সাইকেলে সওয়ার শান্তনু মৈত্র। ডান দিকে, গঙ্গাসাগরে পৌঁছে। ছবি: লেখক
কোভিডে মৃত মানুষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ হল তাঁর সাইকেল যাত্রা— গোমুখ থেকে গঙ্গাসাগর।
সুরকার শান্তনু মৈত্র সোমবারই পৌঁছেছেন গঙ্গাসাগরে। যখন শুরু করেছিলেন যাত্রা, তখনও ভাবেননি সত্যিই সাইকেল নিয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন এতটা পথ। অ্যাডভেঞ্চার তো ছিলই, পাশাপাশি পুরো যাত্রাপথে তাঁর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে অতিমারিতে মৃত বহু মানুষের স্মৃতি। গঙ্গাসাগরে তাঁর সঙ্গে মা এবং স্ত্রীও এসেছেন।
শান্তনু তাঁর বাবাকে হারিয়েছেন আড়াই মাস আগে। কোভিডে মৃত বাবার দেহ শেষবারের মতো দেখা পর্যন্ত হয়নি। সেই বেদনা কুরে কুরে খায় শিল্পীকে। জানালেন, যখন একশো দিনের হিমালয় অভিযানে বেরিয়েছিলেন, তখন বাবার উৎসাহ ছিল দেখার মতো। নিয়মিত খোঁজ নিতেন ছেলের। কিন্তু এ বার অভিযান শুরুর আগেই হয় পিতৃবিয়োগ। বাবার পারলৌকিক অনুষ্ঠানেরও সুযোগ পাননি। এই যাত্রা তাই বাবাকে স্মরণ করেই। সেই সঙ্গে কোভিডে মৃতদেরও শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন শিল্পী।
শান্তনু বললেন, ‘‘কোভিড পুরো পরিকল্পনাটা নষ্ট করে দিল। আমার মতো বহু মানুষকে কোভিড একলা করে দিয়েছে। একাকিত্বের চেয়ে বড় অভিশাপ কিছু হতে পারে না। বাবার হঠাৎ চলে যাওয়াটা এখনও মেনে নিতে পারিনি। যখন উনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখনও দেখা করতে পারিনি। মারা যাওয়ার পরেও দেখতে পাইনি ওঁকে।’’
সন্ধে তখন নামে নামে। আবছা হয়ে আসা গঙ্গাসাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে শান্তনু বলে চলেছিলেন, ‘‘মনে হল আমি কী করতে পারি? আমি গঙ্গার সঙ্গে আছি, গঙ্গাসাগর পর্যন্ত যাচ্ছি। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের বেশ কিছুজনের সঙ্গে কথা বলেছি। হারিয়ে যাওয়া স্বজনের ছবি পাঠাতে বলেছিলাম। প্রায় হাজারখানেক ছবি এসেছে। সব আলাদা আলাদা গল্প। এই সব নিয়ে আমার এই সফর। আমি এঁদের স্মৃতি নিয়ে এসেছি।’’
সে স্মৃতি ধরে রাখারও ব্যবস্থা হয়েছে। শান্তনু জানালেন, গঙ্গাসাগরে শ্রীধাম হাইস্কুল তাঁকে একটা জায়গা দিয়েছে। সেখানে বেদি বানানো আছে। কোভিডে মৃতদের ছবি ছাপানো হয়েছে বিশেষ ধরনের কাগজে। তা সেই বেদিতে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। সেখানে লাগানো হবে তুলসি গাছ। স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাতে জল দেবে।
শান্তনু জানালেন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে এই স্মৃতি কী ভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। কানপুরের এক যুবকের সহযোগিতায় তুলো দিয়ে বিশেষ ধরনের কাগজ তৈরি হয়েছে। সেখানেই ছাপা হয়েছে সকলের ছবি। গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দিরের পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদের কাছে এটাও কোভিডের স্মরণিকা হিসেবে দর্শনীয় স্থান হয়ে থাকবে বলে আশা শান্তনুর। প্রত্যেক দিন ৮০-১০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছেন বলে জানালেন সুরকার। গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথে অল্প চোট পান। কিন্তু পৌঁছনোর পরে দেখলেন, সে ব্যথা কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছে, ‘‘মা গঙ্গা যেন বলল, তোকে এখন আমি ছাড়ব না। শেষ পর্যন্ত যেতেই হবে। হঠাৎ দেখলাম, হাতের ব্যথাটা আর নেই।’’
এই সফরকাহিনি নিয়ে একটি মিউজ়িক অ্যালবামও প্রকাশ করার ইচ্ছে রয়েছে, জানালেন শান্তনু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy