ঠিক এক কায়দায় পরপর হয়ে যাচ্ছে খুন। এমনকি খুনের শিকারদের রয়েছে পরস্পরের সঙ্গে মিল। সকলেই অবিবাহিত এবং সন্তানসম্ভবা। এই দুটো পরিস্থিতি একসঙ্গে তৈরি হলে ২০২০ সালের আধুনিক সমাজ নাক সিঁটকোয় কি না, সেই বিতর্ক অন্য। কিন্তু শিরীষ কুন্দরের ছবি ‘মিসেস সিরিয়াল কিলার’ অন্তত প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কুমারী মেয়ের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া মানেই চরিত্র স্খলন! আর যেখানে সাধারণ ভাবনার গোড়াতেই গলদ, সেখানে ছবির ভরাডুবিই নিয়তি, এ আর নতুন কথা কী!
এ ক্ষেত্রে পরপর শুধু খুনই হয় না, গর্ভস্থ ভ্রুণগুলোকে খুনি কাচের বয়ামে সাজিয়ে রাখে পুরস্কারের মতো। আর বাঙালি গাইনিকলজিস্ট মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের (মনোজ বাজপেয়ী) বাড়ি থেকে একে একে পাওয়া মৃতদেহ ইশারা করে তার দিকেই। তার আবার রয়েছে সুন্দরী বৌ সোনা (জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ়)। বাঙালি মাত্রই মাছ ভালবাসে, রসগোল্লা খায়। তাই বৌকে সোনা ডাকবে, তাতে ক্ষতি কী! তবে নির্মাতাদের ক্ষতি না হলেও সমূহ বিপদে পড়েছেন দর্শক।
মিসেস সিরিয়াল কিলার
(ওয়েব মুভি)
পরিচালনা: শিরীষ কুন্দর
অভিনয়: মনোজ, জ্যাকলিন, মোহিত, জ়ায়ান
৪/১০
লকডাউনের বাজারে দর্শককে ধরেবেঁধে সিরিয়াল কিলিংয়ের নাম করে যে আজব তরল গেলানো হয়েছে, তাতে থ্রিলারের ভয়ের চাইতে বিরক্তির উদ্রেক বেশি হয়। তার জন্য অবশ্য দায়ী জ্যাকলিন নিজেই। সুন্দর চেহারা, ভাল মুখশ্রী এবং তিনি নাচে পারদর্শী হলেও অভিনয়ের কোনও ক্লাসে কখনও উপস্থিত ছিলেন বলে হয় না। ‘অব হাম কেয়া করে?’ প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিয়েছিলেন জ্যাকলিন। সিনেমার শুরুতে ক্লান্ত সোনা ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের উপরে। এ ছবিতে নায়িকা সত্যিই বুঝে উঠতে পারেননি কী করবেন। কারণ অভিনয় করতে গিয়ে আবেগ সম্পর্কে তাঁর ন্যূনতম ধারণাও গুলিয়ে গিয়েছে। তাই জেলে বন্দি স্বামীকে ছাড়াতে মরিয়া স্ত্রী কথায় কথায় ষোড়শীর মতো উচ্ছ্বসিত হয়। এর পাশাপাশি অসহায় নারীকে মেকআপ আর্টিস্ট এবং কস্টিউম ডিজ়াইনার সাজিয়েছেন র্যাম্প থেকে নেমে আসা স্কারলেট রঙে রাঙানো ঠোঁটের এক মোহময়ী নারী হিসেবে। তার চুল একেবারে কায়দায় সেট করা, সাজগোজে পারিপাট্যের ছাপ। ছবির গল্প যেমনই হোক, অভিনয়ের গুণে জ্যাকলিনের কেরিয়ারের অন্যতম বড় মাইলস্টোন হয়ে থাকত পারত। কিন্তু হা হতোস্মি!
আরও পড়ুন: খুদের হাতে
খুনি কে— এই প্রশ্ন যত না ভাবিয়েছে, তার চেয়েও বেশি ভাবিয়েছে অন্য প্রশ্ন। পরিচালক কী বলে মনোজের মতো দুঁদে একজন অভিনেতাকে এ ছবির জন্য রাজি করিয়েছিলেন? এক ঘণ্টা ২৬ মিনিট দীর্ঘ এই ছবিতে প্রায় সওয়া এক ঘণ্টাই তাঁর কিছু করার নেই। বাকিটুকু লড়ার জন্য যখন তিনি ময়দানে নামলেন, তখন দর্শকের ধৈর্যের পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। খুনের তদন্তের অফিসারের চরিত্রে মোহিত রায়না। কোথাও কোথাও তাঁর অভিনয় অভিনয় বাড়তি মনে হলেও, জ্যাকলিনের তুলনায় তাঁকে ভালই লাগে। তবে একটি বিশেষ চরিত্রে নজর কেড়েছেন জ়ায়ান মারি। নায়িকার চোখে চোখ রেখে কী ভাবে কিস্তিমাত করতে হয়, তা জানেন তিনি।
আসা যাক লেখক, প্রযোজক, সম্পাদক, পরিচালক শিরীষ কুন্দরের কথায়। ‘জান-এ-মন’, হিন্দি ‘জোকার’-এর পরিচালকের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করার আগে দু’বার ভাবতে হয়। তবু ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিষয় এবং ভাবনার রমরমায় ভুল করেও যদি দর্শক শিরীষের কাছে প্রত্যাশা করে থাকেন, তাতে বালতি বালতি জল ঢেলেছেন শিরীষ নিজে। এ ছবির মিউজ়িকও তাঁরই। সেই মিউজ়িকও চেনা, বহু আগে হিন্দি ছবিতেই ব্যবহৃত বলে মনে হয়। কিন্তু ছবির সামগ্রিক অত্যাচারের পরে সেই সুরের উৎস খোঁজার শক্তি থাকে না আর।
আর প্লট? যেমন যুক্তিহীন, তেমনই হাস্যকর। অ্যাবরশন করানোর জন্য দেখতে হয় ইউটিউবের টিউটোরিয়াল! ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর নকল করলেও কিছু নিজস্বতা থাকার দরকার ছিল। শুধু তা-ই নয়, জেলে বন্দি থাকা কাউকে সামান্য বেল পাওয়ানোর জন্য প্রমাণ করতে হবে যে, খুনি প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার জন্য একই কায়দায় আর একটা খুন দরকার— এই উপায় বাতলে দেয় স্বয়ং আইনজীবী! বাহবা দিতে হয় সংলাপকেও। কারণ এক পুলিশ অফিসারের মনে প্রশ্ন জাগে, ‘‘একজন সিঙ্গল নারী কেন গাইনিকলজিস্টের কাছে যায়?’’ এই বিচারবুদ্ধি নিয়ে সংলাপ রচনা করলে চিত্রনাট্য মুখ খুবড়ে পড়বেই।
‘অত্যাচার কী, তা এখনও দেখোনি তোমরা। এ বার দেখবে!’ ট্রেলারেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন জ্যাকলিন। তার পরেও সাহস করে কেউ ছবি দেখলে সত্যিই অত্যাচারিত হয়ে ফিরবেন। তার দোষ কি আর শুধু নায়িকার, বলুন?
আরও পড়ুন: অক্ষয়ের সঙ্গে করিশ্মার বিয়ে পাকা, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ান কপূর পরিবারের এক জন! তার পর...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy