‘ড্যাডি’ ছবিতে অরুণ গাওলির চরিত্রে অর্জুন রামপাল। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
ড্যাডি
অভিনয়: অর্জুন রামপাল, ঐশ্বর্য রাজেশ, নিশিকান্ত কামাত, ফারহান আখতার।
পরিচালনা: অসীম অহলুওয়ালিয়া
বলিউডের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগ নতুন কোনও ঘটনা নয়। আর গ্যাংস্টারদের নিয়ে সিনেমা তাও তৈরি হচ্ছে গত সাতের দশক থেকে। নয়ের দশকে ফিল্মি দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলেছিল শশিলাল নায়ারের ‘অঙ্গার’। জ্যাকি শ্রফ এবং নানা পটেকারের অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে নাকি মিল ছিল ‘মুম্বইয়ের ডন’ করিম লালা এবং অমর নায়েকের। ২০০৬- অনুরাগ বসু পরিচালিত ‘গ্যাংস্টার’। ইমরান হাসমি এবং কঙ্গনা রানাউতের চরিত্রে স্পষ্ট ছাপ ছিল আবু-মনিকার। যদিও সিনেমায় সরাসরি তাদের কথা বলেননি পরিচালক। ২০১৭- অসীম আলুয়ালিয়ার ‘ড্যাডি’। কুখ্যাত গ্যাংস্টার অরুণ গুলাব গাউলিকে (অর্জুন রামপাল)সরাসরি পর্দায় দেখালেন তিনি।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘চিলেকোঠা’ ভাবাল, কিন্তু চাহিদা পূরণ করল কি?
ছবিতে সাতের দশকের ‘বাণিজ্য নগরী’ মুম্বইয়ের ছবি এঁকেছেন পরিচালক। যেখানে দেখানো হচ্ছে একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। লক আউটের নোটিস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, মিছিল, হিংসা, মারামারি,রাজনৈতিক তর্জা। সেই সময় এ রকমই এক কাজ হারানো শ্রমিক পরিবারের ছেলে অরুণ পা রাখে মুম্বইয়ের অপরাধ জগতে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে রমা নায়েক (রাজেশ) ও বাবু রশিমের (আনন্দ) হাত ধরে সে হয়ে ওঠে মুম্বইয়ের ত্রাস। ছবিটির প্রথম পর্যায়ে দেখানো হয় অরুণের বেড়ে ওঠা, আশার (ঐশ্বর্য) সঙ্গে প্রেম। তখন আবার হিন্দু-মুসলমান রায়ট শুরু হচ্ছে। রাস্তা ঘাটে বিভাজন। জেলের বন্দিরা পর্যন্ত দাবি জানাচ্ছে- হিন্দু মুসলমান আলাদা থাকতে দিতে হবে। কিন্তু সেই সময়ে দাঁড়িয়ে অরুণের সঙ্গে বিয়ের পর জুবেইদার আশা হয়ে ওঠার জার্নিটা ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আশাও কিন্তু সমান ভাবে সে সময়ে মুম্বইয়ে দাঁড়িয়ে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেন।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: নামেই বাদশাহো, আদতে ফকির
‘ড্যাডি’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
ইদের রাতে আশার সঙ্গে কথোপকথনের পর সে ঠিক করে এই ‘গ্যাং’ থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু চোখের সামনে রমার এনকাউন্টারে মৃত্যু তাকে সেই সময়ে ‘বাইকুল্লা কোম্পানির’ ‘ড্যাডি’ করে তোলে। আটের দশকে বাণিজ্যনগরী তখন দাউদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত্র। কিন্তু মাথা নোয়াতে রাজি ছিল না অরুণও। ডোগরিকে নিজের বুক দিয়ে আগলে রাখা, ভোটে দাঁড়িয়ে বিধায়ক হয়ে রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ, মেয়ের ‘ওয়েল কাম হোম ড্যাডি’ সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ ‘ড্যাডি’ হয়ে ওঠা।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ভেজাল মশলা দিয়ে রান্না ‘আ জেন্টলম্যান’
এই প্রথম কোন বায়োপিকে অভিনয় করলেন অর্জুন রামপাল। শুটিং শুরুর আগে জেলবন্দি অরুণের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেও আসেন তিনি। ভাল লাগে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে নিশিকান্ত কামাতের অভিনয়। অরুণের স্ত্রী হিসেবে প্রথম বলিউডে কাজ করলেন তামিল অভিনেত্রী ঐশ্বর্য রাজেশ। যথাযথ তার অভিনয়। ওই অল্প সময়ে মনে থেকে যায় দাউদের চরিত্রে ফারহান আখতারের অভিনয়। তবে ছবিটির প্রথম পর্ব একটু ছোট হলে ভাল হত। ছবির টানটান পর্ব শুরু হয় ‘জিন্দেগি মেরি ড্যান্স ড্যান্স’ গানটির পর। কোথাও যেন হারিয়ে যাওয়া সেই আশির দশকের মেলোডির স্বাদ পাওয়া যায়। কোথাও যেন নস্ট্যালজিক করে দেয়। ভাল লাগে ছবির সেট। যত্ন নিয়ে তৎকালীন মুম্বইয়ের প্রেক্ষাপট সাজিয়ে তুলেছেন পরিচালক।
ছবিতে বেশ কয়েকটি চমক রেখেছেন পরিচালক। কাজ শেষের সপ্তাহ আর পুজোর শপিং এর মাঝে একটু সময় বের করে নিয়ে দেখে আসুন ড্যাডি। সেপ্টেম্বরের গুচ্ছ সিনেমা রিলিজের মাঝে ‘ড্যাডি’ বেশ ভাল লাগবে সে বিষয়ে একটা আশা দেওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy