শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে সাজাচ্ছেন পাপিয়া চন্দ। ছবি: ফেসবুক।
বৃহস্পতিবার দুটো ছবি ভাগ করে নিয়েছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি এক মহিলা রূপটানশিল্পীর হাতে সাজছেন। আপাতদৃষ্টিতে ছবির মধ্যে তেমন বিশেষত্ব হয়তো নেই। কিন্তু যাঁরা পুরুষশাসিত বিনোদন দুনিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাঁরা জানেন, এক মহিলা রূপটানশিল্পীর পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করাটা খুব একটা সহজ নয়। তবে সম্প্রতি একজন মহিলা রূপটানশিল্পীই শিবপ্রসাদের রূপটান করেছেন, তিনি পাপিয়া চন্দ। খবর, উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থার পুজোর ছবি ‘বহুরূপী’র নায়ককে তিনি নাকি সাত রকমের ভিন্ন লুক দিয়েছেন! এক একটি লুকের জন্য কম করে নাকি তিন ঘণ্টা সময় লাগত।
একজন অভিনেতা মহিলা রূপটানশিল্পীর হাতে নিজেকে কতটা অনায়াসে সঁপে দিতে পারেন? শিবপ্রসাদও কি পেরেছেন?
পাপিয়ার কাছে প্রশ্ন রাখে আনন্দবাজার অনলাইন। রূপটানশিল্পী শুরুতেই স্বীকার করেছেন, “আমি যখন কাজ শুরু করি তখন সাল ২০০১। তখন পরিবেশ আরও অন্য রকম। সব কিছুই আরও বেশি করে পুরুষদের মুঠোয়। সেই পরিস্থিতিতে তাঁদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করাটা সত্যিই চাপের ছিল।” তিনি এও জানাতে দ্বিধা করেননি, সেই সময় অভিনেতারা এক মহিলার হাতে সাজতে অস্বস্তি বোধ করতেন। এক মহিলার স্পর্শে অস্বস্তি, তাঁকে ভরসা করার মধ্যেও অস্বস্তি। পাপিয়ার অস্বস্তি হত না? ফ্যাশন শুটিংয়ের দুনিয়া থাকা আসা মেয়েটিও অস্বস্তিতে ভুগতেন বৈকি! সে কথা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, “আমারও অস্বস্তি হত। প্রথম প্রথম অভিনেতারা যেমন আমার হাতে সাজতে দ্বিধা বোধ করতেন। আমিও আমার সহকারীদের হাতে ওঁদের সাজানোর দায়িত্ব ছেড়ে দিতাম।”
কিন্তু সব সময় এই সুযোগ পেতেন কোথায়? যেমন, কখনও একসঙ্গে অনেক অভিনেতাকে সাজাতে হবে। সে ক্ষেত্রে তখন অভিনেতাকেও সাজাতে হত পাপিয়াকে। আবার কোনও দিন সহকারীরা হয়তো সংখ্যায় কম। তাঁকেই সাজাতে হবে পুরুষদের। হয়তো দৃশ্যের খাতিরে সারা শরীরে রূপটানের প্রয়োজন। একা হাতেই সেই কাজ সামলেছেন পাপিয়া। শুরুটা এ ভাবে হলেও, আজ তিনি অনেক অভিনেতার পছন্দের রূপটানশিল্পী।
এই কথা কি শিবপ্রসাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? উদাহরণ দিয়ে তিনি জবাব দিয়েছেন, লম্বা চুল কোঁকড়া করতে অনেকটা সময় লেগেছে। তার পর রূপটান। পাপিয়ার দাবি, “ভীষণ লক্ষ্মী ছেলে শিবুদা! কোনও দিন টুঁ শব্দ করেননি। যত ক্ষণ সময় প্রয়োজন, তিনি দিতেন। নড়তেন না, তাড়াও দিতেন না। আমার চোখে নিখুঁত দেখানোর পরে নিজেও খুঁটিয়ে দেখতেন। তার পর খুশি হতেন।” এই পারস্পরিক নির্ভরতার জায়গা থেকেই উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থার ‘ঘরের মেয়ে’ পাপিয়া। শিবপ্রসাদ কোমরে চোট পাওয়ার পরেও বেল্ট না পরে অভিনয় করলে রীতিমতো শাসন করেছেন তাঁকে। সে কথা জানিয়ে বলেছেন, “নৌকোয় শট দিয়েছেন বেল্ট না পরে। তার পর কোমরের ব্যথায় কাবু শিবুদা। শুনেই নিজেকে সামলাতে পারিনি। বকে উঠেছিলাম, ‘বেড়ে পাকা’ বলে!” আবার এই অভিনেতাই ভোর পাঁচটায় শট দেবেন বলে রাতে পাপিয়ার থেকে রূপটান নিয়ে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। যাতে পরের দিন সকালে বেশি সময় না লাগে।
পাপিয়াকে নিয়ে কী মত শিবপ্রসাদের? প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতার মত, “পাপিয়ার গল্পটা একটু অন্য রকম। ও ফ্যাশন শুট করত প্রথমে। পরে ও ছবির দুনিয়ায় আসে। মহিলা রূপটানশিল্পী পুরুষদের রূপটান করবে, মহিলা রূপটানশিল্পী প্রস্থেটিকের কাজ করবে সেই সুযোগই সেই সময় কিন্তু দেওয়া হত না। বহু পুরুষ টেকনিশিয়ান, পুরুষ রূপটানশিল্পী কিন্তু পাপিয়াকে জায়গা দেয়নি। এ সবই শোনা কথা। তার পরেও ওর উপরে নির্ভর করেছি। আর সেই জায়গা থেকেই বলছি, ‘বহুরূপী’তে আমাকে যে অন্য রকম লেগেছে, তার পুরো কৃতিত্ব কিন্তু পাপিয়ার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy