গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে চারটি কেন্দ্র ‘হ্যাটট্রিক’ করেছে। এমন নজির রাজ্যের আর কোনও আসনে নেই। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ— রাজ্যের চারটি লোকসভা কেন্দ্র গত তিনটি লোকসভা ভোটে একই প্রতীকে তিন জন নতুন সাংসদ পেয়েছে। একটি আসনে সেই প্রতীক পদ্মফুল। বাকি তিনটি আসনে ঘাসের উপর জোড়াফুল। অর্থাৎ, বিজেপি একটি আসনে নতুন মুখ জেতানোয় হ্যাটট্রিক করেছে। আর তৃণমূল নতুন মুখ জিতিয়ে হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক করেছে।
আসনগুলি হল দার্জিলিং, বসিরহাট, যাদবপুর এবং দক্ষিণ কলকাতা। ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পর পর তিনটি লোকসভা ভোটের ফলাফল দেখলেই স্পষ্ট, একই প্রতীকে নতুন মুখ জেতানোয় নজির গড়েছে এই চারটি কেন্দ্র।
গত ১৫ বছর ধরে দার্জিলিং আসনটি ধরে রেখেছে বিজেপি। ২০০৯ সালে ওই আসনে জিতেছিলেন অধুনাপ্রয়াত যশোবন্ত সিংহ। আবার ২০১৪ সালে পদ্ম প্রতীকে জিতেছিলেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। আর গত লোকসভা ভোটে দার্জিলিং থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে জিতে সংসদে গিয়েছিলেন রাজু বিস্তা।
অন্য দিকে, বসিরহাট আসন গত দেড় দশক ধরে তৃণমূলের দখলে। ঘটনাচক্রে, সেই বসিরহাটের অন্তর্গত সন্দেশখালি নিয়েই এখন রাজ্য-রাজনীতি আলোড়িত। সিপিআইয়ের ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত বসিরহাট ২০০৯ সালে প্রথম জিতেছিল তৃণমূল। সাংসদ হয়েছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম। ২০১৪ সালে বসিরহাটে প্রার্থী বদল করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাঁড় করানো হয় ইদ্রিস আলিকে। তিনি জেতেন এবং সাংসদ হন। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ইদ্রিসের জীবনাবসান হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বিধায়ক। ২০১৯ সালের ভোটে আবার বসিরহাটে প্রার্থী বদল করে তৃণমূল। ইদ্রিসের বদলে অভিনেত্রী নুসরত জাহান রুহিকে দাঁড় করান মমতা। জিততে অসুবিধা হয়নি নুসরতের।
একই কথা প্রযোজ্য যাদবপুরের ক্ষেত্রেও। ২০০৯ সালে গায়ক কবীর সুমনকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীকে পরাস্ত করে সংসদে যান ‘নাগরিক কবিয়াল’। কিন্তু সাংসদ থাকার সময়েই সুমনের সঙ্গে তৃণমূলের অবনিবনা প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ২০১৪ সালে সুমনকে সরিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের ভ্রাতুষ্পুত্র অধ্যাপক সুগত বসুকে প্রার্থী করে তৃণমূল। তিনিও জেতেন। সুগতও এক মেয়াদ সাংসদ থাকার পর সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেন মমতার কাছে। প্রার্থী বদলে ২০১৯ সালে যাদবপুর থেকে অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে দাঁড় করান মমতা। মিমিও জিতে সাংসদ হন।
চতুর্থ কেন্দ্রটি ‘মমতার দক্ষিণ কলকাতা’। ১৯৯১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এখানকারই সাংসদ ছিলেন তৃণমূলনেত্রী। ২০০৯ সালে জেতার দু’বছরের মধ্যে রাজ্যে পালাবদল হয়। সাংসদ পদ ছেড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। দক্ষিণ কলকাতায় উপনির্বাচনে জিতে সাংসদ হন সুব্রত বক্সী। ২০১৪ সালেও বক্সী জেতেন। কিন্তু ২০১৯ সালের ভোটে আর দাঁড়াতে চাননি তিনি। তাঁর বদলে মালা রায়কে প্রার্থী করেন মমতা। জিতে তিনিও সাংসদ হন। অর্থাৎ, দক্ষিণ কলকাতাও পর পর তিনটি লোকসভা ভোটে তিন নতুন সাংসদ পেয়েছে। মমতা, বক্সী এবং মালা।
কৌতূহলের বিষয় হল, ২০২৪ সালের ভোটেও কি নতুন মুখকে সাংসদ করে নতুন রেকর্ড গড়বে এই চার কেন্দ্র? অনেকের মতে, সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোনও দলেরই প্রার্থিতালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু বিজেপি শিবিরে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন, দার্জিলিংয়ে এ বার আর রাজুকে টিকিট দেওয়া হবে না। বদলে তাঁকে রাজ্যের অন্য কোথাও অথবা উত্তর-পূর্বের কোনও রাজ্য থেকে টিকিট দেওয়া হতে পারে। রাজুর বদলে দার্জিলিংয়ে বিজেপি প্রার্থী করতে পারে প্রাক্তন আমলা হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে।
বসিরহাটে নুসরতের গত পাঁচ বছরের ‘পারফরম্যান্স’ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই বিবিধ আলোচনা এবং জল্পনা রয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও গত পাঁচ বছরে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ফ্ল্যাট প্রতারণা মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র আতশকাচের নীচে রয়েছেন নুসরত। এ বারের ভোটে তৃণমূল তাঁকে আবার টিকিট দেবে কি না, তা নিয়ে দলের মধ্যেই জল্পনা রয়েছে।
যাদবপুরের সাংসদ মিমি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন তিনি রাজনীতি থেকে সরে যেতে চান। বিধানসভায় গিয়ে মমতার কাছে সে কথা জানিয়েও এসেছেন মিমি। জমা দিয়েছেন সাংসদ পদে ইস্তফাও। মমতার অনুমতি পেলে তিনি সেটি লোকসভার স্পিকারের কাছে পাঠাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিমি রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে। তবে মিমি যাদবপুরে দাঁড়াতে চাইছেন না বলেই খবর। সে ক্ষেত্রে তাঁকে রাজ্যের অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয় কি না, তা-ও দেখার। কারণ, মমতা মিমির ইস্তফা গ্রহণ করেননি। সূত্রের খবর, মিমিকে রাজ্যের অন্য কোনও আসন থেকে লড়ার প্রাথমিক প্রস্তাবও দেওয়া রয়েছে। ফলে মিমির বদলে যাদবপুরে তৃণমূলকে অন্য প্রার্থী দিতে হবে। শাসক শিবির সূত্রে খবর, প্রাক্তন এক সাংসদ আবার যাদবপুরে দাঁড়ানোর জন্য কালীঘাটে দৌত্য শুরু করেছেন।
রইল দক্ষিণ কলকাতা। এমনিতে মালা দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক নেত্রী। পুর রাজনীতিতে কলকাতায় যাঁরা পোড়খাওয়া, মালা তাঁদের অন্যতম। সারা দিন রাজনীতিই করেন। কিন্তু তাঁর কিছু শারীরিক অসুস্থতাজনিত সমস্যাও রয়েছে। ফলে মালাকে এ বার প্রার্থী করা হয় কি না, তা নিয়েও দলের অন্দরে একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তেমন হলে রাজ্যের চারটি কেন্দ্রেই ‘রেকর্ড’ অক্ষুণ্ণ থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy