পরিচালক মৃণাল সেন
‘আকাশ কুসুম’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘ভুবন সোম’...। তাঁর ছবি নিয়ে বিস্তর আলোচনার পরিসর তৈরি করেছে বাঙালি। বারবার। এ বার অনেকগুলি কাঁটাতার পেরলো পরিচালক মৃণাল সেনের শিল্প। সুদূর আমেরিকায় তাঁর শিল্প নিয়ে চর্চার অবকাশ তৈরি হল। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে মৃণালের ছবি, ভিডিয়ো ক্লিপিং, সাক্ষাৎকার, লেখালেখির যাবতীয় সম্ভার গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করা হল।
রবিবার সুখবর দিলেন মৃণাল-পুত্র কুণাল সেন। ফেসবুকে লিখলেন, ‘গত কাল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা আমার বাবার নথি সংগ্রহের কাজকর্ম শেষ করেছে। এ বারে সে সব নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। যদিও দুঃখের বিষয়, বাবা নিজেই তাঁর কিছু লেখাপত্র নষ্ট করে দিয়েছিলেন বলে অনেক কিছুই আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু যতটুকু রয়েছে, তা পরবর্তী প্রজন্মের কাজে লাগতে পারে। এটা জেনেই ভাল লাগছে।’
এই সংগ্রহের মধ্যে মৃণালের লেখা কিছু প্রবন্ধ এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন রয়েছে। তাঁর শুরুর দিকের কিছু কাজ, যা নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং যে সব কাজ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, সে সম্পর্কেও কিছু নথি রয়েছে। থাকছে মৃণালের কিছু ছবি। স্ত্রী গীতা সেন এবং পুত্র কুণাল সেনকে লেখা চিঠিপত্রও ঠাঁই পেয়েছে এই গ্রন্থাগারে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে,
— এই লিঙ্কে গেলে মিলবে মৃণালের যাবতীয় কাজকর্মের নথি। ১৯৫৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়সীমা। তার মধ্যে নানা ভাবে সাজানো হয়েছে মৃণালের কর্মজীবন। যেমন বিভিন্ন জায়গায় তাঁর বক্তৃতার ক্লিপিং থাকছে, তেমনই থাকছে চার্লি চ্যাপলিন নিয়ে তাঁর লেখাপত্র। কোনও চলচ্চিত্র তৈরির সময়ের ছবি। স্ক্রিপ্ট। বিদেশে তাঁর কাজকর্মের খতিয়ান।
১৯২৩ সালে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম মৃণালের। পঞ্চাশের দশকে প্রথম ছবি পরিচালনা করেন তিনি। শুধু পরিচালনা নয়, চিত্রনাট্য লেখা, নিজের ছবি প্রযোজনাও করতেন। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বারবার মধ্যবিত্ত শ্রেণি, কলকাতা শহরের চেহারা ফুটিয়ে তুলেছেন। বামপন্থী আদর্শে উদ্বুদ্ধ মৃণালের সঙ্গে ছবি তৈরির ভাষা নিয়ে দীর্ঘ পত্রালাপও হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের। সে সবও রয়েছে শিকাগোয়।
সব মিলিয়ে, মৃণালের জীবন এবং কাজ নিয়ে গবেষণা করতে গেলে যে নথি প্রয়োজন, তার বৃহদাংশই ডিজিটাইজ করে আর্কাইভ করেছে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়।
গত বছর আমেরিকাবাসী কুণাল জানিয়েছিলেন, মৃণাল সেনের চিত্রনাট্য, পাণ্ডুলিপি, পুরস্কার কিছুই আর দেশে থাকল না। তাঁর যাবতীয় নথিপত্র, পুরস্কার চলে গেল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের হেফাজতে।
কুণাল ফেসবুকে লেখেন, ‘স্মৃতিচারণ করার প্রতি অভক্তি অথবা নিছক আলস্য থেকে কোনও লেখালেখি যত্ন করে রাখেননি বাবা। আর তাই এখন আমি জিনিসপত্র জড়ো করতে গিয়ে দেখলাম, কেবল ৩টি বাক্স ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তাঁর ঘটনাবহুল জীবনের সাক্ষ্য শুধু ৩টি বাক্স, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। কিন্তু কিছু নেই আর।’
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সংরক্ষণের প্রস্তাবটি আসে কুণালের কাছে। এতে খুবই খুশি হয়েছেন বলে তখনই জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘আমি ওদের বিশেষ সংরক্ষণাগারটি দেখেছি। ওদের দীর্ঘ ঐতিহ্য সম্পর্কে জানি। আমার বিশ্বাস, ওরা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে।’’ সেই কাজটিই শেষ হল। রবিবার সেই সংবাদ ভাগ করে নিলেন কুণাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy