Advertisement
E-Paper

Kalika Prasad-Lopamudra: আমার খাতায় কালিকার হাতে লেখা গানগুলোই রয়ে গেল, মৃত্যুদিনে স্মৃতিচারণ লোপামুদ্রার

ও যে কাজটা করেছে, বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লোকসঙ্গীতকে গুছিয়ে একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছে। লোকসঙ্গীতকেও বাণিজ্যিক সাফল্যের মুখ দেখিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কোনও জিনিস বাণিজ্যিক ভাবে সফল হলে, তা যদি নিজের পথ ছেড়ে খানিক অন্য পথেও হাঁটে, তবু তা আগামীতে থেকে যায়। 

কালিকাপ্রসাদকে ফিরে দেখলেন লোপামুদ্রা

কালিকাপ্রসাদকে ফিরে দেখলেন লোপামুদ্রা

লোপামুদ্রা মিত্র

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২২ ১৪:২০
Share
Save

প্রতি বছর এ দিনটা এলেই একটা ভয়ঙ্কর মনখারাপ ঘিরে ধরে। ৪৬ বছরটা তো কারও চলে যাওয়ার সময় নয়। তবু এমন অনেক মানুষ থাকেন, যাঁরা জীবন খুব অল্প দিনের হলেও, তার মধ্যেই বিরাট কোনও কাজ করে যান। কালিকা সেই গোত্রের মানুষ। ও যে কাজটা করেছে, বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লোকসঙ্গীতকে গুছিয়ে একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছে। লোকসঙ্গীতকেও বাণিজ্যিক সাফল্যের মুখ দেখিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কোনও জিনিস বাণিজ্যিক ভাবে সফল হলে, তা যদি নিজের পথ ছেড়ে খানিক অন্য পথেও হাঁটে, তবু তা আগামীতে থেকে যায়। সেটা ঠিক কি বেঠিক, ভাল না মন্দ, সে পরের কথা। কিন্তু কালিকা এটা করেছিল বলেই কিন্তু বাংলা থেকে আজ পরপর লোকসঙ্গীত শিল্পী উঠে আসছেন। লোকগানকে পেশা করেও যে জীবনে সফল হওয়া যায়, কালিকার দেখানো সেই পথে হাঁটার সাহস দেখাচ্ছে অনেক ছেলে-মেয়ে।

কালিকা কাজ শুরু করার আগে লোকসঙ্গীত নিজের নিজের মতো করে করতেন শিল্পীরা। ভীষণ কুক্ষিগত একটা জায়গায় ছিল। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নানা ধরনের গান-নাচ, লোকশিল্পের নানা রকম আঙ্গিক। সেই সবটাকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলার কাজটা সহজ ছিল না। কিন্তু কালিকা সেটা করে দেখিয়েছে। ‘দোহার’ গড়ে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে। লোকগান, লোকনাচ থেকে অন্য বিভিন্ন আঙ্গিক, সবটা নিয়ে গবেষণা করেছে, তার সংরক্ষণ বা বিবর্তনের পথ দেখিয়েছে। ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার ইচ্ছে বা ক্ষমতা দুটোই ওর সাংঘাতিক ছিল। গানের রিয়্যালিটি শো-এর মঞ্চে যে লোকসঙ্গীতকে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাও তো ও-ই দেখাল। ওর জন্যই এত মানুষ এত ধরনের লোকগান চিনলেন জানলেন। উত্তর-পূর্বের বউ নাচ, ধামাইল একটা এত বড় বাণিজ্যিক মঞ্চে পৌঁছতে পারল। সেগুলো দেখে আরও বহু মানুষ অনুপ্রাণিত হলেন এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরতে। এটা যে কত বড় একটা কাজ! আশা করি, ‘দোহার’ আগামীতে কালিকার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে চলতে পারবে। কালিকার স্ত্রী ঋতচেতা ওর সঙ্গেই পথ চলেছিল এতকাল। মাঝের আকস্মিক ধাক্কা ওকে টালমাটাল করে দিয়েছিল। তবে আমি নিশ্চিত, ও আস্তে আস্তে ঠিক কালিকার কাজগুলো নিজের মতো করে গোছাতে পারবে।

লোপামুদ্রাকে লোকগান গাওয়ার সাহস দেন কালিকাপ্রসাদই

লোপামুদ্রাকে লোকগান গাওয়ার সাহস দেন কালিকাপ্রসাদই

আমার নিজেরই লোকগান গাওয়াই হত না, যদি কালিকা সাহস না দিত। লোকগানে আমাকে পথ দেখানোর মানুষ হয়তো আরও আছেন। কিন্তু কালিকার ফেলে যাওয়া জায়গাটা পূরণ হওয়ার নয়। ও আমার বন্ধু। নির্ভরতার জায়গা। বন্ধুর কাছে শেখা তো অন্য রকম। সব রকম কথা বলা যেত, আলোচনা করা যেত। ইচ্ছেমতো প্রশ্ন করা যেত। সে কথাগুলো কিন্তু ও নিজের মধ্যেই রাখত। সে সম্পর্ক তো অন্য কারও সঙ্গে হওয়ার নয়।

১৯৯৪-৯৫ নাগাদ শিলচরেই আমাদের আলাপ। তখনও আমরা কেউই প্রতিষ্ঠিত নই। তার পর আমরা একসঙ্গে ‘সহজ পরব’ করেছি। দেখেছি, কী অসম্ভব দক্ষতায় ও সবটা সামলাচ্ছে। লোক-উৎসবের পুরো বিষয়টাকে একটা নির্দিষ্ট রূপ দিচ্ছে। কালিকার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার সেই দিনগুলো বড্ড মনে পড়ে। লোকগানের নির্দিষ্ট আঙ্গিক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ও অসম্ভব রকম অনমনীয় ছিল। সেই কালিকার কাছেই কিন্তু আমার সব মাফ! আমি ‘মনফকিরা’ করছি, লোকগানের চেনা ছক ভেঙেচুরে দিচ্ছি। কালিকা কিন্তু বলল, “তুমি তোমার কাজ করেছ। ঠিক করেছ। তোমায় সবই মানায়।” কত জন এ ভাবে বলতে পারেন, নিজে অন্য ধারার ভাবনার মানুষ হয়েও?

বড্ড লেটলতিফ ছিল ছেলেটা! সবেতেই বড্ড গড়িমসি। এ দিকে আমি আবার সময়ের কাজ সময়ে করার ব্যাপারে খুব কড়া। হয়তো ‘সহজ পরব’-এর মিটিং সাতটায়। কালিকা হেলতেদুলতে এল ন’টায়। প্রত্যেক দিনই ভাবছি, এ বার একটা ফাটাফাটি হবে। কালিকা এমন হাসিমুখে কিছু একটা বলল, আর একটুও বকাঝকা, ঝগড়াঝাঁটি করা গেল না! তবে যখনই এসে পৌঁছক, কাজটাকে ওর মতো করে সবটা গুছিয়েও নিত ঠিক।

আমি এখনও হাতে লিখে রাখার পক্ষপাতী। তখন আমার প্রথম লোকগানের অ্যালবাম রেকর্ড হবে। কালিকারই লিখে দেওয়া গান। আমার খাতায় গান লিখে রাখছে। কোনওটা হয়তো আধখানা মনে পড়েছে, তাই লিখেছে। বাকি অর্ধেকটা আমি লিখে রেখেছি। আমার সেই খাতাতেই নিজের হাতের লেখায় রয়ে গেল কালিকা। আজীবনের মতো। ভাগ্যিস হাতে লেখার অভ্যাসটা ছিল আমার!

Kalikaprasad Bhattacharya Lopamudra Mitra Memory Folksong

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।