মাধুরীর ছবির সেটে প্রায়ই হাজির থাকতেন হুসেন। বলা যায়, মাধুরীকে নিজের জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছিলেন তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ১২:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
মাধুরী ম্যাজিকে বুঁদ ছিল বলিউডের আশি ও নব্বইয়ের দশক। তাঁর রূপ ও গুণমুগ্ধদের মধ্যে অন্যতম এম এফ হুসেন। বিশ্বমানের এই চিত্রশিল্পী এতটাই মোহিত ছিলেন মাধুরীতে যে, নিজের নাম থেকে পোশাক, সবই পাল্টে ফেলেছিলেন। এমনকি, মাধুরীর জন্য তাঁকে যেতে হয়েছিল হাসপাতালেও।
০২১৬
১৯৯৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল মাধুরী দীক্ষিতের সুপারহিট ছবি ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’। ভরপুর পারিবারিক বিনোদনের এই ছবিতে মাধুরী অভিনয় করেছিলেন উচ্ছল তরুণী নিশার ভূমিকায়।
০৩১৬
পর্দায় নিশার ভূমিকায় মাধুরীকে দেখে এতটাই মুগ্ধ ছিলেন হুসেন যে, তিনি মোট ৯৫ বার দেখেছিলেন ছবিটি। মুম্বইয়ের লিবার্টি সিনেমা হলের নির্দিষ্ট আসনে তাঁর জন্য বুক করা থাকত।
০৪১৬
‘হম আপ কে হ্যায় কৌন’ ছবির সময় মাধুরী ছিলেন ২৭ বছর বয়সি। হুসেনের বয়স সে সময় ৭৯ বছর। মাধুরীর সৌন্দর্য ও হাসিতে অবসেসড চিত্রশিল্পী ঠিক করলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন।
০৫১৬
মাধুরীর ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাতের সময় ঠিক হল। নিজের হাতে মাধুরীর প্রিয় বিরিয়ানি রান্না করে হুসেন মার্সিডিজ চালিয়ে পৌঁছন মাধুরীর বাড়িতে। সে দিন মাধুরী ও দীক্ষিত পরিবারের সবার সঙ্গে হুসেনও জমিয়ে বিরিয়ানি খেয়েছিলেন।
০৬১৬
মাধুরীর ছবির সেটে প্রায়ই হাজির থাকতেন হুসেন। বলা যায়, মাধুরীকে নিজের জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছিলেন তিনি।
০৭১৬
১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল মাধুরীর ছবি ‘মহব্বত’। ছবির প্রযোজক ছিলেন মাধুরীর সেক্রেটারি রাকেশনাথ। পরিচালক ছিলেন রাকেশনাথের স্ত্রী রিমা। ছবির সেটে পৌঁছন এম এফ হুসেন।
০৮১৬
সেখানে সবাই তাঁকে দেখে চমকে যান। কারণ চিরপরিচিত কুর্তা পায়জামা ছেড়ে হুসেন তখন পরেছিলেন শার্ট ট্রাউজার্স এবং মাথায় টুপি। শোনা যায়, মাধুরীর জন্যই নতুন লুকে ধরা দিয়েছিলেন তিনি।
০৯১৬
রাকেশনাথের অনুরোধে এই ছবিতে ছোট্ট ক্যামিয়ো ভূমিকায় অভিনয়ও করেন শিল্পী হুসেন। শুধু মাধুরীর সঙ্গে অভিনয় করবেন বলে তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। তাঁর মাধুরী-অবসেশন এখানেই শেষ নয়।
১০১৬
পরে হুসেন মাধুরীর জন্য ছবি পরিচালনাও করেন। মাধুরীকে নিয়ে তিনি পরিচালনা করেন ‘গজগামিনী’। গল্পও লিখেছিলেন তিনি নিজেই। এই সময়েই তিনি নিজের নামও পাল্টে ফেলেন। তাঁর নাম ছিল মকবুল ফিদা হুসেন। তিনি পাল্টে করে নেন ‘ম্যাকবুল ফিদা হুসেন’। মজা করে অনেকে তাঁকে বলতেন ‘মাধুরী ফিদা হুসেন’।
১১১৬
পরে হুসেন যখন ‘মীনাক্ষি’ ছবির কথা ভাবেন, তাঁর মনে মাধুরী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। কিন্তু তখন মাধুরী বিয়ে করে প্রবাসে। তাঁর ম্যানেজার রাকেশনাথ অনুরোধ করেন হুসেনকে, যাতে তিনি অন্য কোনও নায়িকার কথা ভাবেন। এই প্রসঙ্গে দু’জনের তীব্র মতান্তর হয়েছিল।
১২১৬
পরে মাধুরী নিজেও হুসেনকে জানান, তাঁর পক্ষে তখন আমেরিকা থেকে ভারতে আসা সম্ভব নয়। তাই শেষ অবধি ছবি হয়েছিল তব্বুকে নিয়ে। গুঞ্জন, ছবিতে বেশ কিথু সাহসী দৃশ্য ছিল। সে কারণেই মাধুরী প্রস্তাব এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
১৩১৬
এক বার অসুস্থ হুসেনকে ভর্তি করা হয়েছিল মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। তাঁকে দেখতে সেখানে পৌঁছেছিলেন মুম্বইয়ের এক নামী সাংবাদিক। তিনি আবার মাধুরীরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
১৪১৬
প্রবীণ শিল্পীর কাছে গিয়ে চমকে যান সাংবাদিক। হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে ফরাসে বসে একের পর এক মাধুরীর পোর্ট্রেট এঁকে যাচ্ছিলেন হুসেন। ওই সাংবাদিকের দাবি, হুসেন তাঁকে বলেছিলেন রোজকার ব্যস্ততা থেকে দূরে সরে তিনি এ ভাবেই নিজের কাজ করতে ভালবাসেন। সে সময় অসুস্থতা নাকি ছিল তাঁর অজুহাত মাত্র।
১৫১৬
আমেরিকায় বিবাহিত জীবনে সেটল করার পরে ফের মুম্বই ফিরে আসেন মাধুরী। ২০০৭ সালে মুক্তি পায় তাঁর কামব্যাক মুভি ‘আ যা নাচ লে’। ছবির স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ের জন্য আস্ত একটা প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করেছিলেন হুসেন!
১৬১৬
তাঁর প্রতি প্রবীণ শিল্পীর ভালবাসা ও অবসেশনকে সম্মান করতেন মাধুরী নিজেও। তিনি নিজে তারকা হয়েও গর্বিত ছিলেন তাঁর এই তারকা-অনুরাগীকে নিয়ে।