তাঁকে নিয়ে কৌতূহলের এমনিতেই শেষ নেই। মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া সৌন্দর্য আর অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি যৌনতার প্রতীক হিসেবে গোটা বিশ্বে ধারাবাহিক ভাবে চর্চা হয়েছে মার্কিন অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোকে নিয়ে। সেই গল্পে যোগ হল আরও একটি গোপন তথ্য।
‘মেরিলিন: দ্য প্যাশন অ্যান্ড প্যারাডক্স’ নামে তাঁর সাম্প্রতিক বইয়ে লয় ব্যানার দাবি করেছেন, নাতাশা লাইটেস নামে এক জার্মান মহিলা অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দিতেন মনরোকে। সেই মহিলার সঙ্গে দু’বছর স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবনযাপন করেছেন মনরো। কলম্বিয়া পিকচার্সের ওই প্রশিক্ষকের সঙ্গে মনরো কাজ করেছেন দীর্ঘ সাত বছর, ১৯৪৮-১৯৫৫। তার মধ্যে দু’বছর নাতাশার সঙ্গে সমকামী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন মনরো।
তিন বার বিয়ে করলেও মনরো কিন্তু নিজেই এক সময় বিভিন্ন অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর সমকামী সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে নাতাশার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি এত দিন অজানাই ছিল। ওই প্রশিক্ষকের লেখা একটি চিঠির সঙ্গে নিলাম হতে চলেছে মনরোর জিন্স, কিছু রত্ন, আর লম্বা ঝোলা দুল।
এবং সেই জিন্স নাকি ‘ডিয়ারেস্ট ফ্রেন্ড’ নাতাশাকে উপহার দিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী। ওই চিঠিতে অবশ্য মনরোর সঙ্গে সমকামী সম্পর্কের কোনও উল্লেখ নেই। তবে যে বছর মেরিলিন অতিরিক্ত মাদক সেবনের জন্য মারা যান, সেই ১৯৬২-তেই লাইটেস এক সাক্ষাৎকারে বিশদ জানিয়েছিলেন তাঁদের সম্পর্কের কথা। তাঁর সঙ্গে নাতাশার যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, তা কাছের বন্ধু এবং অভিনেতা টেড জর্ডনকে অকপটে জানিয়েছিলেন মেরিলিন। বলেছিলেন, তিনি নাতাশার শয্যাসঙ্গিনী। মনরো বলেছিলেন, “যাদের তুমি পছন্দ করো, তাদের সঙ্গেই তো যৌন সম্পর্ক হয়। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কি কোনও ভুল রয়েছে?”
নাতাশার সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, মনরোর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা ১৯৪৬-এ। সেই সময় মনরো মাত্র ২০। আর লাইটেসের কথায়, “তখন ও মোটেই সুন্দরী ছিল না। কথা বলতে পারত না ঠিক করে। কী ভাবে মুখ খুলতে হয়, তা-ই জানত না। সব কিছুতে ভয় পেত।” লাইটেসের দাবি, ওর সঙ্গে থাকার সেই দু’বছর বাড়িতে বেশির ভাগ সময়েই নগ্ন হয়ে থাকতে পছন্দ করতেন মনরো। তাঁর মন্তব্য, “আমি এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না। সব সময়েই বাড়িতে নগ্ন থাকত ও।” কিন্তু এর পাশাপাশিই লাইটেসের পর্যবেক্ষণ, মনরো সাংঘাতিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করতেন। “ওকে যা যা ‘মেরেলিন মনরো, যৌনতার প্রতীক’ হিসেবে গড়ে তুলেছিল, সে সব হারানোর ভয়ে কুঁকড়ে থাকত ও। পোশাক, মেক আপ, আদব-কায়দা এই সব ছাড়া কিছু ভাবতেই পারত না ও। মনে করত, যৌনতা ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার নেই ওর। অথচ অদ্ভুত ভাবে যৌনতার প্রতি অসম্ভব ঘৃণা, ভয় ছিল ওর। ওকে কেউ ‘সেক্সি’ বললে ওর ভাল লাগত না।”
মেরিলিনের মৃত্যুর দু’বছর পরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নাতাশা। কিন্তু ঘনিষ্ঠতার দিনগুলোয় শু্যটিংয়ের সময়েও অভিনয়ের শিক্ষিকাকে কাছছাড়া করতে চাইতেন না মনরো। “সেটের মধ্যেও ওর সঙ্গে থাকতে হত। ওর হাত ধরে থাকতাম। মনরো নিজেই পরিচালককে বলতেন, আমার আরও একটু কাছে কি ও থাকতে পারে? পরিচালক বলতেন, হ্যাঁ কিন্তু উনিও যে ফ্রেমে চলে আসছেন!” কিন্তু নাতাশার দাবি, যে সব শটে মনরোর মাথা বা কাঁধ দেখা যেত, সে সব সময়ে তাঁর হাত শক্ত করে ধরে রাখতেন মার্কিন অভিনেত্রী। বলতেন, এই ভাবেই সাহস পাই।
শেষ পর্যন্ত মেরিলিনের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঠেকানো যায়নি ঠিকই, কিন্তু তার আগেও একবার মনরোকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন নাতাশা। এক দিন তিনি দেখেছিলেন, ঘুমের বড়ির শিশি নিয়ে বিছানায় শুয়ে মনরো। চুল অবিন্যস্ত। মুখটা ফ্যাকাশে। দৃষ্টি শূন্য। নাতাশা ছুটে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “কী করেছ মেরিলিন?” মেরিলিনের উত্তর, “কিছু না।” তখন ভয় পেয়ে তাঁর গালে বেদম জোরে চড় মারেন নাতাশা। জোর করে মুখ খুলিয়ে দেখেন, সবুজ মতো কী যেন দলা পাকিয়ে রয়েছে মুখে। “জানতাম না সেটা কী। কিন্তু ওর মুখ থেকে ওটা বার করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। পরে জেনেছি, ১৬টা ঘুমের বড়ি খেয়ে ফেলেছিল ও। ডাক্তার বলেছিলেন, ও মরেই যেত। ওই সময়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল ও। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল,” বলেছেন তিনি।
নাতাশা মনে করতেন, তাঁর কাছে যৌনতার ঊর্ধ্বে কোথাও যেন শিশুর মতো স্নেহের জন্যও কাঙাল ছিলেন মেরিলিন। যিনি পরে নাতাশা সম্পর্কে বলেছিলেন, “মিস লাইটেস আমাকে বুঝতেন। আমি ওঁর কাছে ঋণী।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy