Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শুরু ভাল, শেষটা নয়

উত্তর কলকাতার সরু গলি, গায়ে গা লাগা বাড়ি, লাল ফিতে বাঁধা বেণী, বাবাইদা (ঋত্বিক) ও মেহুল (শুভশ্রী)... প্রিয়ঙ্কা পোদ্দার ও অর্ণব ভৌমিকের অণুগল্পের সেলুলয়েড রূপান্তরে এক অদ্ভুত সারল্য রয়েছে।

‘পরিণীতা’ ছবির দৃশ্য।

‘পরিণীতা’ ছবির দৃশ্য।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

পরিণীতা

পরিচালনা: রাজ চক্রবর্তী

অভিনয়: ঋত্বিক, শুভশ্রী,গৌরব, আদৃত

৬/১০

গ্রাম্য বা শহুরে, রাজ চক্রবর্তীর প্রেমের গল্পে যুক্তি কখনও প্রাধান্য পায়নি। আবেগের ভাষায় আবেগ দেখাতে স্বচ্ছন্দ তিনি। ‘পরিণীতা’র প্রথমার্ধে ভালবাসার বসন্ত আলতো করে ছুঁয়ে যায় পেরিয়ে আসা মেয়েবেলাকে। শহরের উত্তর-দক্ষিণ নির্বিশেষে সর্বত্রই সেই অনুভূতির পরশ মিঠে। দ্বিতীয়ার্ধে চেনা মেহুল হারিয়ে যায় অচেনা বেশে। তার সঙ্গেই আলগা হয় চিত্রনাট্যের বুনন, বড় হতে থাকে গল্পের ফাঁক। আর ভাল লাগার বাসন্তী হাওয়া পালিয়ে যায় মনের জানালা দিয়ে।

উত্তর কলকাতার সরু গলি, গায়ে গা লাগা বাড়ি, লাল ফিতে বাঁধা বেণী, বাবাইদা (ঋত্বিক) ও মেহুল (শুভশ্রী)... প্রিয়ঙ্কা পোদ্দার ও অর্ণব ভৌমিকের অণুগল্পের সেলুলয়েড রূপান্তরে এক অদ্ভুত সারল্য রয়েছে। সেই সারল্যের জন্যই মেহুলের সারাক্ষণ ফিতে দিয়ে চুল বাঁধার মতো অবাস্তব ডিটেলিং এড়িয়ে যাওয়া যায়। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর হাঁটুর বেশ খানিক উপরে পরা ফ্রকও মাফ করে দেওয়া যায়। অষ্টাদশী মেহুলের সহজ, সরল হাসি-ছেলেমানুষিতে প্রথমার্ধ ভরে থাকে। সঙ্গে জুড়িদার বাবাইদা। ‘পরিণীতা’র আকর্ষণ ছিল এই জুটি। তবে প্রথমার্ধেই ঋত্বিকের পাট চুকিয়ে দিলেন পরিচালক। নতুন জুটিকে আরও একটু দেখার জন্য উদ্গ্রীব হবেন দর্শক।

ট্র্যাজিক পরিণতি রাজের প্রেমের গল্পে চিরন্তন। তবে ছবির শুরুতেই বাবাইদার মৃত্যুসংবাদ দেখানো বোধহয় টাইমিংয়ে সমস্যা তৈরি করেছে। কারণ, দ্বিতীয়ার্ধে মৃত্যু আলাদা করে দর্শককে নাড়া দেয় না। অথচ মৃত্যুকে ঘিরেই এগোয় গল্প। ছবির শেষেও মনে থেকে যায় মেহুল আর বাবাইদার কাঁচামিঠে কথার ডালি।

রিভেঞ্জ ড্রামার ভিতও বড্ড নড়বড়ে। উচ্চমাধ্যমিকের পরে চার বছরে কী ধরনের পড়াশোনা করে মেহুল প্রথমে ক্লারিক্যাল ও পরে নামজাদা কর্পোরেট অফিসে চাকরি পায়, তা বোধগম্য হল না। ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির মতো বিষয় দেখানোর ক্ষেত্রে আরও রিসার্চ প্রয়োজন ছিল। সায়নের (ঋত্বিক) উপরে ধর্ষণের অভিযোগ আনার ঘটনাটি বড্ড আরোপিত।

শুভশ্রীর অভিনয় এই ছবির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ঠিকই। কিন্তু তাতেও সম্ভাবনাময় প্রথমার্ধের পরিপূরক হয় না ছবির শেষ। বিনা মেকআপে মেহুলের চরিত্রে শুভশ্রীকে দেখতে ভারী সুন্দর লেগেছে। আর মেকওভারের পরে তাঁর লুক দর্শকের চেনা। তবে শুভশ্রীময় ছবিতে গ্ল্যামারাস রূপে নায়িকাকে দেখানোর সুযোগ যে পরিচালক হাতছাড়া করতে চাননি, তা দিব্যি স্পষ্ট। তার জন্যই কি গল্পের সঙ্গে আপস করতে হল? ছবির ট্রিটমেন্টে সেই প্রশ্ন উঠে এসেছে।

ছোট ছোট চরিত্রে আদৃত রায়, গৌরব চক্রবর্তী ভাল। অর্কপ্রভ মুখোপাধ্যায়ের সুরে ও কণ্ঠে গান ছবির সঙ্গে মানানসই। বাথরুমে চশমাপরা শুভশ্রীর কান্নার দৃশ্যে মন ভারী হয়। টেবিল ফ্যানে উড়তে থাকা বইয়ের পাতা, তার সঙ্গে জীবনখাতার ওলট পালট হওয়ার অনুষঙ্গও দেখতে বেশ লাগে। ছোট ছোট মুহূর্ত তৈরি করতে রাজ পরিমিতি বোধ দেখিয়েছেন। তবে গল্পের ফাঁককে চিত্রনাট্যের টুইস্ট দিয়ে ঢাকলে শেষ থেকেও অন্য শুরু হতে পারত।

অন্য বিষয়গুলি:

Parineeta Movie Raj Chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy