ফাইল চিত্র।
এক বাবার তিন মেয়ে। ইন্দিরা চট্টোপাধ্যায়, শিপ্রা রায়চৌধুরী, চুমকি রায়। তখনকার দিনে নামবদলের রেওয়াজ ছিল। দুম করে বাবা দিলেন তাঁর তিন মেয়ের নাম বদলে। তার পর? বাবার দেওয়া পোশাকি নামেই বদলে গেল তাদের ভাগ্য। রাতারাতি তিন তারকা রুপোলি পর্দায় ঝলমলিয়ে উঠলেন। দীর্ঘ সময় তাঁদের কথাতেই বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় ‘হ্যাঁ’ ‘না’ আর ‘না’ ‘হ্যাঁ’ হয়ে যেত!
তাঁরা কারা? টলিউড বলছে তাঁরা মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, মহুয়া রায়চৌধুরী, দেবশ্রী রায়। তাঁদের সিনেমার ‘বাবা’ সদ্যপ্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। পরিচালকের জহুরির চোখ। তিন নায়িকাকে তিনিই বেছে নিয়েছিলেন তাঁর ছবির জন্য। নামও বদলে দিয়েছিলেন। ‘বালিকা বধূ’র জন্য তাঁর পছন্দ মৌসুমীকে। অভিনেত্রী তখন মাত্র ১৫। সংবাদমাধ্যমকে মৌসুমী জানিয়েছিলেন, পরিচালকের যুক্তি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। আবার কলকাতায় এক প্রেক্ষাগৃহের নাম ইন্দিরা। অর্থাৎ, নামটি ভীষণই পরিচিত। এই নাম পর্দায় ম্যাজিক ছড়াবে না। সেই কারণেই ১৯৬৭-তে প্রথম ছবির দৌলতে ইন্দিরা সবার সামনে এলেন ‘মৌসুমী’ হয়ে। বাংলা থেকে বলিউড--- মৌসুমীতেই মাতোয়ারা! সত্তরের দশকে তিনি মুম্বইয়ে ‘হাইয়েস্ট পেইড’ নায়িকা ছিলেন!
একই ঘটনা শিপ্রার সঙ্গেও। তিনিও তরুণ মজুমদারের আবিষ্কার। সাল ১৯৭২। তনুবাবুর ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ ছবির জন্য নায়িকা চাই। নায়ক অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নামও বদলে দিয়েছিলেন পরিচালক। অয়নের বিপরীতে শিপ্রা। কিন্তু সিনে দুনিয়ায় এমন আটপৌরে নাম চলে? পরিচালক তাঁর দ্বিতীয় ‘মানসকন্যা’র নাম রাখলেন মহুয়া। ‘ম’ অক্ষরটির প্রতি কি দুর্বলতা ছিল পরিচালকের? তাঁর পরপর দুই নায়িকার নামের আদ্যাক্ষর ‘ম’ দিয়ে! নাম, নায়িকার মিষ্টি চেহারা আর অভিনয়গুণে সুপারহিট ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’। মহুয়াকেও আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তনুবাবুর সঙ্গে দেবশ্রীর প্রথম কাজ ‘কুহেলি’ ছবিতে। তখন তিনি খুবই ছোট, চুমকি রায়। ‘কুহেলি’র পরেই শিশুশিল্পীর মা অনুরোধ জানিয়েছিলেন, পরিচালক যেন তাঁর মেয়েকে পরের ছবিতে আবার অভিনয়ের সুযোগ দেন। তনুবাবুও শিশুশিল্পীর মাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘‘মিসেস রায়, চুমকিকে আমার মনে থাকবে। আমার পরের ছবিতে ওকে অবশ্যই ডাকব।’’
এর কিছু পরে পরিচালক ঠিক করলেন হিন্দিতে ‘বালিকা বধূ’ করবেন। ঠিক মনে রেখে চুমকিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সন্ধ্যা রায় যত্ন করে বেনারসি পরিয়ে, চুল বেঁধে সাজিয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। সংলাপও শিখিয়ে দিয়েছিলেন। তনুবাবু সব দেখে চুমকির মাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘‘মিসেস রায়, আমি যে রকম ‘পাকা বাচ্চা’ চেয়েছিলাম চুমকি যে সে রকম নয়! ও এখনও খুবই সরল। মুখে-চোখে সেই সারল্যের ছায়া। ওকে দিয়ে তো আমার হবে না! আমার ‘পাকা বাচ্চা’ চাই।’’
শুনে মায়ের মুখ ম্লান। নিজের উপরে নিজেই রেগে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী! কেন একটু ‘পাকা’ হতে পারলেন না তিনি! তা হলেই পরিচালকের ছবিতে সুযোগ পেয়ে যেতেন। পরিচালক আবারও শিশুশিল্পীপ মাকে আশ্বাস চুমকি তত দিন বাড়ির দেওয়া নামেই কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তনুবাবু আবারও ‘লুক টেস্ট’ নিলেন। এ বারে উৎরে গেলেন অভিনেত্রী। আবারও নায়িকার মাকে ডাকলেন পরিচালক। এ বার তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপনার মেয়ে আগামী দিনে আরও ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করবে। সেখানে তো চুমকি নাম মানাবে না! ওর নাম বদলাতে হবে।’’ অভিনেত্রীর মা পরিচালককেই অনুরোধ জানালেন, ‘‘আপনিই তা হলে দায়িত্ব নিয়ে একটা নাম দিন। মৌসুমীর দিয়েছেন, মহুয়ার দিয়েছেন। আমার মেয়ের নতুন নাম না হয় আপনার হাতেই হোক।’’
তনুবাবু রাজি হলেন। জানালেন, চিত্রনাট্যের খাতায় নতুন নাম লিখে পাঠিয়ে দেবেন। সবাই অপেক্ষা করে আছেন, পরিচালক এ বারও নিশ্চয়ই ‘ম’ দিয়ে কোনও নাম ঠিক করবেন। যথা সময়ে খাতা এল। উপরে লেখা, ‘দাদার কীর্তি’, চিত্রনাট্য, দেবশ্রী রায়। পরের পাতায় লেখা চরিত্র-বাণী। অভিনেত্রী অবাক, একদম অজানা নাম তাঁর! সবাই শুনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গর্বে বুক ভরে উঠেছিল তরুণ মজুমদারের নায়িকার। দেবশ্রীর কথায়, ‘‘তনুদা সব সময়ে বলতেন, আমার তিন মেয়ে। মৌসুমী, মহুয়া, দেবশ্রী। ইন্দু, শিপ্রা আর চুমকি। আমার মৃত্যুর পরে এঁরাই আমার শেষকৃত্য করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy