সলমন খান।
অভিনয়: সলমন খান, সোনাক্ষী সিংহ, সাই মঞ্জরেকর, কিচ্চি সুদীপ, আরবাজ খান,ডিম্পল কাপাডিয়া প্রমুখ
পরিচালনা: প্রভুদেবা
সা-ত ব-ছ-র! অপেক্ষা ফুরোল ভক্তদের। তিনি, চুলবুল ‘দাবাং’ পান্ডেএলেন, মোহিত করলেন এবং জয় করলেন। যথারীতি!
দাবাং থ্রি, দাবাং সিরিজের এই তৃতীয় ছবির জন্য এমন সুদীর্ঘ এবং অধীর অপেক্ষা পেরিয়ে, আচমকা জাঁকিয়ে বসা ঠান্ডাকে তিন তুড়িতে উড়িয়ে, সাতসকালের শো হাউজফুল করা জনতাকে মোটেই নিরাশ করেননি চুলবুল পান্ডে। এ ছবির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত জুড়ে থাকা সেই তিনি, সলমন খান বরং রবিনহুড পুলিশ অফিসারের নিজস্ব স্টাইলে দুষ্টের দমনেছক্কা হাঁকিয়ে গিয়েছেন একের পর এক। দাবাং-এর সিগনেচার হয়েওঠা ডায়লগে, পিঠে ঝোলানো সানগ্লাসে, বেল্ট-নৃত্যে। যথারীতি!
লার্জার দ্যান লাইফ জমজমাট অ্যাকশন আছে। ননসেন্স কমেডি এবং ‘টোটাল হিরোগিরি’-সুলভ চোখা চোখা সংলাপে ঠাসা ভরপুর বিনোদন আছে। আছে সৌন্দর্য, লাস্যে মোড়া তুমুল রোমান্স, গান-আইটেম সং-এর জবরদস্ত প্যাকেজ। বলিউডি বাণিজ্যিক ছবির যাবতীয় মশলা উপুড় করে ঢালা। তিন নম্বর ছবি হিসেবে কার্যত সিরিজের আগের দুই ব্লকবাস্টারের সঙ্গেই টক্করে নেমেছে দাবাং থ্রি! সলমন খান ফিল্মস, আরবাজ খান প্রোডাকশন্সের প্রযোজনায় এ ছবির পরিচালক প্রভুদেবাও তাতে স্টারমার্ক-সহ ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ! দাবাং-এর সিক্যুয়েল এ ছবির অনেকখানি অংশ অবশ্য প্রিক্যুয়েল। ধাক্কড় চাঁদ পান্ডের ইনস্পেক্টর চুলবুল পান্ডে হয়ে ওঠার গল্প।
গল্প হেঁটেছে এ সিরিজের চেনা ছক ধরেই। সুন্দরী স্ত্রী রাজ্জো (সোনাক্ষী সিংহ), ছেলে বিট্টু, ভাই মাখনচাঁদ পান্ডে (আরবাজ খান) এবং বাবা প্রজাপতি পান্ডেকে নিয়ে চুলবুল পান্ডের (সলমন খান) সুখী সংসার। বাড়িতে লাস্যময়ী রাজ্জোর সঙ্গে আদরে-সোহাগে, কর্মক্ষেত্রে একের পর এক কেসে তুমুল অ্যাকশনে গুন্ডা পিটিয়েই দিন কাটে। ভাই মাখনও এখন দাদার পথেই রীতিমতো সৎ পুলিশ অফিসার। শুধু মারপিটে নামলেই খানিক পিছিয়ে পড়া।
আরও পড়ুন-জামিয়া কান্ডের প্রতিবাদ, মেয়েকে জড়িয়ে মহেশ ভট্টকে কদর্য মন্তব্য কঙ্গনার দিদির
ভাইয়ের কল্যাণেই এক নারীপাচার চক্রকে শায়েস্তা করতে গিয়ে চুলবুলের দেখা হয়ে যায় চক্রের চাঁই বালি সিংহের (সুদীপ)। ভিডিও কলে প্রথম তার মুখোমুখি হয়ে চুলবুল চিনে ফেলে তার পুরনো শত্রু বালি-কে। এই বালি-ই চুলবুলের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছিলতার প্রথম প্রেম খুশি (সাই মঞ্জরেকর)-কে। তখন ধক্কড় ওরফে চুলবুলের চোখের সামনেই সে খুন করে ফেলে খুশি, তার মামা ও মাসিকে। তার বদলা নিতেই সাধাসিধে প্রেমিক ধক্কড় হয়ে ওঠে দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ অফিসার চুলবুল পান্ডে। পাহাড় থেকে একই ভাবে গাড়ি-সহ ছুড়ে ফেলে দেয় বালিকে।
সোনাক্ষি এবং সলমন
ফ্ল্যাশব্যাকের এই গল্প থেকেই বর্তমানে ফের চুলবুলের জীবনে হাজির বালি। নারীপাচার চক্রের কিং পিন, মন্ত্রীর ডান হাত সেই বালি মূর্তিমান ভয় হয়ে ফিরে তছনছ করে দিতে চায় শত্রুর সাজানো সংসার। এ বার অবশ্য নিস্তার জোটে না আর। ভাই মাক্ষীকে কাজে লাগিয়ে বুদ্ধি-পরাক্রমের খেলায় বালিকে গোহারা হারিয়ে দিয়ে জিতে যায় চুলবুল। এবং এ বার অবশ্যই শত্রুর বিনাশ নিশ্চিত করে। যথারীতি!
এ ছবির শুরু থেকে শেষ পুরোটাই সলমন। লড়েছেন তিনি। হাসিয়েছেন তিনি। দুই সুন্দরীর সঙ্গে ভরপুর প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়েছেন তিনি। এমনকী তণ্বী সাই-এর পাশেও মোটেই বেমানান লাগেনি পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া নায়ককে। খানিক সংসার আর খানিক রোমান্স ছাড়া সোনাক্ষীর তেমন কিছু করার ছিল না। সারল্যে, সৌন্দর্যে, বিয়ের ফুল ফোটা প্রেমিকার চরিত্রে মিষ্টি লেগেছে সাই-কে। আরবাজও তার কমেডি এবং পুলিশগিরিতে মানিয়ে গিয়েছেন দিব্যি। তবে বজ্রকঠিন নিষ্ঠুরতাকে, ক্রূর চাহনি, জমাটি অ্যাকশনে বালিকে রক্তমাংসের চরিত্র করে তুলেছেন দক্ষিণী অভিনেতা সুদীপ। সলমনের পাশে তিনিও তাই সমান জীবন্ত।
আরও পড়ুন-রিয়েলিটি শোয়ের মঞ্চে ‘চান্না মেরেয়া’ গাইতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন নেহা, মনে পড়ে গেল প্রাক্তনকে?
তবে চেনা পথ ছেড়ে বেরোনোর চেষ্টাই করেনি এ ছবির গল্প। রাজনীতির কারবারির ছায়ায় ফুলেফেঁপে ওঠা ভিলেন, প্রেমিক নায়ক, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, কমেডিতে মোড়া অ্যাকশন, আইটেম সং— সব আগের মতোই চেনা স্বাদে। বরং গল্পের গরু গাছে চড়েছে খানিক। খুশির ঘনিষ্ঠতম বান্ধবী এবং চুলবুলের সঙ্গে এত বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়ে ফেলা সত্ত্বেও কেন এই প্রথম রাজ্জো অতীতের কথা জানতে পারল, কিংবা গাড়ি-সমেত পাহাড় থেকে অতল খাদে পড়ে গিয়েও কী করে প্রাণে বেঁচে গেল বালি- তার উত্তর খুঁজে লাভ নেই। অযথা লম্বা মারপিটের দৃশ্য বা এতগুলো গানেরও প্রয়োজন ছিল না তেমন। কারণ হল থেকে বেরিয়ে ‘হুড় হুড় দাবাং দাবাং’-এর সিগনেচার কিংবা ‘মুন্না বদনাম হুয়া’র মারাকাটারি আইটেম ছাড়া কোনও গানই আর মনে পড়ে না সে ভাবে। যে গানে পা মিলিয়েছেন স্বয়ং পরিচালক প্রভুদেবাও। আরও খানিক কাঁচি চালিয়ে এডিটিং-ও আরও একটু স্মার্ট হতে পারত! তবে স্রেফ সলমন ‘দাবাং’ খান-এর লার্জার দ্যান লাইফ উপস্থিতির জমাটি প্যাকেজেই সব মাফ! শীতকাতুরে কলকাতায় সকাল ন’টার শো-তে ঠাসা হলের তুমুল উল্লাস, লাগাতার কানফাটানো সিটিতেই তার প্রমাণ যথেষ্ট।
শেষপাতে একটা চমকও রয়েছে। তবে জানতে গেলে ছবিটা দেখতেও হবে। আর তার পর সে চমকের কী হয়, তা না হয় সময় বলুক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy