Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Bengali Television

‘সংসার চালাতে হবে তো’, কাজের অভাবে ক্যামেরা ছেড়ে ফুটপাথে খাবার বিক্রি পরিচালক অয়নের!

ঝুলিতে ‘কে আপন কে পর’, ‘কী করে বলব তোমায়’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’-এর মতো ধারাবাহিক। কিন্তু বর্তমানে কাজের অভাবে ফুটপাথে অস্থায়ী দোকান খুলেছেন তিনি।

পরিচালক অয়ন সেনগুপ্তকে নিয়ে বললেন স্বস্তিকা দত্ত, স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার, সুব্রত সেন।

পরিচালক অয়ন সেনগুপ্তকে নিয়ে বললেন স্বস্তিকা দত্ত, স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার, সুব্রত সেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪
Share: Save:

অয়ন সেনগুপ্ত। ছোট পর্দার একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিকের পরিচালক। ঝুলিতে ‘কে আপন কে পর’, ‘কী করে বলব তোমায়’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’-এর মতো ধারাবাহিক। কিন্তু বর্তমানে তিনি ফুটপাথে অস্থায়ী দোকান খুলেছেন উপার্জনের জন্য। সোমবার একটি ভিডিয়ো বার্তায় সমাজমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, স্ত্রী, এক সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। ছেলে খুবই ছোট। দীর্ঘ দিন ধরে হাতে কাজ নেই। ফলে, ফুটপাথে খাবারের দোকান দিতে বাধ্য হলেন তিনি! সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। তাঁর আক্ষেপ, “ক্যামেরা ছেড়ে রাস্তায় খাবার বিক্রি করতে হবে! নিজেকে এই মানসিকতায় তৈরি করতে রাতের পর রাত জেগে কাটাচ্ছি। কী করব? ছেলে ছোট। সংসার চালাতে হবে। নিজের খরচটাও তো জোগাড় করতে হবে!”

তপন থিয়েটারের সামনে ফুটপাথের উপরে ‘গার্ডেন আমব্রেলা’। তার নীচে টেবিল। উপরে ইনডাকশন ওভেন। কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলে গরম গরম চিকেন পকোড়া ভাজছেন অয়নের অভিনেত্রী স্ত্রী। পরিচালকের কথা অনুযায়ী, তাঁকে ইদানীং দেখা যাচ্ছে প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তীর ধারাবাহিক ‘গীতা এলএলবি’তে। খাবারের মেনুতে রয়েছে, ঘুঘনি, ভেজিটেবল চপ এবং আরও অনেক কিছু। পথচলতি মানুষ নতুন দোকান দেখে দাঁড়াচ্ছেন। খাবারের তালিকা দেখছেন। কেউ কিনছেন, কেউ চলে যাচ্ছেন। অয়নের কথায়, “পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করি। আমরা কেউই নিজেদের পেশা ছাড়ছি না। বলতে পারেন, সংসার চালানোর জন্যই এই বিকল্প আয়ের রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হয়েছি।”

অয়নের ভিডিয়ো দেখে মন্তব্য বিভাগে বক্তব্যের বন্যা। বাংলা বিনোদন দুনিয়ার বহু পরিচিত মুখ রয়েছেন সেখানে। বহু শিল্পী অয়নের অবস্থা দেখে আফসোস করেছেন। বেশ কিছু জন তাঁর হার না মানা মনোভাবের তারিফ করেছেন। সেই দলে অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত। এ বিষয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে কী বললেন তিনি? স্বস্তিকার কথায়, “আমি এ বিষয়ে মতামত জানানোর মতো যোগ্যতা এখনও অর্জন করিনি। কিন্তু অয়নদার সঙ্গে কাজ করেছি। ভীষণ পরিশ্রমী। কাজের বিষয়ে মনোযোগী। ওঁর মনের জোর দেখে ওঁকে কুর্নিশ জানাচ্ছি।”

অনেকেই কাজ না পেলে যোগাযোগ করেন প্রযোজক বা চ্যানেল কর্ত়ৃপক্ষের সঙ্গে। নিজের প্রয়োজনের কথা জানান। দীর্ঘ দিন অচলাবস্থা থাকলে দরবার করেন টলিউডের গিল্ড বা ফেডারেশনের সঙ্গে। অয়নও কি তাই-ই করেছেন? পরিচালকের কথায়, “যেখানে যাঁদের সঙ্গে কথা বলা দরকার প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেছি, যোগাযোগও করেছি। কেউ শুরুতেই জানিয়েছেন, হবে না। কেউ চেষ্টা করার পর জানিয়েছেন, কোনও কারণে মনোনীত হচ্ছি না।” কেন মনোনীত হচ্ছেন না? জানেন না অয়ন। তাই তাঁর মত, “আমার কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু দুটো ব্যাপার গত দু’বছর ধরে দেখছি। এক, যাঁরা নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন তাঁরাই নিয়মিত কাজ করছেন। যাঁরা পান না বা পাচ্ছেন না তাঁরা কিন্তু পান-ই না! দুই, আমার কোথায় ত্রুটি? কেউ বলতে পারছেন না। কিন্তু কাজও দিচ্ছেন না। জানাচ্ছেন, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ হোক বা প্রযোজক— কেউই নাকি আমাকে নিয়ে আগ্রহী নন।” পরিচালকের দাবি, কেউ তাঁর ত্রুটি ধরাতে পারলে তিনি নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করতেন। তবে ফেডারেশনের দ্বারস্থ হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তাঁর। জানিয়েছেন, তাঁর সমস্যা নিয়ে রাজনীতি হোক, একেবারেই চান না তিনি।

অয়নের প্রথম অনুযোগ, একা তাঁর নয়। নিয়মিত সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেই অভিনেতা, টেকনিশিয়ান, পরিচালকদের পাতায় এই ধরনের বক্তব্য দেখা যায়। সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পরিচালক গিল্ডের সভাপতি পরিচালক সুব্রত সেন। তাঁর কথায়, “আগে এত খবর পেতাম না। এখন জানতে পারছি, কাজের অভাবে অনেক টেকনিশিয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করছেন কিংবা খাবারের দোকান দিয়েছেন।” অয়ন গিল্ডের সদস্য। এর আগে সম্পাদকের পদেও ছিলেন। সম্প্রতি, হেয়ার ড্রেসার তনুশ্রী দাসের জন্য পদক্ষেপ করেছে ডিরেক্টর্স গিল্ড। অয়নের জন্য কী করবে? সুব্রত বলেছেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে যে হারে কাজ কমেছে তাতে কাজ হারানো মানুষের পাল্লাটাই ভারী। একই সঙ্গে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বা প্রযোজকেরা নিয়মিত কাজ যাঁরা করেন তাঁদের উপরেই ভরসা রাখতে ভালবাসেন। অয়ন অনিয়মিত হয়ে পড়ায় তাই সমস্যায় পড়েছেন।”

যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গেও। তিনি ফোনে অধরা। যোগাযোগ করা হয়েছিল ‘আমাদের এই পথ যদি না শেষ হয়’ ধারাবাহিকের প্রযোজক-পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের সঙ্গেও। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনের থেকে খবরটি প্রথম জানতে পারেন। সে কথা জানিয়ে বলেন, “অয়নদাকে মাঝে কাজের জন্য ডেকেছিলাম। সেই সময় তিনি অন্য প্রযোজনা সংস্থার কাজ করছিলেন। ফলে, আমার কাজ করতে পারেননি। পরে আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু আমার হাতে তখন আর কাজ ছিল না।” পুরো বিষয়টি জেনে প্রযোজক-পরিচালক আশ্বাস দিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অয়ন সেনগুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy