‘ছিছোরে’।
ছিছোরে
অভিনয়:সুশান্ত সিংহ রাজপুত, শ্রদ্ধা কপূর, প্রতীক বব্বর
পরিচালক: নিতেশ তিওয়ারি
প্রতিদিনের হাজার হেডলাইনের মধ্যে বেশ কিছু খবর থাকে যেগুলি আমাদের ভাবাতে বাধ্য করে। স্কুলের এক পড়ুয়াপরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না করায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। সেই খবর নিয়ে কিছুদিন আলোচনা চলে।তার পর আবার চলে ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতা। অভিভাবকেরা বুঝতেই পারেননা তাঁদের প্রাণচঞ্চল সন্তানের মধ্যে কবে বাসা বেঁধেছে অবসাদ,পরীক্ষায় হেরে যাওয়ার ভয়। এই বিষয় নিয়ে সবিস্তার আলোচনার আগে জেনে নেওয়া যাক সম্প্রতি বলিউডের একটি ছবির কথা, যে ছবির সঙ্গে এই খবরগুলির বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে।
এমনই এক গল্প নিয়ে হাজির হয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি।ছবির নাম ‘ছিছোরে’। বলিউডে বেশ কিছুদিন ধরে এমন সব ছবি বক্স অফিসে রাজত্ব করছে, যেছবির গল্প সাধারণ মানুষের কাহিনি শোনায়। এমনই এক সাধারণ অথচ খুবই প্রাসঙ্গিক একটি গল্প বলছে ‘ছিছোরে’। ছবি শুরু হয় এমন এক ছাত্রকে দেখিয়ে যে তার জীবনের একমাত্র টার্গেট করে ফেলেছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।নাহলে তাকে ‘হেরো’ বলবে সবাই, কারণ তাঁর অভিভাবকেরা দু’জনেই স্কলার। রেজাল্টের দিন নিজের ব্যর্থতাকে কীভাবে নেবে বুঝতে না পেরে নিজের জীবনকে শেষ করার চেষ্টা করে।হাসপাতালের ডাক্তার জানান, তাঁদের ছেলে তখনই বাঁচবে যখন তার মধ্যে বাঁচার ইচ্ছেটা থাকবে।
এবারই শুরু হয় ছবির গল্প যেখানে ছেলেটির অভিভাবক (সুশান্ত সিংহ রাজপুত ও শ্রদ্ধা কপূর)নিজের জীবনের সেই সময়কে মনে করতে থাকেন যেখানে নিজেদের কলেজ জীবনে নিজেরাই ‘লুজার’ নামে পরিচিত ছিলেন। নিজের কলেজজীবনের সেই সব ছিছোরে বন্ধুদের আসতে বলেন তাঁদের ছেলের কাছে। কারণ, এই কাহিনি বলা শুরু হলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াইয়ের তাগিদ খুঁজে পায় ছাত্রটি। শুরু হয় বাবা-মায়ের বন্ধুদের নিজের জীবনের কাহিনি।হেরো হয়েও কীভাবে জীবনের রেসে ফাইটার হয়েছে তাঁরা। এই গল্প দর্শককে হাসাবে, কাঁদাবে,নতুন প্রজন্মকে বাঁচার তাগিদ যেমন দেখাবে, তেমনই প্রবীণদের নস্টালজিক করে তুলবে।
এই ছবির স্পেশাল ক্রিনিং হয়েছে দেশের ১১টি শহরে। সাংবাদিকদের সঙ্গে এই ছবি দেখানো হয়েছে বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরও। এই অভিনব প্রচার দেখে পরিচালক নীতিশ তিওয়ারিকেদু’টি প্রশ্ন করতেই হল এই প্রচার ও এই ছবির নাম নিয়ে। তাঁর কথায়:“আমি মনে করি এই ছবিটি দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ,এই ছবি তাঁদের এন্টারটেইন তো করবেই সঙ্গে সঙ্গে জীবন সম্পর্কে তাঁদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও দেবে।তাই নতুন প্রজন্মকেই দেখাতে চেয়েছি ছবিটি।’’ ছবির নামকরণ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “প্রত্যেকেই যাঁরা হস্টেল জীবন কাটিয়েছেন তাঁরা অল্পবিস্তর দুষ্টুমি করেছেন।কেউ প্রথম দিকে তো কেউ কলেজের শেষের দিকে।এই দুষ্টুমিটা নিজেদের মনের মধ্যে থেকে গিয়েছে জীবনের বিভিন্ন সময়ে। তাইআমার মনে হয়েছেএই ছিছোরে নামটাই প্রকৃত প্রকাশ করবে কলেজ জীবনের বন্ধুত্বকে।’’
ছবির ট্রেলার দেখে যাঁরা এই ছবি দেখতে যাবেন তাঁদের মনে হতেই পারে, শুধুমাত্র কলেজ জীবনের কিছু দুষ্টুমি,প্রেম, বন্ধুত্বের সঙ্গে নস্টালজিয়া থাকবে এখানে। তবে ছবি শেষ হতে হতে এক নির্মম সত্যের সঙ্গে পরিচিত হবে দর্শক।নিজের অজান্তেই অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানকে মানসিক চাপ দিয়ে ফেলেন। এই ছবিতে যে বার্তা দিতে চেয়েছেন পরিচালক, সেই বিষয় নিয়েই কিছু কথা জানালেন মনোবি়জ্ঞানী অনু্ত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়: “বাবা-মা যথেষ্ট চাপে থাকেন, তাঁরা নিজেরাও কোথাও যেন ব্যর্থতার সন্মুখীন হতে চাননা। তাঁদের উচিত বাচ্চাদের ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে শেখানো, জীবনে না শুনতে শেখাতে হবে, কারণ জীবনে সবকিছুই মনের মতো হয়না। সেই ব্যর্থতাকে জয় করে এগোতে শেখাতে হবে, নিজেদেরকেও কেরিয়ার কাউন্সেলিং করাতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও নতুন কী কেরিয়ার অপশন তৈরি হচ্ছে খোঁজ নিতে হবে। সবথেকে বড় কথা, শুধুমাত্র মার্কশিট দিয়েই সন্তানকে বিচার না করে তাঁর প্রতিভাগুলোকে খুঁজে সেই দিক গুলিকেই উত্সাহ দিতে হবে। তবেই হয়তো ছাত্রের আত্মহত্যারমতো বিষয় এড়ানো সম্ভব।’’
‘ছিছোরে’ ছবিটি নতুন প্রজন্মের দর্শককে জীবন সম্পর্কে নতুন দিশাদেবে।অনাবিল আনন্দের সঙ্গে সমাজের এক ভয়াবহ সত্যকে হাসির ছলেই পরিচালক দর্শকদের মধ্যে গেঁথে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy