ছবিঃ এক যে ছিল রাজা
পরিচালনাঃ সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়ঃ যিশু সেনগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত, অপর্ণা সেন, জয়া আহসান, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, রুদ্রনীল ঘোষ, রাজনন্দিনী পাল, শ্রীনন্দা শঙ্কর
তিনি কি রাজা? নাকি ঠগ, জোচ্চোর? ছদ্মবেশী?
ছবি দেখতে গিয়ে ছোটবেলা মনে পরে গেল। বাবা আমাকে ভাওয়াল রাজার গল্প শোনাত। রহস্যে মোড়া গল্প। মাঝেমধ্যেই দেখতাম বাবা আর ছোটকাকার মধ্যে তুমুল ঝগড়া। বাবার চিরকালের সিমপ্যাথি সেই জটাওয়ালা সন্ন্যাসীর জন্য। কাকা একবাক্যে উড়িয়ে দিতেন “ যা খুশি বললেই হল! কেউ নিজের মাতৃভাষা ভুলতে পারে!”
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবির বিষয় এমনই। ভাওয়ালের মেজ রাজকুমার অন্তর্ধান রহস্য। বাঙালির ঘরে ঘরে বহু চর্চিত এই কাহিনি হাজার বছর ধরে নিত্যনতুন মিথের জন্ম দিয়ে আসছে। পাশাপাশি জুড়ে আছে ‘সন্ন্যাসী রাজা’ এবং অতি অবশ্যই উত্তম কুমার। অতএব অতি নাটকীয় উপাদান ছিল যথেষ্ট। আশার কথা সেসব এড়িয়ে ‘এক যে ছিল রাজা’ একটি ইতিহাসনিষ্ঠ প্রয়াস। সম্বল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘এ প্রিন্সলি ইম্পস্টার?’।
আরও পড়ুন, ‘অন্ধাধুন’-এ সাইকোলজি নিয়ে ডুয়েল পরিচালকের
কোর্টের সওয়াল-জবাব থেকে উঠে আশা অতীত খুঁড়তে খুঁড়তে এগোয় কাহিনি। গল্প প্রায় সবার জানা। সুত্র ধরিয়ে দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। সংযোজন বলতে দুই পক্ষের উকিল। ভাস্কর ও অনুপমা। অভিনয়ে অঞ্জন দত্ত, অপর্ণা সেন। পরিচালক যখন সৃজিত তখন এই দুজনকে এক ফ্রেমে ধরার লোভ সামলান কী করে! ভাওয়াল রাজার কাহিনির সমান্তরালে দুই উকিলকে সামনে রেখে তিনি আরও একটি সাবপ্লট নির্মান করে চলেন। এক সময় প্রেম ছিল ভাস্কর অনুপমার। ভাস্করের পার্টিয়ার্কি তাদের ছিন্ন করে। কোর্ট রুম তাদেরও আত্মপক্ষ সমর্থনের মঞ্চে এনে দাঁড় করায়। ট্রামের মধ্যে বসে অঞ্জন অপর্ণার কথোপকথনের দৃশ্যটি মেলোড্রামাটিক। কোর্টরুমের পারস্পরিক সওয়াল জবাবের কিছু কিছু দৃশ্যেও মেলোড্রামায় ভরপুর। তবে এই ছবি সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস উসকে দেয়। আসলে ‘এক যে ছিল রাজা’র অন্তর্নিহিত সত্য সন্ন্যাসী যদি ছদ্মবেশীও হন তবু তার জিতে যাওয়া জরুরি। নইলে আরও একটি এস্টেট ইংরেজের দখলে চলে যাবে।
‘এক যে ছিল রাজা’র অন্তর্নিহিত সত্য সন্ন্যাসী যদি ছদ্মবেশীও হন তবু তার জিতে যাওয়া জরুরি।
যিশু সেনগুপ্ত সেরা অভিনয়টাই করে গেলেন গোটা ছবি জুড়ে। তবে জটাজুটোধারী যিশুর মেকআপ আরও ভালও হতে পারত। ম্যান অব দি ম্যাচ অবশ্যই জয়া আহসান। ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী নারী চরিত্র। সংলাপ, অভিনয় মিলিয়ে তিনি তুখোড়। রুদ্র অনির্বানের মধ্যে একটু এগিয়ে হলেও এগিয়ে থাকবেন রুদ্রনীল ঘোষ তার সূক্ষ্ম মাসেল অ্যাক্টিংয়ের জন্য।
সকালের শো-এ কোনও বাংলা ছবিতে আগে এত লোক দেখিনি। অতএব পুজোয় সৃজিত যে রাজার আসনে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই!
(কোন সিনেমা বক্স অফিস মাত করল, কোন ছবি মুখ থুবড়ে পড়ল - বক্স অফিসের সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy