(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
একই মঞ্চে বাংলার ‘দিদি’। সঙ্গে বাংলার ‘দাদা’র ঘরনি। বেসরকারি চ্যানেলের রিয়্যালিটি শো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এ অংশ নিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গেই সেই শোয়ে অংশ নেবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘরনি তথা নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। শোয়ের শুটিং হবে আগামী বুধবার।
ওই শোয়ের সঞ্চালিকা তথা অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে সেখানে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সম্প্রচারকারী চ্যানেল সূত্রের খবর, মমতা সম্মতি দিয়েছিলেন। তার পরেই শুটিংয়ের দিনক্ষণ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এপিসোডটি শুট করা হবে বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি। ঘটনাচক্রে, প্রথমে ওই দিন মমতার পঞ্জাবে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কৃষক বিক্ষোভের কারণে মমতা সেই সফর আপাতত স্থগিত রেখেছেন। ফলে শেষমুহূর্তে কোনও জরুরি কাজ না-থাকলে মমতা ওই দিন শুটিংয়ে থাকবেন। থাকার কথা ডোনারও। ডোনা এর আগে সৌরভ পরিচালিত শো ‘দাদাগিরি’তে অংশ নিয়েছেন। তবে ‘দাদা’র সঙ্গে একই শোয়ে থাকলেও ‘দিদি’র সঙ্গে এই প্রথম তিনি কোনও টেলিভিশন রিয়্যালিটি শোয়ে অংশ নিতে চলেছেন।
সাধারণত ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এ চার জন প্রতিযোগী থাকেন। মমতা এবং ডোনা ছাড়াও তৃতীয় প্রতিযোগিনী হিসেবে ভাবা হয়েছে প্রবীণ গায়িকা অরুন্ধতী হোমচৌধুরীর কথা। তবে চতুর্থ প্রতিযোগিনী কে হবেন, তা রবিবার পর্যন্ত জানা যায়নি। চেষ্টা চলছে কোনও মহিলা খ্যাতনামীকে আনার। ওই এপিসোডে প্রতিযোগীদের জন্য গান গাইতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কীর্তন গায়িকা তথা তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সি, গায়ক রূপঙ্কর বাগচি এবং শিবাজি চট্টোপাধ্যায়কে। চতুর্থ প্রতিযোগিনীর জন্য চতুর্থ গায়ক কে হবেন, তা জানা যায়নি।
সম্প্রচারকারী চ্যানেলের তরফে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-কে বাংলা জুড়ে থাকা দিদিদের জয়গান গাওয়ার মঞ্চ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তাঁদের জীবনযাপন, কাজ, লড়াই এবং সেই সঙ্গে বাংলার শিল্পসংস্কৃতি, রীতিনীতি, পরম্পরা তুলে ধরার মঞ্চ হিসেবেও ওই শো-কে ব্যাখ্যা করা হয়। আনুষ্ঠাকি ভাবে বলা হয়, ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ হল সকলে মিলে উৎসবের আনন্দে শামিল হওয়ার মঞ্চ, একে অন্যের পাশে থাকার মঞ্চ, একে অন্যকে অনুপ্রাণিত করার মঞ্চ।
মমতাকে নিয়ে ওই বিশেষ এপিসোডটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে, সেখানে থাকবেন বাংলার মানুষের পছন্দের, শিল্পসংস্কৃতি জগতের দিদিরা, যাঁরা সম্মান বাড়িয়েছেন বাংলার। অনুপ্রাণিত করেছেন অসংখ্য দিদিকে। বলা বাহুল্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতার উপস্থিতির কথা উদ্যোক্তারা এখনই বলতে চাইছেন না। তাঁরা বাংলার ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-কে ‘চমক’ হিসেবেই দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত করতে চান।
ওই রিয়্যালিটি শোয়ে বেশ কয়েকটি রাউন্ড রয়েছে। সঠিক জবাবের জন্য উপহারও থাকবে। সেখানে বাংলার লোকগান এবং বাংলা আধুনিক গান গাওয়া হবে। সেগুলি নিয়ে মজার প্রশ্নোত্তর থাকবে। বস্তুত, ওই শোয়ের প্রথম রাউন্ডটিই হল ‘আমি বাংলায় গান গাই’। দ্বিতীয় রাউন্ডটি হল ভোজনরসিক বাঙালির বাংলার খাওয়াদাওয়া নিয়ে। বাঙালির খাবার এবং খাওয়াদাওয়া নিয়ে প্রশ্নোত্তরের পাশাপাশি ফুচকা খাওয়ার বিষয় থাকবে। ময়দার লেচি বেলা এবং লুচি ভাজার প্রতিযোগিতাও থাকবে। মমতা নিজে একদা ফুচকা খেতে মন্দ বাসতেন না। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি খাবার নিয়ে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে। শোয়ের মঞ্চে তিনি ফুচকা খাবেন কি না, তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের সন্দেহ আছে। তবে মমতা যে গোল করে লেচি বেলতে পারবেন এবং লুচি ফুলকো করে ভাজতে পারবেন, তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ নেই। কারণ, মমতা রান্নায় পারদর্শী। নিজের বাড়িতে কালীপুজোর ভোগ তিনি নিজেই রান্না করে থাকেন।
তৃতীয় রাউন্ডটি হবে বাংলার খেলা, মেলা, পুজোপার্বণ নিয়ে। চতুর্থ রাউন্ডের নাম ‘দিদিরা দেবে গোল’। সেখানে ফুটবল খেলার বিষয় রয়েছে। তবে মমতার উপস্থিতিতে সেই রাউন্ডের নাম পাল্টে ‘খেলা হবে’ করা হবে কি না, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে কৌতূহল রয়েছে। সেখানেই রয়েছে ‘দুষ্টের দমন’। যেখানে বল ছুড়ে রাক্ষসের দাঁত ভাঙতে হবে। তার পরে একে একে রয়েছে ‘এসো মা লক্ষ্মী’, ‘পুজোর আলপনা দেওয়া’।
চতুর্থ রাউন্ডটি হল ‘বুদ্ধিমতী দিদি’ অথবা ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’। এই রাউন্ডটি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শাড়ি, গয়না, রান্না, মিষ্টি, দেবদেবী, মন্দির, পর্যটনস্থল এবং মনীষীদের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই রাউন্ডে শব্দছক, ধাঁধা, শূন্যস্থানের মাধ্যমে সহজ প্রশ্নোত্তর থাকবে।
তবে মমতা যেখানে যান, সেখানে তিনি নিজেই নিজের নিয়ম তৈরি করে নেন। ফলে শো শেষপর্যন্ত এই কাঠামোয় থাকবে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আগেই মমতার ওই শোয়ের শুটিং হয়ে যাওযার কথা। শুটিং হবে হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর সেটে। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার কারণে নবান্নে বিশেষ বৈঠকও ডাকা হয়েছে। সম্প্রচারকারী চ্যানেল সূত্রের খবর, সঞ্চালিকা রচনা মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে গিয়ে তাঁকে ওই শোয়ে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ওই সাক্ষাতের পর থেকে অভিনেত্রী রচনার আসন্ন লোকসভা ভোটে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ানোর জল্পনাও শুরু হয়েছে। এমনিতেই তৃণমূলের লোকসভা এবং বিধানসভার প্রার্থিতালিকায় চলচ্চিত্র এবং টিভি সিরিয়াল জগতের প্রতিনিধিত্ব থাকে বরাবর। সেই সূত্রেই রচনাকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে তার আগে জনতা কৌতূহলী বাংলার দিদি নম্বর ওয়ানের পর্দার ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এ অংশগ্রহণ নিয়ে। কৌতূহল রয়েছে ‘বাংলার দাদা’র ঘরনিকে নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy