সরোজ নয়ের দশক থেকে সেই যে মাধুরীর হয়ে গেলেন, সেই ভালবাসা, জুটি রয়ে গেল শেষ কাজ পর্যন্ত। নিজস্ব চিত্র
কারণ, ‘ম’-এ মাধুরী হলেই ‘স’-এ সরোজ হবে, এটা বলিউডকে জানতে, মানতে বাধ্য করেছিলেন এই জুটি। বি টাউন দেখেছিল, সরোজ খান কায়া হলে মাধুরী দীক্ষিত ছিলেন তাঁর ছায়া রূপী আয়না। যাঁর মধ্যে সরোজের নাচের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছন্দ, বাঁক অনায়াসে জীবন্ত রূপ পেত।
গুরু-শিষ্যের এই পরম্পরা শুরু ‘তেজাব’-এর ‘এক দো তিন’ দিয়ে। ভীষণ কড়া মাস্টারমশাই সেদিন নাচিয়ে নাচিয়ে হা-ক্লান্ত করে দিয়েছিলেন তাঁর নতুন ছাত্রীকে। তখনও মাধুরী সরোজের চোখের মণি নন। তবে ‘নাড়া’ বেঁধেছিলেন ওই নাচ দিয়ে।
তাই, সকালে সরোজের না থাকার খবর পাওয়ার পর থেকেই ‘গুরুজি’ কাম ‘বন্ধু’কে হারিয়ে কথা বলার ভাষাটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন ‘ধকধক গার্ল’। অঝোরে ঝরতে ঝরতে টুইটে জানিয়েছেন, ‘‘আমার নাচের সমস্ত কৃতিত্ব সরোজজির। ‘এক দো তিন’ নাচ আর ‘মোহিনী’ লোকের মনে গেঁথে গেছে ওঁর জন্যই। আমি ভাল নেই। কী ভাষায় ওঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাব!’’
আরও পড়ুন: ‘মাস্টারজি’ নেই, টুইটে শোক অমিতাভ থেকে অক্ষয়ের
'তেজাব' দেখে সকলের জিজ্ঞাসা, মাধুরী ও ভাবে কোমর দোলালেন কী করে!’’ নিজস্ব চিত্র।
কী ভাবে তৈরি হয়েছিল সরোজ-মাধুরীর এই রসায়ন? জানতে গেলে ফিরে যেতে হবে সরোজ খানের ৫৩ তম জন্মদিনে।
আরও পড়ুন: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত কোরিয়োগ্রাফার সরোজ খান
ওইদিন ইন্ডিয়া ডট কমের কাছে সরোজ মন খুলেছিলেন মাধুরীকে নিয়ে, ‘‘শ্রীদেবী, মাধুরী হয়ে ঐশ্বর্য রাই। বলিউডের প্রথম সারির হেন নায়িকা নেই যাঁর সঙ্গে কাজ করিনি। কিন্তু মাধুরী ইজ মাধুরী। এর মতো এত সম্মান আমি কারও থেকে পাইনি। তেমনই ওঁর মতো নিষ্ঠা, পরিশ্রমের ক্ষমতাও আর কারও ছিল না। ‘তেজাব’-এর কথাই ধরুন। একজন শাস্ত্রীয় নাচে পারদর্শিনীর কাছে বলিউড কী আশা করে সেটা প্রথমে ওঁকে বুঝিয়েছিলাম। ঠাণ্ডা মাথায় বুঝেছিল। তারপর চুপচাপ দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা নাচের প্রশিক্ষণ। ছবি মুক্তির পরে সবার একটাই অবাক জিজ্ঞাসা, মাধুরী ও ভাবে কোমর দোলালেন কী করে!’’
কী উত্তর দিয়েছিলেন সরোজ? হাসতে হাসতে নাকি জবাব এসেছিল, ‘‘ওই দিন থেকে আমি নাচের কায়া হলে মাধুরী সেই নাচের হুবহু ছায়া।’’
সরোজের এই কথা মনে পড়িয়ে দেয় ‘বেটা’র ‘ধক ধক করনে লাগা’, থানেদার-এক ‘তাম্মা তাম্মা লোগে’, ‘খলনায়ক’ ছবির ‘চোলি কে পিছে ক্যয়া হ্যায়’, রাজা-র ‘আঁখিয়া মিলাউ কভি আঁখিয়া চুরাউঁ’, ‘দেবদাস’-এর ‘ডোলা রে ডোলা’র মতো ইতিহাস সৃষ্টিকারী নাচের দৃশ্যায়ন।
ইতিহাসের এমন রমণীয় রূপ বোধহয় বলিউড এবং তামাম দেশ এর আগে দেখেনি। দেখেনি, গুরু-শিষ্যের নজর লেগে যাওয়ার মতো সম্পর্কও। রোজ তাই নয়ের দশক থেকে সেই যে মাধুরীর হয়ে গেলেন, সেই ভালবাসা, জুটি রয়ে গেল শেষ কাজ পর্যন্ত। ‘তেজাব’-এর পর থেকে ‘গুরুজি’র একটি সাক্ষাৎকারও শিষ্যার নাম উচ্চারণ না করে হয়নি।
সরোজ-মাধুরীর শেষ যুগলবন্দি, কলঙ্ক ছবির ‘তবহা হো গ্যয়ে’। যাঁরা এই ছবি দেখেছেন তাঁরা হয়তো আজ আরও একবার দেখবেন, এই মাস্টারস্ট্রোকের জন্যই। একটি নাচও যে একটি দৃশ্য বুনতে পারে, সেটা বার বার সরোজ খান দেখিয়ে দিয়েছেন।
এবং এই নাচের দৃশ্যের কথা শুনেই মাধুরী নাকি বলেছিলেন, ‘‘সরোজজি ছাড়া এই দৃশ্যের কোরিওগ্রাফি আর কারওর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি দেখালে আমি অনুসরণ করব।’’
নির্ভরতার এমন উদাহরণ বোধহয় লাখে একটি মেলে।
শুরু থেকে শেষ কাজেও সরোজ তাই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী নিজে। তাঁর অভাবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বীর যোগ্য প্রতিফলন মাধুরী আক্ষরিক অর্থেই নিঃস্ব, রিক্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy