Mahesh Anand, famous villain of Bollywood died in poverty dgtl
bollywood
পাঁচ বার বিয়ে, ১৮ বছর কর্মহীন এই খলনায়কের পচনধরা দেহ উদ্ধার হয় নিজের ফ্ল্যাটে
ছবিতে মূল নায়কের সহকারী হিসেবে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন মহেশ। দর্শকের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছিল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ১০:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
কোনও এক সময়ে বছরে ১০টা ছবিতে অভিনয় করতেন তিনি। বাহন ছিল বিলাসী গাড়ি। অথচ কেরিয়ারের লেখচিত্র যখন নীচের দিকে, তখন টানা ১৮ বছর তিনি ছিলেন কর্মহীন। রিকশাভাড়া দেওয়ার ক্ষমতাও ছিল না। অতীতের পর্দা কাঁপানো খলনায়ক মহেশ আনন্দের মৃত্যু হয় রিক্ত, অবসাদগ্রস্ত এবং সুরাসক্ত অবস্থায় একাকিত্বে।
০২২৫
মহেশের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৩ অগস্ট। মাত্র দু’বছর বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন তিনি। অনাদরের শৈশবে তাঁর আগ্রহ ছিল নাচ, শরীরচর্চা এবং ক্যারাটেতে। সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্ট স্তর অবধি পৌঁছেছিলেন।
০৩২৫
মহেশের মা তারা ছিলেন স্বল্প পরিচিতি অভিনেত্রী। নাচ এবং অ্যাকশনকে সম্বল করে মায়ের মতো বলিউডেই পা রেখেছিলেন মহেশ। অল্পবিস্তর মডেলিংয়ের পরে তাঁর প্রথম ছবি ‘সনম তেরি কসম’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮২-তে।
০৪২৫
প্রথম ছবিতে টাইটেল ট্র্যাকের সঙ্গে নেচেছিলেন মহেশ। একই টাইটেল ট্র্যাক ব্যবহৃত হয়েছিল ১৯৮৪ সালের ‘করিশ্মা’ ছবিতেও। সেখানেও কাজ করেছিলেন তিনি। শরীরচর্চার কারণে মহেশের চেহারা সমসাময়িক অন্যান্য নায়কের তুলনায় অনেক ভাল ছিল।
০৫২৫
সেই কারণেই তাঁকে পছন্দ করেছিলেন পরিচালক বি সুভাষ। ‘টারজান’ ছবির জন্য। কিন্তু পরে তাঁর বদলে অভিনয় করেন হেমন্ত বির্জে। মহেশকেও অবশ্য বসে থাকতে হয়নি। তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘সস্তি দুলহন মেহঙ্গা দুলহা’ ছবিতে।
০৬২৫
কেরিয়ারে একমাত্র এই ছবিতেই মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মহেশ। এই ছবিতে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন আদিত্য পাঞ্চোলিও। ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নেন মহেশ। অমিতাভ বচ্চন, গোবিন্দ, মিঠুন চক্রবর্তী-সহ বহু তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
০৭২৫
ছবিতে মূল নায়কের সহকারী হিসেবে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন মহেশ। দর্শকের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছিল। ‘শাহেনশা’, ‘ইনসাফ’, ‘গঙ্গা যমুনা সরস্বতী’-র মতো বক্স অফিস সফল ছবির অংশ ছিলেন মহেশ।
০৮২৫
তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবি হল ‘স্বর্গ’, ‘থানেদার’, ‘বিশ্বাত্মা’ এবং ‘গুমরাহ’। ‘গুমরাহ’ ছবিতে কাজ করার সূত্রে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় সঞ্জয় দত্তের। সেই বন্ধুত্ব দীর্ঘ কয়েক দশক অটুট ছিল। সঞ্জয়কে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের সেরা বন্ধু বলে মনে করতেন মহেশ।
০৯২৫
চেহারা, ব্যক্তিত্বের দিক দিয়েও সঞ্জয় ও মহেশের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য ছিল। পাশাপাশি আর এক খলনায়ক কেভিন প্যাকার্ডের সঙ্গেও বন্ধুত্ব ছিল মহেশের। ইন্ডাস্ট্রিতে অমিতাভ বচ্চন এবং জ্যাকি শ্রফকেও সমীহ করতেন মহেশ। কারণ তাঁরাও কেরিয়ারের সূত্রপাতে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন।
১০২৫
১৯৮৯ থেকে ২০০০ অবধি মহেশ আনন্দ চুটিয়ে কাজ করেন বলিউডে। কিন্তু তার পরেই প্রতিযোগিতার মুখে ধীরে ধীরে হারিয়ে যান তিনি। সে সময় বলিউডে অ্যাকশন হিরোর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। নেগেটিভ রোলেও উঠে আসছিলেন নতুন নতুন মুখ।
১১২৫
২০০০ সালে তিনি ফাইট সিকোয়ন্সের শুটিংয়ে আহত হন। তিন চার মাস তাঁকে কাটাতে হয় সিনেমার বাইরে। এই সময় সঞ্জয় দত্ত এবং আদিত্য পাঞ্চোলি ছাড়া আর কেউ যোগাযোগ রাখেননি। অভিযোগ ছিল মহেশের।
১২২৫
২০০৩ সালে তিনি প্রযোজক হিসেবে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। প্রয়োজনা করেন ‘প্যায়ার কিয়া নহি যা তা’ ছবির। কিন্তু কিছু দিন পরে ছবির কাজ আটকে যায়। পরবর্তীতে কাজ শেষ হওয়ার পরেও ছবির মুক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়। শেষে বেসরকারি চ্যানেলে মুক্তি পায় ছবিটি।
১৩২৫
চোট আঘাত থেকে ফিরে আসার পরে মহেশ একদমই কাজ পাচ্ছিলেন না। ভরাডুবির মুখে গিয়ে দাঁড়ায় তাঁর কেরিয়ার। পাশাপাশি এ সময় তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ।
১৪২৫
মহেশ আনন্দ মোট পাঁচ বার বিয়ে করেছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী বরখা ছিলেন অভিনেত্রী রীনা রায়ের বোন। কিন্তু বরখার সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য ছিল স্বল্পস্থায়ী।
১৫২৫
১৯৮৭ সালে মহেশ আবার বিয়ে করেন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী এরিকা ডি’সুজা ছিলেন মিস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল। তাঁদের একমাত্র ছেলের নাম ছিল ত্রিশূল। ছেলে হওয়ার পরই মহেশকে ছেড়ে চলে যান এরিকা। ছেলের নামও পাল্টে রাখেন ‘অ্যান্থনি’।
১৬২৫
১৯৯২ সালে অভিনেত্রী মধু মলহোত্রকে তৃতীয় বিয়ে করেন মহেশ। কিন্তু তাঁর এই দাম্পত্যও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তাঁর চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন ঊষা। তিনিও মহেশের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নিগ্রহ এনে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন।
১৭২৫
ঊষার সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে মহেশ পঞ্চম বিয়ে করেন রুশ মডেল লানা-কে। কিন্তু তিনিও কাজের সুবাদে দেশের বাইরেই থাকতেন বেশির ভাগ সময়। এই সময়ে কর্মহীন, নিঃসঙ্গ জীবনে মহেশকে গ্রাস করে অবসাদ। তিনি সুরাসক্ত হয়ে পড়েন।
১৮২৫
২০১৫ সালে মহেশ পঞ্চম বিয়ে করেন। সে বছর থেকেই তিনি বলিউডে ফেরার চেষ্টা করতে থাকেন। তাঁকে সুযোগ দেন পহেলাজ নিহালনি। ‘রঙ্গিলা বাবু’ ছবিতে মাত্র ছ’মিনিটের ভূমিকায় অভিনয় করতে রাজি হন মহেশ।
১৯২৫
পহেলাজ পরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, কাজ পাওয়ার জন্য মহেশ মরিয়া হয়ে ছিলেন। আঠেরো বছর কাজের বাইরে থাকায় তিনি যে করে হোক ফিরে আসতে চাইছিলেন।
২০২৫
কর্মহীন অবস্থায় দেড় দশক থাকার সময় মহেশ আনন্দকে অর্থসাহায্য করতেন তাঁর বোন। এই সময়ে সুরার নেশা গ্রাস করেছিল তাঁকে। তাঁর মনে হত, জীবনের সব সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে নেশাতেই।
২১২৫
জীবনের কঠিন সময়ের জটিলতা বাড়িয়ে দেয় ক্যানসার। ঠিক যখন ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসতে চাইছিলেন মহেশ, তাঁর দেহে ক্যানসার ধরা পড়ে। শেষ ছবির মুক্তিও তিনি দেখে যেতে পারেননি। মারা যান শুটিং শেষ হওয়ার বাইশ দিন পরে।
২২২৫
তাঁর মৃত্যুও খুব রহস্যজনক। দিন দু’য়েক ধরে তাঁর বাড়ির তালাবন্ধ দরজার সামনে থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন পরিচারিকা। শেষ দরজার বাইরে পড়ে থাকা খাবারের প্যাকেট দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি মহেশের বোনকে খবর দেন। পুলিশকে নিয়ে ভারসোভায় মহেশের ফ্ল্যাটে আসেন তাঁর বোন।
২৩২৫
দরজা ভেঙে মহেশের ফ্ল্যাটে ঢোকে পুলিশ। এর পর সোফায় পচনধরা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় অতীতের দোর্দণ্ডপ্রতাপ খলনায়কের দেহ। পাশে পড়েছিল আধখাওয়া খাবার, ওয়াইনের বোতল। ঘরের টিভি চলছিল তখনও।
২৪২৫
তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কারও মত ছিল, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। কারণ তার আগেও নিজের কেরিয়ারে আত্মহত্য়ার চেষ্টা করেছিলেন মহেশ। আবার কারও ধারণা ছিল, তাঁর মৃত্যু হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। ময়নাতদন্তের পরে তাঁর দেহ নিতে অস্বীকার করেন মহেশের বোন।
২৫২৫
শেষ অবধি মহেশের রাশিয়ান স্ত্রী লানা এসে মহেশের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। তাঁর অন্ত্যেষ্টিতে হাজির ছিলেন না কোনও বলি তারকা। যে সব সুপারস্টারের সঙ্গে তিনি কাজ করেছিলেন, তাঁদের একটুও সময় হয়নি মহেশকে বিদায় জানানোর। এমনকি, অর্থের অভাবে যখন তাঁর ক্যানসারের চিকিৎসা আটকে গিয়েছিল, তখনও এগিয়ে আসেননি কেউ।