Lesser known facts about legendary Lata Mageshkar dgtl
Lata Mangeshkar
এক দিনের স্কুলজীবন থেকে অব্যক্ত প্রেম, কী ভাবে ‘হেমা’ থেকে ‘লতা’ হয়ে উঠলেন কিংবদন্তি কিন্নরকণ্ঠী
এরপর নর্মদার বোন সেবন্তীতে বিয়ে করেন দীননাথ। কিন্তু এই বিয়েতে আপত্তি ছিল সেবন্তীর পরিবারের। ইনদওরে ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় তাঁদের প্রথম কন্যাসন্তানের। নাম রাখা হয় ‘হেমা’। পরে মঙ্গেশকর দম্পতি ঠিক করেন মেয়ের নাম হবে ‘লতিকা’ থেকে ‘লতা’।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
মাত্র তেরো বছর বয়সে সংসারের ভার। অভিনয় আর গান দুটোই করতে হত সমানতালে। না হলে ছোট ছোট ভাইবোনকে নিয়ে মা যে অকূল পাথারে পড়বেন! সে দিনের বালিকা আজ নবতিপর। মধুকণ্ঠে তিনি চির কিন্নরকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর।
০২১৮
তাঁর বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব এবং ধ্রুপদী সঙ্গীতশিল্পী। বংশসূত্রে ছিলেন গোয়ার মঙ্গেশি গ্রামের পূজারী ব্রাহ্মণ। সেই গ্রামের প্রখ্যাত শৈব পীঠস্থানও পরিচিত ‘মঙ্গেশি‘ মন্দির নামে। সেই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তথা অভিষেককারী ছিলেন দীননাথের বাবা, গণেশ হার্দিকর।
০৩১৮
দীননাথের মা, তথা লতার ঠাকুমা যেশুবাঈ ছিলেন গোয়ার দেবদাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। পরে সেই সম্প্রদায়ের নাম হয় গোমন্তক মরাঠি সমাজ। হার্দিকর থেকে নিজের পদবী ‘মঙ্গেশকর’ করে নেন দীননাথ।
০৪১৮
সম্পন্ন গুজরাতি ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে নর্মদাকে ১৯২২ সালে বিয়ে করেন দীননাথ। তাঁদের সন্তান লতিকা মারা যায় শৈশবে। এই শোক সহ্য করতে পারেননি নর্মদা। কয়েক দিনের মধ্যে তিনিও প্রয়াত হন।
০৫১৮
এরপর নর্মদার বোন সেবন্তীতে বিয়ে করেন দীননাথ। কিন্তু এই বিয়েতে আপত্তি ছিল সেবন্তীর পরিবারের। ইনদওরে ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় তাঁদের প্রথম কন্যাসন্তানের। নাম রাখা হয় ‘হেমা’। পরে মঙ্গেশকর দম্পতি ঠিক করেন মেয়ের নাম হবে ‘লতিকা’ থেকে ‘লতা’।
০৬১৮
দীননাথের নাটক ‘ভাও বন্ধন’-এর একটি চরিত্রের নামও ছিল লতিকা। শৈশবে বাবার কাছেই গানের হাতেখড়ি লতার। দীননাথের জহুরি-চোখ ভুল করেনি প্রতিভা চিনতে. কিন্তু তিনি মেয়ের সাফল্যের কিছুই দেখে যেতে পারেননি।
০৭১৮
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে লতা প্রথম অভিনয় করেন বাবার নাটকে। তাঁর যখন তেরো বছর বয়স, মারা যান দীননাথ। আশা, ঊষা এবং ভাই হৃদয়নাথ তখন শিশু। পারিবারিক বন্ধু মাস্টার বিনায়কের সংস্থায় মরাঠি ছবিতে অভিনয় শুরু করেন শিশুশিল্পী লতা ও আশা। ১৯৪২ সালে মরাঠি ছবি ‘কিটি হাসাল’-এ প্রথম প্লেব্যাক। কিন্তু সে গান পরে বাদ পড়েছিল।
০৮১৮
১৯৪৫ সালে মাস্টার বিনায়কের সংস্থা চলে এল বম্বে, আজকের মুম্বইয়ে। লতাও চলে এলেন সেই শহরে। এ বার শুরু হল ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিম। পাশাপাশি অন্নসংস্থানের জন্য চলতে লাগল মরাঠি ও হিন্দিতে নানা ধরনের প্লেব্যাক।
০৯১৮
তিন বছর পরে সুর কাটল। মারা গেলেন মাস্টার বিনায়ক. এরপর লতার পাশে দাঁড়ালেন গুলাম হায়দর। তিনি তাকে নিয়ে গেলেন শশধর মুখোপাধ্যায়ের কাছে।
১০১৮
কিন্তু প্রযোজক শশধর ‘শহিদ’ ছবির জন্য খারিজ করে দিলেন লতার কণ্ঠ। ক্ষুব্ধ হায়দর শশধরকে বলেছিলেন, একদিন লতাকে দিয়ে গাওয়ানোর জন্য হত্যে দিয়ে পড়ে থাকবে সারা দেশের ইন্ডাস্ট্রি।
১১১৮
১৯৪৮ সালে হায়দরের ‘মজবুর’ ছবিতে প্রথম বড় ব্রেক পান লতা। হিট হয় তাঁর গলায় ‘দিল মেরা তোড়া’। লতা বলেন, হায়দর তাঁর জীবনে গডফাদার। তিনিই প্রথম তাঁর কণ্ঠে পূর্ণ ভরসা রাখতে পেরেছিলেন।
১২১৮
১৯৪৯ সালে ‘মহল’ ছবিতে ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গান লতাকে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা এনে দেয়। বাকিটা ইতিহাস। হায়দরের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণ করেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন দেশের নাইটিঙ্গল।
১৩১৮
দেশের মোট ৩৬টি ভাষায় গান গেয়েছেন লতা। ঠিক কতগুলো গান গেয়েছেন, সেই সংখ্যা নিয়ে বারবার বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। শিল্পী নিজে জানিয়েছেন, তিনি গানের রেকর্ড রাখেন না।
১৪১৮
১৯৬২ সালে গুরুতর অসুস্থ লতা ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। তিন মাস তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। অভিযোগ, তাঁকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বাড়ির রাঁধুনির বিরুদ্ধে। রহস্যজনক ভাবে ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান সেই রাঁধুনি।
১৫১৮
লতাই প্রথম ভারতীয় শিল্পী যিনি লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে অনুষ্ঠান করেন। ১৯৭২ সালে পরিচয় ছবিতে ‘বিতি না বিতাই র্যায়না’ গানের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পান। ১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৭১ সালে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন তিনি। ২০০১ সালে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত হন এই কিংবদন্তি।
১৬১৮
প্রথম দিকে লতার গানে নূরজাহানের গানের প্রভাব পাওয়া যেত। পরে তিনি নিজস্ব গায়কি গড়ে তোলেন। নূরজাহানের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল খুবই ভাল। সমসাময়িক শিল্পীদের মধ্যে লতার প্রিয় ছিলেন কিশোরকুমার।
১৭১৮
জীবনে মাত্র একদিন স্কুলে গিয়েছিলেন লতা। শোনা যায়, তিনি ক্লাসে গান শেখাচ্ছিলেন বলে তিরস্কৃত হয়েছিলেন। আবার এও শোনা যায়, বোন আশাকে তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন স্কুলে। সেখানে আপত্তি ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের। আর স্কুলে না গিয়ে বাড়িতেই পড়াশোনা করেছিলেন লতা।
১৮১৮
কিন্নরকণ্ঠী কিংবদন্তির জীবনে একটি সাধ অপূর্ণ থেকে গিয়েছে। তা হল, কে এল সায়গলের সঙ্গে আলাপ করা। ক্রিকেটভক্ত লতার সঙ্গে প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা প্রাক্তন ক্রিকেট প্রশাসক প্রয়াত রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তাঁদের কেউ এ বিষয়ে কোনওদিন মুখ খোলেননি। তবে দু’জনেই চিরজীবন অবিবাহিত থেকে গিয়েছেন।