Lessor known facts about Uttam Kumar on his death anniversary dgtl
Uttam Kumar
Uttam Kumar: কেটে গিয়েছে চার দশক, বাঙালি এখনও উত্তম-আচ্ছন্ন
২০২১ সালের ২৪ জুলাই তাঁর মৃত্যুর ৪১ বছর পূর্ণ হল। আনন্দবাজার অনলাইন আরও এক বার নজর রাখল তাঁর জীবনের অন্দরে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ০৯:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
এখনও টেলিভিশনে পর্দায় সুর বাঁধে ‘হারানো সুর’। ‘নায়ক’-এর অভিনয় দেখে সম্ভ্রম জাগে। উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর চার দশক পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাঙালি ভুলতে পারেনি তাঁকে। এখনও বাঙালির কাছে সেরা অভিনেতা তিনিই।
০২২২
২০২১ সালের ২৪ জুলাই তাঁর মৃত্যুর ৪১ বছর পূর্ণ হল। আনন্দবাজার অনলাইন আরও এক বার নজররাখল তাঁর জীবনের অন্দরে।
০৩২২
৩ সেপ্টেম্বর, ১৯২৬। বাংলার বুকে জন্ম হল এক নক্ষত্রের। প্রথম জীবনে সংসারে প্রবল অনটনের মধ্যে বড় হয়েছিলেন তিনি। তাই পড়াশোনা শেষ করার আগেই উপার্জনের রাস্তায় পা বাড়াতে হয়েছিল।
০৪২২
ইন্ডাস্ট্রি তখনও পায়নি মহানায়ককে। সংসারের প্রয়োজনে তিনি তখন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে কেরানির চাকরি পান।
০৫২২
কেরানির কাজের মধ্যেই আহিরীটোলায় নিজেদের থিয়েটার গ্রুপ ‘সুহৃদ সমাজ’-এ নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন তিনি।
০৬২২
থিয়েটার করতে করতেই স্টুডিয়োপাড়ায় ডাক এল। ১৯৪৮-এর ছবি ‘দৃষ্টিদান’-ই তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি। কিন্তু শিকে ছিঁড়ল না একেবারেই। বরং তকমা জুটল ‘ফ্লপ মাস্টার’-এর।
০৭২২
এক সময় স্টুডিয়োপাড়ায় ওই নামেই তাঁকে চিনতেন সবাই। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একের পর এক সিনেমা করলেও কোনওটাই সফল হয়নি। ১৯৫৩-তে কামব্যাক ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ।
০৮২২
যুগলবন্দি ঘরানার অন্যতম উদাহরণ সত্যজিৎ রায় এবং উত্তমকুমার। উত্তমকুমারকে ভেবেই ১৯৬৬-র ‘নায়ক’ ছবি করার কথা ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘নায়ক’ উত্তমের কেরিয়ারের ১১০তম ছবি।
০৯২২
হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর ‘নায়ক’ দেখার পর রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন। উত্তমের সঙ্গে দেখা করতেও চেয়েছিলেন তিনি। এলিজাবেথ মুগ্ধ হয়েছিলেন উত্তমের অভিনয়ে।
১০২২
১৯৪৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মোট ২১২টি ছবি করেছেন তিনি। তাঁর সবকটি ছবিই ভারতীয়, বিশেষ করে বাংলা সিনেমার অলঙ্কার।
১১২২
১৯৭৬ সাল। তখন জরুরি অবস্থা চলছে। মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’ নাম দিয়ে এক বিকল্প অনুষ্ঠান হয়েছিল। রেডিয়োতে সেই অনুষ্ঠান করেছিলেন উত্তম। তবে পর্দায় উত্তম বাঙালির হৃদয়ে বাস করলেও এই ভূমিকায় তাঁকে মেনে নেয়নি জনতা। উত্তমও সরে দাঁড়িয়েছিলেন বিনয়ের সঙ্গে।
১২২২
অভিনয় ছাড়াও পরবর্তীতে প্রযোজক, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন উত্তম। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’য় অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
১৩২২
শুধু তা-ই নয়, দু’টি ছোট গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন উত্তম। একটি সুবোধ ঘোষ এবং অন্যটি তরুণ রায়ের লেখা গল্প অবলম্বনে।
১৪২২
সকলের কাছে মহানায়ক আবার বাড়ির ছোটদের কাছে ছিলেন ‘ভাল কাকু’। উত্তম মানে ভাল। সেই থেকেই ভাইপো-ভাইঝিরা তাঁকে ওই নামে ডাকতেন।
১৫২২
এই ভাল কাকু আবার গিরীশ মুখার্জি রোডের বাড়িতে এলে গাড়ির দরজা খুলে দিতেন পাড়ার মুচি। গাড়ি থেকে নেমেই টাকা দিয়ে রোজ তাঁকে খুশি করতেন মহানায়ক।
১৬২২
তিনি নিজে প্রচুর ছবি করেছেন কিন্তু বাড়ির মেয়েরা দল বেঁধে ছবির প্রিমিয়ারে যাবেন তা আবার একেবারেই পছন্দ করতেন না তিনি। পরিবারের ছোটদের যথেষ্ট শাসনে বেঁধে রাখতেন তিনি।
১৭২২
স্ত্রী গৌরীদেবীর মুখের আদলে বাড়ির লক্ষ্মীপ্রতিমার মুখ তৈরি করিয়েছিলেন উত্তম। প্রথম বছর বাড়িতে এসে কুমোর সেই মূর্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই থেকে ওই রীতি এখনও চালু।
১৮২২
এই পুজো উত্তমের খুব পছন্দের ছিল। লক্ষ্মীপুজোর দিন তিনি নিজে পুজোর আসনে বসতেন।
১৯২২
পরবর্তীকালে তিনি গিরীশ মুখার্জি রোডের বাড়ি ছেড়ে ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে চলে যান। এই বাড়িতেই থাকতেন সুপ্রিয়া দেবী। তবে প্রতি বছর বিয়ের তারিখ এবং জন্মদিনে প্রত্যেক বার গৌরীদেবীকে বেনারসি শাড়ি, সোনার গয়না উপহার দিতেন তিনি।
২০২২
পেশাগত কারণে কারও সঙ্গে তাঁর রেষারেষি ছিল না। বরং বাংলা ছবির দুই নক্ষত্র উত্তম এবং সৌমিত্র ছিলেন একে অন্যের গুণমুগ্ধ। ‘প্রতিশোধ’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘পক্ষীরাজ’, ‘দেবদাস’, ‘যদি জানতেম’, ‘নকল সোনা’, ‘স্ত্রী’, ‘অপরিচিত’, ‘ঝিন্দের বন্দি’- এই ন’টি ছবিতে এক সঙ্গে কাজ করেছিলেন তাঁরা।
২১২২
সাতের দশকের শেষ দিক। তখন উত্তম খ্যাতির মধ্যগগনে। এক দিন হঠাত্ কথাপ্রসঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, ‘‘দূর আর ভাল লাগছে না!’’ সৌমিত্র তখন তাঁকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘‘বুড়োর রোলগুলো করতে হবে না? এখন থেকেই ভাল না লাগলে হবে? আপনি আর আমি বুড়ো না হলে ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল বুড়ো পাওয়া যাবে না!’’পশুনে হাসতে শুরু করেছিলেন উত্তম কুমার।
২২২২
না! মহানায়কের আর বুড়ো হয়ে ওঠা হয়নি। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ‘ওগো বধু সুন্দরী’ ছবির শ্যুটিং চলাকালীনই তাঁর স্ট্রোক হয়। বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।