নুসরত জাহান।
পাঁচ বছর আগেও অঞ্জলি দিতেন। আশ্বিনের ছাতিমের গন্ধ আর অঞ্জলি তাঁর জীবনে একাত্ম হয়ে আছে। যে যা-ই বলুক দুর্গাপুজোর অপেক্ষার ঢাক তাঁর মনেও বেজে উঠতো।‘‘আজ তবে আমার অঞ্জলি দেওয়া, সিঁদুর খেলা নিয়ে মাতামাতি কেন?’’প্রশ্ন তুললেন নুসরত জাহান।কেন তিনি মঙ্গলসূত্র আর সিঁদুর পরলেন বিয়ের পর?
সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ট্রোলিং। ট্রোল হওয়া যেন নিত্যদিনের সঙ্গী তাঁর। ‘‘এই মন্তব্য নিয়ে আর মাথা ঘামাই না। কিছু মানুষ আমার নাম নিয়ে মিডিয়ার প্রচারের মুখ হয়ে থাকতে চান। তাঁরা থাকুন। আমার কী বা করার আছে?’’সহজ করে বললেন নুসরত।
না, আজ আর তিনি রাগেন না। ঠান্ডা মাথায় সাংসদের দায়িত্ব থেকে নিখিলের পছন্দের রান্না— সব একা হাতে সামলান।
এই নুসরত অনেক পরিণত। রাজনীতি, প্রেম, সংসার,সিনেমা, সমাজ— ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে এক ভারসাম্য এক রং মাখিয়েচলেছেন তিনি। এই রং মানবতার।
নুসরতের কথায়: ‘‘ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভাজন আল্লাহ চাইতেই পারেন না। আমিবিশ্বাস করতে শুরু করেছি সমাজের যা কিছু ওপর থেকে চাপানো, তৈরি করা আচার-নীতি, আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই করব। এটা আমার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। আমিমানুষের প্রতি ভালবাসা আর বিশ্বাসে অনড় থাকব। এটাই আমার লড়াই!’’
শুধু কোনও ছবির অভিনেত্রী আর নেই তিনি।শুধুই একজন রাজনীতিবিদ?
নাহ! তাঁর দৃঢ় মেজাজে অনেক প্রশ্ন ভাঙার নরম তেজ। সে চলছে অন্য পথে।
আরও পড়ুন- কার সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন ‘ত্রিনয়নী’-র সুধা?
আরও পড়ুন-ভোগ রাঁধলেন অর্পিতা, মিমি-নুসরতরাও মাতলেন লক্ষ্মী পুজোর আনন্দে, দেখুন ফোটো অ্যালবাম
এই মিলমিশের পথ নুসরতকে অন্য ভাবে গড়ছে। ‘‘আমি একজন মানুষ। আমি আমার ভালবাসার মানুষকে শুভ শারদীয়া বলতে পারব না?’’বিস্মিত নুসরত। তির্যক মন্তব্য আর আক্রমণ নিয়ে তিনি আর ভাবেন না। বরং মনে করেন, এই তো নিখিল প্রথম ঢাক বাজালো এ বারের পুজোয়। ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজয়ার প্রণাম করতে গিয়ে ওঁরবোনের হাতের তৈরি নারকেল নাড়ু নিখিল প্রথম খেল।এর আগে ও কোনও দিন নারকেল নাড়ু খায়নি! এটাই আমার দুর্গাপুজো!’’ উচ্ছ্বসিত নুসরত।
যে উৎসব সকলের, সেই উৎসব থেকে নিজেকে আলাদা করবেন কী করে?
শুটিং থেকে ছুটি পেলেই চলে যান টাকিতে। বিসর্জনও দেখেছেন সেখান থেকে। পুজো উপলক্ষ্যে পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের জামাকাপড় দিয়েছেন নিখিল আর নুসরত।
‘‘সবাইকে উপহার দেওয়ার মধ্যে যে আনন্দ সেটাই দুর্গাপুজোর আনন্দ,’’শান্ত স্বরে বললেন নুসরত।
পুজোর সব দিন শাড়ি আর নিখিল!
‘‘নিখিলের পোশাক নিয়ে যেমন আমার ভাবনা থাকে। নিখিলও মাঝে মাঝে চমকে দিয়ে বলে,‘‘আরে চুল বাঁধছ কেন? চুলটা খুলে রাখ।’’ এ ভাবেই বেঁধে বেঁধে চলছেন নবদম্পতি। এই চলায় ধর্ম বিরোধ নয়, মিলনের সুর নিয়ে ফেরে। তাঁর আগামী ছবি ‘অসুর’-এর প্রমোশনের জন্য যেমন মজা করে স্বামী নিখিলকে অসুর সাজিয়ে ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করেছেন নুসরত।
কখনও চিন্তা হয় না নিজের জন্য?
‘‘আগে তো ট্রোলেই যা খুশি বলা হত। এখন থ্রেট কল আসছে। তবে ওই যে বললাম, ভেতরের বিশ্বাস। যে কোনও জায়গা থেকে মানুষ ঈশ্বরের আরাধনা করতে পারে। সেটা বাড়ি হতে পারে। মন্দির হতে পারে। মসজিদ হতে পারে। সর্বশক্তিমানের সৃষ্টি যে মানুষ, আমি সেই মানুষকে ভালবাসি। তাই ঈশ্বরও আমায় ভালবাসবেন’’, বুঝিয়ে দিলেন নুসরত।
তাঁকে দেখে জীবন্ত হয়ে যায় পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতা...
‘অনেক সুইমিং পুল কার্পেট বিছানো বেডরুমে
অনেক সুগন্ধী ফ্ল্যাট পার্ক স্ট্রীটে জুহুর তল্লাটে
ডানলোপিলোর ঢেউ ডাবলবেডের সুখী খাটে
জোনাকী যেভাবে মেশে অন্ধকারে সর্বস্ব হারিয়ে
প্রভাতে সন্ধ্যায় তারা সেইভাবে মিলেমিশে হাঁটে।
আরশিতে সর্বদা এক উজ্জল রমণী বসে থাকে।
তার কোনো পরিচয়, পাসপোর্ট, বাড়ির ঠিকানা
মানুষ পায়নি হাত পেতে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy