Neelima Azeem is alone in personal life inspite of her past 3 marriages dgtl
Neelima Azeem
ব্যক্তিগত টানাপড়েনে ব্যাহত প্রতিভা, ৩ বার বিয়ের পরেও একা শাহিদ কপূরের মা
শাহিদের জন্মের পর থেকেই পঙ্কজ-নীলিমার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। শাহিদের যখন সাড়ে ৩ বছর বয়স, বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর বাবা মায়ের। পরে এক সাক্ষাৎকারে নীলিমা জানিয়েছিলেন, বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ছিল পঙ্কজ কপূরের।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
প্রথম সন্তানের মা হওয়ার পরে পা রেখেছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রতিভার দিক দিয়ে তিনি এগিয়ে ছিলেন সমসাময়িক অনেকের থেকে। কিন্তু ব্যক্তিগত-সহ নানা কারণে বার বার অবরুদ্ধ হয়েছে এগিয়ে যাওয়ার গতি। অভিনেত্রীর পাশাপাশি তিনি একজন নৃত্যশিল্পী, লেখক এবং পরিচালক। শাহিদ কপূরের মা নীলিমা খট্টর তাঁর চলার পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন।
০২২০
নীলিমার বাবা এবং মা দু’জনেই ছিলেন সাহিত্যজগতের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৮ সালের ২ ডিসেম্বর নীলিমার জন্ম রাশিয়ার মস্কো শহরে। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক আবহে নীলিমার শৈশব কেটেছে।
০৩২০
নীলিমার জন্মের কয়েক বছর পরে তাঁর বাবা মা চলে আসেন দিল্লিতে। সেখানে তাঁরা চাকরি করতেন একটি নামী ফিল্মি পত্রিকায়। নীলিমার মামা খাজা আহমদ আব্বাস ছিলেন সাংবাদিক এবং পরিচালক। তাঁর বাড়িতে বলিউডের বহু তারকা সমাগম হত। টিনসেল টাউনের সঙ্গে সেখানেই পরিচয় নীলিমার।
০৪২০
ছোট থেকেই নীলিমার আগ্রহ ছিল কত্থক নাচে। তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছে। তিনি দ্রুত বিরজু মহারাজের পছন্দের ছাত্রী হয়ে ওঠেন। নীলিমা নিজেই কোরিয়োগ্রাফি শুরু করেন। নাচের পাশাপাশি তিনি জড়িয়ে পড়েন থিয়েটারের সঙ্গেও।
০৫২০
অভিনয়ের সূত্রেই কিশোরী নীলিমার পরিচয় পঙ্কজ কপূরের সঙ্গে। পরিচয়ের ১ বছরের মধ্যেই তাঁরা বিয়ে করেন ১৯৭৫ সালে। তখন নীলিমা ষোড়শী। পঙ্কজ কপূরের বয়স ২১ বছর। ৬ বছর পরে জন্ম তাঁদের প্রথম সন্তান, শাহিদের।
০৬২০
শাহিদের জন্মের পর থেকেই পঙ্কজ-নীলিমার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। শাহিদের যখন সাড়ে ৩ বছর বয়স, বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর বাবা মায়ের। পরে এক সাক্ষাৎকারে নীলিমা জানিয়েছিলেন, বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ছিল পঙ্কজ কপূরের।
০৭২০
বিচ্ছেদের পরে নীলিমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর বাবা মা। নীলিমা নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন নৃত্যসাধনায়। বিরজু মহারাজের সঙ্গে দেশ বিদেশে শো করতে যেতেন তিনি। শাহিদ থাকতেন তাঁর দাদু দিদিমার কাছে। নীলিমা জানিয়েছেন, বাবার স্নেহ পাননি বলে শাহিদ ছোট থেকেই নিজের বন্ধুদের বৃত্তের বাইরে খুব চুপচাপ।
০৮২০
অর্থোপার্জনের কথা ভেবে নীলিমা নাটকের পাশাপাশি সিনেমাতেও অভিনয় করবেন বলে ঠিক করেন। রাজ বব্বর এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী নাদিরার সঙ্গে তাঁর ভাল বন্ধুত্ব ছিল। তাঁদের সূত্রেই প্রথম ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। নীলিমা অভিনয় করেন ‘কর্মযোদ্ধা’ ছবিতে। তবে সেটি মুক্তি পেয়েছিল অনেক পরে।
০৯২০
তার আগেই ১৯৯০ সালে মুক্তি পেয়েছিল নীলিমার প্রথম ছবি ‘সেলিম লঙড়ে পে মত রো’। বলিউডে সুযোগ বাড়তে থাকায় নীলিমা দিল্লি থেকে মুম্বই চলে আসেন। পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকতে শুরু করেন। দিল্লির মতো মুম্বইয়েও সিনেমার বাইরে তাঁর দীর্ঘ সময় চলে যেত নাটকের জন্যই।
১০২০
বলিউডের ছবিতে আত্মপ্রকাশের আগে নীলিমা অভিনয় করেছিলেন দূরদর্শনে। ১৯৮৯ সালে শুরু হয়েছিল ধারাবাহিক ‘ফির ওহি তলাশ’। ধারাবাহিকে শেহনাজের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নীলিমা। তাঁর বিপরীতে ক্যাপ্টেন সেলিমের চরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিল শাহরুখ খানের।
১১২০
বেশ কিছু দিন মহড়াও দিয়েছিলেন শাহরুখ। কিন্তু পরে পরিচালক লেখ টন্ডনের মনে হয়েছিল শাহরুখের লুক ঠিক ক্যাপ্টেনের মতো নয়। তাঁর চোখের উপর চুল এসে পড়াও পছন্দ হয়নি পরিচালকের। পরে তাঁর বদলে ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন রাজেশ খট্টর।
১২২০
একসঙ্গে কাজ করতে করতেই পরিচয় এবং প্রেম। ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন রাজেশ এবং নীলিমা। ৫ বছর পর জন্ম তাঁদের একমাত্র সন্তান ঈশানের। নীলিমার দ্বিতীয় বিয়েও অবশ্য ভেঙে যায়। ২০০১ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁদের।
১৩২০
ধারাবাহিক ‘ফির ওহি তলাশ’-এ নীলিমার অভিনয় দেখে পছন্দ হয় মহেশ ভট্টের। তিনি তাঁকে সুযোগ দেন ‘সড়ক’ ছবিতে। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। ছবিতে ‘তাক ধিনা ধিন’ গানের শ্যুট করতে গিয়ে নীলিমার পায়ের পাতায় ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল। টানা এক সপ্তাহ ধরে নাচের শ্যুটিং হয়েছিল। খালি পায়ে কড়া রোদে নাচতে হয়েছিল নীলিমাকে।
১৪২০
হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘তলাশ’ ধারাবাহিকেও অভিনয় করেন নীলিমা। এই ধারাবাহিকে প্রথমে রেখা এবং শাবানা আজমির কথা ভেবেছিলেন পরিচালক। পরে তিনি নেন নীলিমাকে।
১৫২০
ভাল অভিনয়ের সুবাদে তাঁর কাছে একের পর এক অভিনয়ের সুযোগ আসতে থাকে। কিন্তু এক দিকে নাচের কেরিয়ার, অন্য দিকে পারিবারিক আপত্তি। এই দুই কারণে তিনি অনেক ছবিতেই অভিনয় করতে পারেননি। ‘উমরাও জান’, ‘উৎসব’, ‘মাণ্ডি’, ‘হীনা’, ‘মশাল’-এর মতো ছবির সুযোগ তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়।
১৬২০
২০০১ সালে দ্বিতীয় বিচ্ছেদের পরে আরও এক বার একা হয়ে যান নীলিমা। শাহিদ ও ঈশানকে নিয়ে আবার শুরু হয় একক মাতৃত্বের জীবন। তত দিনে শাহিদ দক্ষ নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচয় পেয়েছেন। শামক দাভরের দলে তিনি ছিলেন নামী শিল্পী। ২০০৩ সালে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ছবিতে। ছবির নাম ছিল ‘ইশক ভিশক’। এই ছবিতে শাহিদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নীলিমাই।
১৭২০
দ্বিতীয় বিয়ে ভাঙার ৩ বছর পরে নীলিমা আবার বিয়ের কথা ভাবতে শুরু করেন। ২০০৪ সালে তিনি বিয়ে করেন বাল্যবন্ধু রাজা আলি খানকে। ধ্রপদী সঙ্গীতশিল্পী রাজা আলি খান হলেন কিংবদন্তি শিল্পী বড়ে গুলাম আলি খানের নাতি। দু’জনেরই এটা ছিল তৃতীয় বিয়ে।
১৮২০
নীলিমার তৃতীয় বিয়ে মানতে পারেননি শাহিদ। তাঁর মনে হয়েছিল, মা খুব দ্রুত সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এই নিয়ে নীলিমার সঙ্গে মতবিরোধও হয়েছিল শাহিদের। কিন্তু এই তৃতীয় বিয়েও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১১ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় রাজা এবং নীলিমার।
১৯২০
নীলিমার প্রথম এবং দ্বিতীয় স্বামী এখন বিবাহিত। পঙ্কজ কপূর ১৯৮৮ সালে বিয়ে করেছেন সুপ্রিয়া পাঠককে। দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী রাজেশ খট্টর ২০০৮ সালে বিয়ে করেছেন বন্দনা সজনানিকে। তাঁদের একটি ছেলেও হয়েছে কয়েক বছর আগে। কিন্তু নীলিমা এখন ব্যক্তিগত জীবনে সম্পূর্ণ একা। পরিচালনা, লেখালেখি, অভিনয় এবং কত্থক ঘিরেই আবর্তিত হয় তাঁর জীবন।
২০২০
কার্যত একক লড়াইয়ে নীলিমা বড় করেছেন দুই ছেলেকে। শাহিদ এবং ঈশান, দু’জনেই তাঁদের মায়ের প্রতিভার যোগ্য উত্তরাধিকারী। দীর্ঘ দিন দূরে থাকার পরে শাহিদের সঙ্গে পঙ্কজ কপূরের সম্পর্কও সহজ হয়। প্রথম দিকে ‘খট্টর’ পদবি ব্যবহার করলেও পরে শাহিদের নামের পাশে বসে ‘কপূর’ পরিচয়ই।