Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
KIFF 2023

জাফর পানাহি থেকে ইরানের সাধারণ মেয়ে, কলকাতার পরিচালকের তথ্যচিত্রে ধরা পড়ল নিত্যবিদ্রোহ

এ বারের ‘কিফ’-এ দেখানো হবে কলকাতার মেয়ে শ্রীয়মী সিংহের তথ্যচিত্র ‘অ্যান্ড, টুয়ার্ডস হ্যাপি অ্যালিজ়’। বর্তমান ইরানের পরিস্থিতি কী ভাবে তৈরি হল, গত সাত বছর ধরে সেই খোঁজে পরিচালক।

Kolkata filmmaker Sreemoyee Singh’s documentary film And, Towrads Happy Alleys will be shown in KIFF 2023.

শ্রীয়মী সিংহের তথ্যচিত্র ‘অ্যান্ড, টুয়ার্ডস হ্যাপি অ্যালিজ়’-এর একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:০৬
Share: Save:

ইরানের সিনেমা এবং কবিতার প্রতি ভালবাসা থেকেই শুরু। কারও প্রেমে পড়লে যেমন মানুষ অনেক সময় বোধ-বুদ্ধি খুইয়ে ঝাঁপ মারে, অনেকটা সে রকমই হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রবিদ্যার স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী শ্রীয়মী সিংহের সঙ্গে। আব্বাস কিয়ারোস্তামি, জাফর পানাহির ছবি দেখে এবং ফরোহ্‌ ফারোখজ়াদের কবিতা পড়ে তাঁর মনে হয়েছিল, ইরানে তাঁকে যেতেই হবে। সেই রাস্তায় হাঁটতেই হবে, যেখানে তাঁর প্রিয় কবি বসে অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। সেই শহরে যেতেই হবে, যেখানে তাঁর প্রিয় পরিচালক হাজার বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ছবি তৈরির নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কী করে যাওয়া যায়? ফার্সি ভাষা শেখার অছিলায়? না কি ইরানিয়ান সিনেমা নিয়ে পিএইচডি করার সুবাদে? যা যা রাস্তা তাঁর কাছে খোলা ছিল, সে সব নিয়েই ইরান পৌঁছে যান বছর ২৪-এর তরুণী। তার পর সাত বছর কেটেছে। ইরানে থাকাকালীন তাঁর যাবতীয় অভিজ্ঞতা বন্দি হয়েছে একটি সাধারণ ৭০ডি ক্যামেরায় এবং সেখান থেকে তৈরি হয়েছে তাঁর ৭৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘অ্যান্ড, টুয়ার্ডস হ্যাপি অ্যালিজ়’। ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেটপ্যাক বিভাগে দেখানো হবে শ্রীময়ীর ছবিটি।

Kolkata filmmaker Sreemoyee Singh’s documentary film And, Towrads Happy Alleys will be shown in KIFF 2023.

শ্রীময়ী সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।

তবে চলচ্চিত্র উৎসব চত্বর এই ছবির জন্য নতুন নয়। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৮টি চলচ্চিত্র উৎসব ঘোরা হয়ে গিয়েছে ‘অ্যান্ড, টুয়ার্ডস হ্যাপি অ্যালিজ়’-এর। তার মধ্যে রয়েছে বার্লিন, মামি, ধর্মশালার মতো চলচ্চিত্র উৎসবগুলিও। দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ইউকে, ডেনমার্কের মতো বহু দেশে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর ছবি। তবে প্রথম যখন ইরান গিয়েছিলেন, তখন পূর্ণদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রের কথা প্রথমে ভাবেননি। তবে তিনি জানতেন, সংবাদমাধ্যমে ইরানের যে চিত্রটা তুলে ধরা হয়, সিনেমায় তাঁর চেয়ে অনেকটা অন্য রকম ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু বাস্তবে সেটা কেমন, তা জানার ইচ্ছা থেকেই তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্সি ভাষা শেখার আবেদন করেছিলেন। দেখতে চেয়েছিলেন, যে দেশে ‘সেন্সরশিপ’ এত কড়া, সেখানে পরিচালকেরা ছবি তৈরি করার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে জুটিয়ে ওঠেন, তা নিয়ে কৌতূহল বরাবরই ছিল। তিনি জানতেন, একটি ক্যামেরা নিয়ে তাঁকে যেতেই হবে। কারণ, ‘শোষক’ এবং ‘শোষিত’-র বাইরেও একটি ইরান নিশ্চয়ই রয়েছে। যে ইরানটা কখনও কেউ নথিভুক্ত করেননি। তাই সেই কাজটি তাঁকে করতেই হবে, সেই ইচ্ছা যথেষ্ট দৃঢ় ছিল শ্রীয়মীর মধ্যে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম কয়েক দিন ইরানে গিয়ে আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন একটি ইরানিয়ান ছবিতে ঢুকে পড়েছি। তাই ক্যামেরা নিয়ে সব কিছুই শুট করছিলাম। আমার ছবির প্রথম কয়েক মিনিট দেখলেই বোঝা যায়, আমি একদম ‘অবসার্ভেশনাল মোড’-এ শুট করছি। কিন্তু হঠাৎ এক দিন একটি মেয়ে বাসে আমায় থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘তুমি কি আমায় শুট করছ? এখনই বন্ধ করো’। সে দিন বুঝেছিলাম, আমি চুপচাপ শুধু পর্যবেক্ষণ করে যেতে পারি না। আমায় সকলের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ভাষাটা আরও ভাল করে শিখতে হবে। তাই শিখে ফেলি। আর ধীরে ধীরে বহিরাগত থেকে আমি ‘অন্দরের লোক’ হয়ে উঠতে পেরেছিলাম। ফার্সি বলা বিদেশি খুব তো দেখা যায় না। তাই আমার সঙ্গে কথা বলতে অনেকেই উৎসাহ পায়।’’

একাধিক বার ইরান গিয়েছিলেন শ্রীময়ী। নিত্য জীবনে হাজার বাধা-নিষেধ সত্ত্বেও ইরানের মানুষ কী করে নিজের জন্য মুহূর্তের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে সসম্মানে বাঁচছেন তাই দেখিয়েছেন নিজের তথ্যচিত্রে। তাঁর ছবিতে উঠে এসেছে বিভিন্ন পরিচালকের কথা। তাঁরা কী করে ছবি করছেন, কী ভাবে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন, সবই খোঁজ নিয়েছেন শ্রীয়মী। পৌঁছে গিয়েছিলেন জ়ফর পানাহির বাড়িতেও। যে বাড়িতে তিনি ঘরবন্দি ছিলেন বহু বছর। তা সত্ত্বেও নিজের মতো ঠিক ছবি করে গিয়েছেন।

Kolkata filmmaker Sreemoyee Singh’s documentary film And, Towrads Happy Alleys will be shown in KIFF 2023.

শ্রীয়মী সিংহের তথ্যচিত্র ‘অ্যান্ড, টুয়ার্ডস হ্যাপি অ্যালিজ়’-এর একটি দৃশ্যে পরিচালক জাফর পানাহি।। ছবি: সংগৃহীত।

তবে গত এক বছর ধরে যে ইরানের পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে তা নিয়ে ব্যথিত শ্রীয়মী। মাসা আমিনির হত্যার পর থেকে তেমন ঘটনা বার বার ঘটেছে। কিছু খবর পাওয়া গিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। বাকি হয়তো পাওয়াও যায়নি। শ্রীময়ী বললেন, ‘‘এখন ইরানে মানুষ যে পরিস্থিতিতে বেঁচে রয়েছেন, আমি তাঁর পূর্ব ঘটনাগুলি নিজে চোখে দেখেছি। কোন পরিবেশে থাকতে থাকতে মানুষের মনে এমন ক্ষোভ জমে এবং তাঁরা বিদ্রোহ করে ওঠে, তা আমি চোখে দেখেছি। বাসে, ট্যাক্সিতে, তেহরানের রাস্তায়— প্রচুর মানুষের সঙ্গে মিশেছি। এবং বুঝেছি তিল তিল করে কী করে তাঁদের মনে এই রাগগুলো জমা হচ্ছিল।’’

‘অ্যান্ড, টুয়ার্ডস হ্যাপি অ্যালিজ়’ ৮ ডিসেম্বর শিশির মঞ্চে দেখানো হবে। রবিরার দেখানো হবে রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে। সিনেমার সঙ্গে শ্রীয়মীর গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতেও কি তিনি তথ্যচিত্রই বানাতে চাইবেন? ‘‘অবশ্যই। আমার মনে হয়, আমাদের দেশে এখনও তথ্যচিত্রকে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। প্রত্যেকটা ফেস্টিভ্যালে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। কিন্তু খুব ভাল স্ক্রিনিং কোয়ালিটির হল পাওয়া যায় না। বা খুব বড় হলে কখনওই প্রদর্শন করার সুযোগ মেলে না। আশা করি, আর কয়েক বছরে পরিস্থিতি বদলাবে। আমার ব্যক্তিগত গল্প বলতে ভাল লাগে। আর তথ্যচিত্রের চেয়ে আর কী ভাবেই বা ব্যক্তিগত গল্প খুব গভীরে গিয়ে বলা সম্ভব?’’

অন্য বিষয়গুলি:

KIFF Kiff 2023 Kolkata International Film Festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy