উত্তর কলকাতার বাড়িতে নিরিবিলি সকাল কাটে রুদ্রপ্রসাদের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিবেকানন্দ রোডের বাড়িতে পুরনো সংসার। বারান্দা লাগোয়া চেয়ার-টেবিলে একা বসে কাগজ পড়ছেন প্রাচীন এক বটগাছ, নাম রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। বাংলার নাট্য বিবর্তনের ইতিহাসে তাঁর নাম জ্বলজ্বল করে। কফিতে চুমুক দিয়ে শুরু হল কথোপকথন। যুগের পর যুগের গল্প চলল রেকর্ডার বন্ধ হওয়ার পরও।
প্রশ্ন: আশিতে আসিও না বলবেন, না কি জীবনের ৮৮তম বসন্তই উপভোগ করছেন?
রুদ্রপ্রসাদ: (একটু ভেবে) দম ফুরিয়ে আসছে। এ বার মনে হচ্ছে, যেতে হবে। স্বাতীলেখার অনুপস্থিতিও যন্ত্রণা দেয়। মনে হয় যে, ও নেই কেন? তা সত্ত্বেও রোজ যা করার তা করছি। খাওয়া, ঘুমোনো, ইয়ার্কি মারা, রোজ বিকেলে গাড়ি করে একটু বেড়ানো... বিকেলে বেরোনোর এই ব্যবস্থাটা স্বাতীই করে দিয়েছিল। ওর বেরোনোর অভ্যাস ছিল বিকেলে। আমাকেও যেতে হত।
প্রশ্ন: এই সময়টায় বই লেখা বা অন্য কিছুর কথা মাথায় আসেনি?
রুদ্রপ্রসাদ: পরিশ্রম করতে আর ইচ্ছে করে না। সারাটা জীবন অনেক পরিশ্রম করেছি। যে কাজটা আগামিকাল করব ভাবি, সেটা পরবর্তী আগামিকালের দিকে চলে যায়। শুধু বই পড়াটা চলতে থাকে।
প্রশ্ন: কী পড়ছেন এখন?
রুদ্রপ্রসাদ: খবরের কাগজ আর (টেবিলে রাখা আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাসের দিকে তাকিয়ে হেসে) ‘অযথা সৃষ্টি’!
প্রশ্ন: ‘নান্দীকারের স্যর’— এই পরিচয়েই জীবন কাটিয়ে দিলেন। অন্য কিছু হওয়ার প্রত্যাশা ছিল না?
রুদ্রপ্রসাদ: আসলে, আমার বেড়ে ওঠাটাই তালেগোলে। আমরা আট ভাইবোন। বাবা চলে যান আমার ছ’ মাস বয়সে। মাকে আমি অসুস্থ থাকতেই দেখেছি। তার মধ্যে দু’-এক ভাইয়ের স্বার্থপরতা দেখেছি। সব মিলিয়ে আমার বাল্যকালে আমি ‘লোনার’ ছিলাম। বন্ধুবান্ধবও বিশেষ ছিল না। স্কুলে ভর্তি করার ব্যাপারেও সকলে একমত হননি। কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘‘ও একটু ট্যালা, স্কুলে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে।’’ ভর্তি হয়েছিলাম, কিন্তু অনেক বার ছেড়েও দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: কোন স্কুলে পড়েছেন?
রুদ্রপ্রসাদ: বিভিন্ন স্কুলে। শ্যামবাজার হিন্দু অ্যাকাডেমিতে কয়েক দিন। তার পর টাউন স্কুলে কয়েক মাস। তবে, স্কুলে যেতাম না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম।
প্রশ্ন: কিন্তু পরীক্ষার সময়?
রুদ্রপ্রসাদ: সে হয়ে যেত। তবে পড়াশোনাতে মুশকিলও হত। একবার অঙ্কে পঁচাত্তর পাব বলেছিলাম বাড়িতে। পেয়েছিলাম বারো। এক সহপাঠী খাতাটা বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল। তা নিয়ে কী হাসাহাসি। স্কুলের অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকেই চলে গিয়েছিল বলে পরে কলেজেও ওই রুটিনে ঢুকতে অসুবিধা হয়েছিল।
প্রশ্ন: থিয়েটার কবে থেকে এল জীবনে?
রুদ্রপ্রসাদ: এটা খানিকটা বাড়ির পরিবেশের জন্য। আসলে আমার মনে হত, পৃথিবীর যা কিছু, তাতেই আমার উত্তরাধিকার। ফলে, খেলতাম, আরও অনেক কিছু করতাম। মাঝারি গোছের বুদ্ধিমত্তা থাকার ফলে যা-ই করি, সেটাই খানিকটা পারতাম। সেটাকে বাড়ানোর চেষ্টা ছিল না। ফুটবল, ক্রিকেট সব খেলেছি। ফুটবলে ফার্স্ট ডিভিশন খেলেছি। স্কটিশ চার্চ কলেজে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম। বিড়লা ক্লাবের হয়ে অফিস লিগে খেলেছি। আমার বুট ছিল না। দাত্তুফাদকর ওঁর বুটটা আমায় দিয়ে দিয়েছিলেন। সবকিছুতেই আমি অংশ নেব— এই ভাবনা কোনও সাফল্য বা খ্যাতি অর্জনের চিন্তা থেকে আসেনি। মনে হত, সবই আমার। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর মতো আর কী! সেখান থেকেই কলেজের থিয়েটারে চেষ্টা করলাম। গোলমালও হয়েছিল। গোড়ার দিকে থিয়েটার করতে গিয়ে কিছুই পারিনি, এমন হয়েছে।
প্রশ্ন: তার পর?
রুদ্রপ্রসাদ: এই বুড়ো বয়সেও হয়েছে। সংলাপ ভুলে গিয়ে স্বাতীর দিকে তাকিয়ে থেকেছি। স্বাতী ভাবত, কী করব একে নিয়ে। আসলে রিহার্সাল দিতে আমার ভাল লাগত না। অন্যদের রিহার্সাল করাচ্ছি, সে ঠিক আছে। ফলে, নিজেরটা রপ্ত হত না। একটা শো-তে তো সব গন্ডগোল হয়ে গেল, বাবুয়া(সোহিনী) টেনে মঞ্চের বাইরে নিয়ে গেল।
প্রশ্ন: কিন্তু থিয়েটার তো করে গিয়েছেন নিয়মিত?
রুদ্রপ্রসাদ: নাহ্, ধারাবাহিক ভাবে থিয়েটার করিনি কলেজে। বরং ঢুকে পড়েছিলাম রাজনীতিতে। কলকাতা জেলা ছাত্র ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আর ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারিও হয়েছিলাম।
তখন মনে হত একজন কমিউনিস্ট চিন্তকের কথা। একজন ভাল কমিউনিস্টকে সুপারম্যানের মতো হতে হবে, যে কোনও পরিস্থিতিতেতে সে নিজেকে মানিয়ে নেবে। তখন মনে হত, সবই করতে হবে। থিয়েটারও সে ভাবে করতাম। মনে আছে, ‘থানা থেকে আসছি’ নাটকে ইন্সপেক্টরের চরিত্রটা করেছিলাম। এমএ পরীক্ষার পরে একটা শূন্যতা গ্রাস করেছিল। বিদেশ চলে যাব ভাবছিলাম। প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যাওয়া। আবার ভেবেছিলাম, বিদেশে গিয়েই বা কী করব?
প্রশ্ন: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক একটা ইতিহাস। কোথায় ওঁর সঙ্গে দেখা হয়?
রুদ্রপ্রসাদ: মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর আমার সঙ্গে অজিতেশের আলাপ হয়। অজিতও আমার মতো বাঁধা নিয়মে থাকার ছেলে ছিল না। পার্টির মধ্যমেধার লোকজনেরা সব সময় অন্যদের টেনে নামাতে চায়। দলীয় নিয়মের মধ্যেও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার মতো ছেলে ছিল ও। নিজের কথা বলত। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ওর পিছনে যখন ওর দলের ছেলেরাই লাগত, তখন আমি গিয়ে ধমকাতাম। বলতাম, এটা আমার পাড়া। সে সময়টা ওর খুব দারিদ্র্যে কেটেছে। আমার বাড়িতে অনেক দিন থেকেছে, খেয়েছে। যখন ওই শূন্যতার সময়টা চলছে আমার, দারিদ্র্যের মধ্যেও অজিতেশ ওর নাট্যদলটা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আমি ওকে সাহায্য করতে চেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।
প্রশ্ন: অভিনয় না করেও ‘নান্দীকার’-এ অন্য প্রযোজনার সঙ্গে বহু বার যুক্ত থেকেছেন। কখনও মনে হয়নি এটা আপনার কাজ নয়?
রুদ্রপ্রসাদ: একেবারেই না। আমার অভিনয়ের লোভ ছিল না। ‘মঞ্জরী আমের মঞ্জরী’তে গোড়ার দিকে অনেক দিন অভিনয় করিনি। শুধু বসে দেখতাম। এটা-ওটা করতাম। ‘নাট্যকারের সন্ধানে ছ’টি চরিত্র’-তে চিনু (চিন্ময় রায়) অভিনয় করত, একটা টাই পরার ব্যাপার ছিল। আমি প্রত্যেকটা শো-এর আগে পরিয়ে দিতাম। চিনু খুব অলস ছিল! আসলে, কোথাও আমার মধ্যে একটা বৈরাগ্য আছে। সহজেই ছেড়ে দিতে পারি। আমার কিচ্ছু যায়-আসে না। রাজনীতির ক্ষেত্রেও অন্যকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। বঞ্চিত হলে ভেবেছি, আমার দেওয়ার ছিল, অন্য দিকের মানুষটার নেওয়ার ছিল না।
প্রশ্ন: ‘নান্দীকার’-এর দায়িত্ব কী ভাবে এল?
রুদ্রপ্রসাদ: আমি, অজিতেশ আর অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়— তিন জনেই ছিলাম নান্দীকারের মূল দায়িত্বে। অসিত শিলিগুড়ি চলে গেল। একটা সময় অজিতেশের মনে হতে লাগল, আমি ওর প্রতিদ্বন্দ্বী। আমি ওকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম যে, পরিচালনা ইত্যাদির বিষয়ে আমার কোনও লোভ নেই। আমি যে কোনও কাজ করতে প্রস্তুত। এই সময়ে রঙ্গনা থিয়েটার থেকে নান্দীকারকে নাটক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সকলেই খুব উৎসাহী। আমি বুঝেছিলাম, ওখানে থিয়েটার করলে টিকে থাকা মুশকিল। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মত ছিল না। অজিতেশকে বলেছিলাম সেটা। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের আবেগকে অমর্যাদা করিনি। রঙ্গনা নেওয়া হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হল খরা। ধার করতে হল, গয়না বিক্রি করতে হল। আমি আগেই এটা অনুমান করেছিলাম। রঙ্গনা কর্তৃপক্ষও আমাদের ছাড়াতে চাইছিলেন। নানা অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছিল। রোজ থানাপুলিশ করতে হত শো-এর আগে। শেষ অবধি ওখানে আর করা যায়নি। অজিতেশও দল ছেড়ে দিল। নিজের দল গড়ল।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন, ‘নান্দীকার’ থাকায় বাংলার অন্য নাট্যদলগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি...।
রুদ্রপ্রসাদ: (খুব হেসে) তাই! বলে নাকি? আসলে আমার মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষমতা ছিল। সংগঠনটা গুরুত্বপূর্ণ। ইংল্যান্ডে থিয়েটার দলে অনেক ক্ষেত্রে দু’জন পরিচালক থাকেন। এক জন শিল্পের দিকটা দেখেন, অন্য জন সংগঠন দেখেন। আসলে থিয়েটার ছাড়া অন্যান্য মাধ্যমে এক বার সৃষ্টি হয়ে গেলে সেটাই থেকে যায়। থিয়েটার প্রতি দিন নতুন করে জন্মায়। এটা ‘জ্যান্ত’। থিয়েটার সে অর্থে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও কঠিন মাধ্যম।
প্রশ্ন: স্বাতীলেখার সঙ্গে থিয়েটারেই তো প্রথম দেখা, মনে পড়ে?
রুদ্রপ্রসাদ: (চোখে তরঙ্গ খেলে গেল) তখন ‘ফুটবল’ নাটকটা হচ্ছে। কেয়া চলে গেল ’৭৭-এ। এত বড় একটা দল, ভারতজোড়া নাম, কী ভাবে আমি সেটা সচল ও সক্রিয় রাখব, সেই ভার তখন আমার উপর পড়ল।তখন নতুন নাটক ভাবছিলাম। ‘খড়ির গণ্ডি’ নাটকটা করে রাখা ছিল মূলের অনুবাদে, কিন্তু প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য উপযুক্ত মেয়ে পাচ্ছিলাম না। এই সময়েই আমার কলেজের সহপাঠী সুনন্দার মারফত স্বাতীর খবর পাই। ও থিয়েটার করতে আগ্রহী ছিল। এলাহাবাদের মেয়ে ছিল স্বাতী। পরের দিন নান্দীকারে ও এল। ওকে একটা গান শোনাতে বলেছিলাম। গেয়েছিল ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’। দুর্দান্ত গেয়েছিল। এ ভাবেই শুরু হল। ও-ই আমাদের নাটকে লুৎফুন্নিসা।
প্রশ্ন: ‘লিটল বুদ্ধ’ থেকে শুরু করে ‘গল্প হলেও সত্যি’ বা ‘সাগিনা মাহাতো’— দুর্দান্ত সব ছবিতে আপনাকে দেখার পর আর আপনাকে দেখা যায়নি কেন?
রুদ্রপ্রসাদ: তপনদা থিয়েটার দেখতে আসতেন। সেখান থেকেই আমায় নির্বাচন করেছিলেন। বের্তোলুচ্চির ছবিতে কাজ করাও সে ভাবেই। এক জন ইংরেজ মহিলা খোঁজ করছিলেন এমন একজন ভারতীয় অভিনেতার, যে ইংরেজি ভাষাতেও অভিনয় করতে পারবে। আমি এবং গিরিশ কারনাড— দু’জনের মধ্যে থেকে আমাকেই ওঁরা নির্বাচন করেন।
প্রশ্ন: কখনও মনে হয়নি, সিনেমার জগতেই পাকাপাকি ভাবে থেকে যাবেন?
রুদ্রপ্রসাদ: ছবিতে অভিনেতার অভিনয় হয়ে গেল, সে বাড়ি চলে গেল। আর কোনও সংযোগ নেই তাঁর সেই কাজটার সঙ্গে। পুরোটার সঙ্গে তাঁর আর যোগ নেই। থিয়েটারে আমি অভিনয় না করলেও বা পরিচালনা না করলেও গোটা বিষয়টার সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারি। এটা জরুরি। অবশ্য সিনেমাতেও কেউ কেউ এমনটা করেছেন। বার্গম্যানও মোটের উপর একটা দল নিয়ে কাজ করেছেন। একসঙ্গে থিয়েটারও করেছেন তাঁরা।
প্রশ্ন: স্বাতীলেখার সঙ্গে নতুন নাটক তৈরি করা, দল চালানো— মতবিরোধ হয়নি?
রুদ্রপ্রসাদ: না, তা হয়নি। তবে, আমাকে হারানোর ভয় ছিল ওর। কখনও কখনও হয়তো ভেবেছে, ওর জায়গাটা চলে যাবে। অনেক সময় ও অমূলক সন্দেহ করত। ওই নিরাপত্তাহীনতা থেকে।
প্রশ্ন: কোনও বড় আক্ষেপ জীবনে?
রুদ্রপ্রসাদ: এ বার যেমন নান্দীকারের নাটক এনএসডি-তে নির্বাচিত হয়নি। নানা কারণ থাকতে পারে তার। মনখারাপ হয়েছিল একটু। পরে ভেবেছি, সব কিছুই তো শেষ হয়। একটা সময় দিল্লিতে আমার খুব ভাল যোগাযোগ ছিল। লোকে ঠাট্টা করে বলত, দিল্লির কোনও কাজ হলে রুদ্রকে বলো। এখন এই বয়সে আর নেই সেই যোগাযোগ। ভাবি, চলেই তো যায় এগুলো। সবই তো শেষ হয়। এটাকে প্রসন্নচিত্তে মেনে নেওয়াই তো উচিত। একটা সময় এমন মনে হত, যদি ঠিক সময়ে প্রথাগত ভাবে লেখাপড়া করতাম, রবীন্দ্রনাথ পড়তাম, এলোমেলো করে নয়, ভাল করে— আরও ভাল কাজে লাগাতে পারতাম নিজের ক্ষমতাটুকু। তবে, এখন আর মনে হয় না। যা হয়েছে, হয়েছে।
প্রশ্ন: এখনও কি দলের সঙ্গে ততটা জড়িয়ে আছেন?
রুদ্রপ্রসাদ: না। মাঝখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, তার পর থেকে আর ততটা নেই। নতুন ছেলেপুলেরা আছে।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে যদি নান্দীকারের আবার ভাঙন দেখা দেয়?
রুদ্রপ্রসাদ: তা আর হবে না। তা ছাড়া আমি তো এখন আর মাথা ঘামাই না। তবু, কিছু মায়া থাকে! আমি এখন কখনও কখনও উপদেশ দিই। হয়তো বলি, এ ভাবে করলে ভাল হয়, ভেবে দেখো— এটুকুই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো করে কিছু বলি না।
প্রশ্ন: অন্য রাজ্যে থিয়েটার অনেক বেশি বাণিজ্যিক।‘নান্দীকার’ কখনওই লাভের পথে হাঁটেনি।এতে কি আখেরে ক্ষতি নয়?
রুদ্রপ্রসাদ: নাটক ছেড়ে অনেকে হয়তো সিনেমা-ছোট পর্দায় চলেও যায়। আসলে এখন তো যার একটু নাম হচ্ছে, সে মনে করছে আরও নাম হোক। এর মধ্যে নানা দ্বন্দ্ব আছে। অনেকে বলে, ‘‘কী করব, খেতে তো হবে!’’ আমি কখনও কখনও পাল্টা প্রশ্ন করি, ‘‘তোমার পেটটা কি এর মধ্যে বড় হয়ে গিয়েছে?’’ যা করছি, সেটা সচেতন ভাবে করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাজারি বিনোদনের চাপে হতাশা আসে। উপায়ও কিছু নেই। আমার মতো পাগল তো থিয়েটারে বেশি নেই। এখনও কেউ সিনেমার প্রস্তাব দিলে ফিরিয়েই দিতে চাই। ভিতর থেকে আমার অনীহা আছে।
প্রশ্ন: কোনও কিছুতে তিন সেকেন্ডের বেশি মনঃসংযোগ করতে না-পারা একটা প্রজন্মকে কী উপদেশ দিতে চান?
রুদ্রপ্রসাদ: কোনও বড় কাজ করতে গেলে নিজেকে বিসর্জন দিতে হবে। ভিতরটা খালি করতে হবে। না হলে বাইরে থেকে গ্রহণ করতে পারব না কিছু। অপার মমত্ব নিয়ে দেখতে হবে জীবনকে। কোনও কিছুকে বাদ দিলে তো পূর্ণ হয় না। আর এর সঙ্গে বিনয় চাই ।
‘‘মম ভীরু বাসনার অঞ্জলিতে
যতটুকু পাই রয় উচ্ছলিতে।’’
এই মূল্যবোধগুলো ভিতরে থেকে গেলেই কাজে প্রেরণা পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: কী সঞ্চয় করতে চান, যা হয়ে ওঠেনি এখনও?
রুদ্রপ্রসাদ: (বলিষ্ঠ কণ্ঠে নির্ভুল সুরে গেয়ে উঠলেন)
‘‘দিবসের দৈন্যের সঞ্চয় যত
যত্নে ধরে রাখি,
সে যে রজনীর স্বপ্নের আয়োজন।।
যদি হায় জীবন পূরণ নাই হল মম...’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy