করিনা কপূর খান, অক্ষয় কুমার, কিয়ারা আডবাণী, দিলজিৎ দোসাঞ্জ,
অভিনয়: করিনা কপূর খান, অক্ষয় কুমার, কিয়ারা আডবাণী, দিলজিৎ দোসাঞ্জ, আদিল হুসেন, টিস্কা চোপড়া
পরিচালনা: রাজ মেহতা
বউ বদল, বর বদল, এমনকি, বাচ্চা পাল্টে যাওয়ার কাহিনিও বহুবার দেখেছে বলিউড। তার পর গোলমেলে কাণ্ডকারখানায় হাসির ফোয়ারা ছোটানোও নতুন কিছু নয়। এ ক্ষেত্রেও সেই অদলবদলেরই চেনা ছক। তবে ফার্টিলিটি ক্লিনিকের ভুলে বাচ্চার জন্মের আগেই বাবা পাল্টাপাল্টি হয়ে যাওয়ার প্লটটাই যা হিন্দি ছবিতে নতুন! আর সেটুকুই সুখবর পরিচালক রাজ মেহতার ডেবিউ ছবি ‘গুড নিউজ’-এ। বাকিটা ফুরফুরে কমেডি থেকে ক্রমশ নড়বড়ে হয়ে বলিউডি স্টিরিওটাইপের পথ বেয়ে চ্যাটচেটে ইমোশনে এসে যাত্রা শেষের গল্প।
মুম্বইয়ের উচ্চবিত্ত, ‘ক্লাসি’ দম্পতি বরুণ (অক্ষয় কুমার) ও দীপ্তি বাত্রা (করিনা কপূর খান)বিয়ের পর সাত-সাতটা বছর কাটিয়ে ফেলেছেন কেরিয়ারের পিছনে ছুটে। এখন পারিবারিক চাহিদার চাপে এবং বায়োলজিক্যাল ক্লকে অ্যালার্ম বেজে যাওয়ার গুঁতোয় সন্তানলাভে পাগলপারা দীপ্তি ওরফে দীপু তার নির্বিকার এবং কার্যত বেচারা বরের জীবন ওষ্ঠাগত করে ফেলেন। কিন্তু কিছুতেই কার্যসিদ্ধি হয় না। অগত্যা শেষমেশ গন্তব্য আইভিএফ ক্লিনিক। এবং সেখানেই যাবতীয় সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু। সৌজন্যে আর এক বাত্রা দম্পতি। হানি (দিলজিৎ দোসাঞ্জ) এবং মনিকা (কিয়ারা আডবাণী) শহর থেকে ‘ক্লাস’, মেজাজ থেকে জীবনবোধ যাঁদের বড্ড আলাদা। বলা ভাল, এক্কেবারে উল্টো রকমের।
নামী ফার্টিলিটি ক্লিনিকে আইভিএফ স্পেশালিস্ট দম্পতি ডক্টর এবং ডক্টর মিসেস জোশী (আদিল খান ও টিস্কা চোপড়া) সন্তানহীন দম্পতিদের জীবনে সুখবর আনতে সদা তৎপর। আর সেখানেই কাজের চাপে দুই বাত্রা দম্পতির জীবনে স্পার্ম অদলবদলের মতো গোলমেলে কাণ্ড ঘটে যায়। অতঃপর সকলেই কিংকর্তব্যবিমূঢ়! এত দিন ধরে বাচ্চা চেয়ে আসা দুই দম্পতিই আশায় থাকেন আইভিএফ ব্যর্থ হয়ে ভুল শুধরোনোর। কিন্তু সন্তানসম্ভবা হয়ে সমস্যা বাড়িয়ে ফেলেন দীপ্তি-মনিকা দু’জনেই। দীপ্তির গর্ভে হানির সন্তান, মনিকার গর্ভে বরুণের। মাতৃত্বের অনুভূতিতে যদি বা নরম হয়ে পড়েন দীপ্তি ও মনিকা, পাল্টে যাওয়া দুই বাবা বরুণ ও হানি ঢুকে পড়েন অনাগ্রহ ও হতাশার ঘেরাটোপে। এবং মাঝখানে উঁচু পাঁচিল তুলে দেয় দুই পরিবারের জীবন ও মানসিকতার চরম বৈপরীত্য। তবু মুম্বইয়ের হাই সোসাইটি, ডিজাইনার দম্পতির সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে যায় চণ্ডীগড়ের খাঁটি পাঞ্জাবি অন্য দম্পতির ভীষণ রকম উঁচু তারে বাঁধা সরব জীবনযাপন। সাত মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা দীপ্তির অফিস করার মতো আধুনিক ভাবনার সঙ্গে বারবারই ধাক্কা খায় নিজের রক্তের সন্তানের বেশি দাম দেওয়া রক্ষণশীলতা। তবু হাজার টানাপড়েন, ঝগড়াঝাটি, দোটানা পেরিয়েও শেষমেশ মিলেমিশে যান দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বাবা। কারণ মায়ের স্নেহের মতোই বাবা হওয়ার স্বাদ যে বড্ড মায়ার!
আরও পড়ুন-দাদুর মৃত্যুর পরদিনই পার্লারে গিয়ে কটাক্ষের শিকার মেয়ে নাইসা, এ বার মুখ খুললেন অজয়
ছবির একটি দৃশ্য
আর ঠিক সেখানেই ছবির প্রথম ভাগ জুড়ে থাকা আর্বান কমেডির ফুরফুরে মেজাজ তুমুল ইমোশনের বুকজলে ডুব দিয়ে ফেলে! প্রথমার্ধ জুড়ে অক্ষয়-করিনার সন্তান চাওয়া-না চাওয়ার ঠোকাঠুকিতে এগনো হাসি-সার্ক্যাজম কোথাও বুদ্ধিদীপ্ত, কোথাও খানিক অর্থহীন, খাপছাড়া কমেডি ছবি গড়াতেই ক্রমশ নড়বড়ে। দিলজিৎ-কিয়ারার উঁচু তারে বাঁধা পাঞ্জাবিয়ানা, স্পার্মকে ‘স্প্যাম’, ফ্লাশকে ‘ফ্ল্যাশ’ বলা ‘ক্লাস ডিফারেন্স’, ‘আপনা খুন আপনা হোতা হ্যায়’ বা মাতৃত্বেই নারীর পরিপূর্ণতা জাতীয় রক্ষণশীল ধারণাকিংবা মাতৃত্ববোধের লম্বা মোনোলগে চেনা বলিউডি ছক এর পর বড্ড ক্লিশে লাগে। শেষপাতে আচমকা জেগে ওঠা কান্নাভেজা পিতৃস্নেহের চড়া ইমোশনও তাকে বাগে আনতে পারে না।বরং ক্লিশে ভাব বাড়িয়ে দেয় বেশ কিছুটা। আর এ সবের মাঝে দুম করে ঢুকে পড়া গানগুলোও মাঝেসাঝে খানিক খাপছাড়াই লাগে।
আরও পড়ুন-পরিচালকের গার্লফ্রেন্ডের প্রেমে পড়েই বলিউডে প্রথম ব্রেক পেয়েছিলেন সলমন!
তবু ছবিটা এক বার অন্তত দেখে ফেলা যায় স্রেফ অভিনয়ের গুণে।এক দিকে পশ, কেরিয়ারসচেতন ব্যস্ত সাংবাদিক, অন্য দিকে মা হতে চাওয়ার আকুলতাকে সম তালে, সমান দক্ষতায় বুনেছেন করিনা। স্বাভাবিক মেকআপে, স্টাইলিশ ডিজাইনার পোশাকে, বেশি বয়সে মা হতে চাওয়া নায়িকার চরিত্রে মানিয়েছেওসুন্দর। দেশপ্রেম-সমাজ সংস্কারকের মোড়ক ছেড়ে কমেডিতে ফেরা অক্ষয়ও চেনা টাইমিং-এ নিখুঁত। ছবির দ্বিতীয়ার্ধে অন্যের সন্তানের বাবা হতে না চাওয়ার দ্বন্দ্বে, টানাপড়েনে ধ্বস্ত বরুণের চরিত্রকে রক্তমাংসের লেগেছে তাঁর অভিনয়ের যত্নেই। ছবির শেষটুকুতে কান্নাকাটির ভেজা ভেজা ইমোশন সে ক্ষেত্রে মাফ করে দেওয়াই যায়। দিলজিতের হানি কিংবা কিয়ারার মনিকাও তাদের মোটা তারে বাঁধা চরিত্রে দিব্যি মানানসই। ছোট্ট চরিত্রে শান দেওয়া হাসির খোরাক জুগিয়ে নজরকাড়া আদিল হুসেন। ততোধিক ছোট্ট চরিত্রে বরং তেমন কিছু করার ছিল না টিস্কা চোপড়ারই।
কমেডি থেকে বলিউডি ইমোশনে গড়িয়ে যাওয়া এ ছবির এর বেশি কিছু করার ছিল না। করেওনি। তবু দক্ষ অভিনয়ের গুণ ‘গুড নিউজ’-এর বক্স অফিসে কতটা সুখবর বয়ে আনে, সেটাই এখন দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy