকে কী করে বোঝাই, আমার মনের খবর ওঁরাই জানেন।
এখন খুব দেখছি সোশ্যাল হ্যাশট্যাগ, মনের দুঃখ আমাকে বলুন। এটা কি আদৌ অবসাদে ডুবতে থাকা মানুষদের ভেসে উঠতে সাহায্য করে? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। আমি এতে সমর্থন জানাতে পারছি না। মনখারাপ আর অবসাদ কিন্তু এক নয়। সবাইকে সব কথা খুলেও বলা যায় না। বললেও তিনি হয়তো বুঝবেন না। অনুভবও করতে পারবেন না। তা ছাড়া অচেনা কাউকে কি নিজের মন খুলে দেখানো যায়?
সুশান্ত শেষমেশ পারলেন না। কিন্তু তাঁর মতো বা তাঁর থেকেও খারাপ মানসিক অবস্থায় আর যাঁরা আছেন, এই অবস্থা পেরিয়ে বেরোতেই হবে তাঁদের। বেরোতেই হবে তাঁর নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, নিজের কাজের জন্য এবং সমাজের আরও অসংখ্য মানুষের মনে ভরসা জাগানোর জন্য।
আমি জানি, নিজের জীবন দিয়ে জানি, এ ভাবেই ফিরে আসা যায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy