ফাইল ছবি
ভারতীয় জনপ্রিয় সঙ্গীতের অঙ্গনে সর্বকালের অন্যতম সেরা শিল্পী কিশোর কুমার। দেখতে দেখতে তাঁর আরও একটা জন্মদিন চলে এল। তাঁর উদাত্ত কণ্ঠের মায়ায় আজও মুগ্ধ ভারতবাসী। আনন্দের গানে যেমন মাতিয়ে দিয়েছেন, তেমনই দুঃখের গানে কাঁদিয়েছেন মানুষকে। অস্থির, ছটফটে স্বভাব ছিল তাঁর। নিজের ভেতরে যেন বহন করতেন এক দস্যি শিশুকে! তাঁর আজব কাণ্ড-কারখানার গল্প আজও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। কখনও মঞ্চে গান গাইতে গাইতে ডিগবাজি। কখনও গান রেকর্ডিংয়ের সময় অঙ্গভঙ্গি করে হাসিয়ে দিচ্ছেন সহশিল্পীকে। বাইরে থেকে আমুদে এবং কিছুটা খাপছাড়া স্বভাবের এই মানুষটার হৃদয় ছিল কিন্তু অত্যন্ত মানবিক। তারই একটি প্রমাণ পাওয়া যায় দেশে জরুরি অবস্থা জারির সময় তাঁর জেদি অবস্থানে।
১৯৭৫ সালের জুন মাস। জরুরি অবস্থা জারি করলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। বিতর্কে উত্তাল দেশ। জরুরি অবস্থার পক্ষে খ্যাতিমান মানুষদের সমর্থন জোগাড়ে সচেষ্ট সরকার। বম্বে (তখনও 'মুম্বই' হয়নি) চলচ্চিত্র জগতের নায়ক-গায়করা আমজনতার নয়নের মণি। তাই এই জগতে নজর পড়ল। অনেকের সমর্থন আদায় করা গেল। কিন্তু বিপক্ষে থেকে গেলেন কিছু মানুষ। মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব তাঁরা। নানা হয়রানির মুখোমুখি হয়েও বশ মানেননি। এই মানুষদেরই একজন কিশোর কুমার। রাজনীতির মানুষ না হয়েও শিল্পীসুলভ অনমনীয় জেদে ক্ষমতাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন তিনি।
অনুষ্ঠানের জন্য উদ্যোক্তারা এলে তিনি মঞ্চের মাপ জানতে চাইতেন। মঞ্চ দরকার বড় মাপের। কারণ ছোটাছুটি করে সংগীত পরিবেশন করতেন তিনি। হৃদয়ের মাপও বড় ছিল এই কিংবদন্তি শিল্পীর। নিজের জগতে তিনি সম্রাট। নির্ভীক। জরুরি অবস্থার সময়ে মুম্বইয়ে সরকারি দলের একটি পদযাত্রার অনুষ্ঠানে অংশ না নিয়ে ক্ষমতাবান অনেকের বিরাগভাজন হতে তিনি ভয় পাননি। এর পর আসল কাণ্ড। জরুরি অবস্থা চালুর পর ‘বিশ দফা কর্মসূচি’র সমর্থনে অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে এক প্রচার-অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়। প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার গান। জনপ্রিয় গায়ক হিসেবে কর্তৃপক্ষ কিশোর কুমারকে আহ্বান করেন। কিশোর কুমার তাঁর অসম্মতি জানান। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তাঁকে ফোন করা হয়। তাঁর বাড়ি যেতে চান আধিকারিকরা। কিশোর কুমার বাড়ি আসতেও নিষেধ করেন তাঁদের। আধিকারিকরা মন্ত্রকের উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে কিশোর কুমারের মনোভাবের কথা জানান। সে সময় কেন্দ্রে তথ্য ও সম্প্রচার দফতরের মন্ত্রী ছিলেন বিদ্যাচরণ শুক্লা। তিনি কিশোর কুমারের উপর রুষ্ট হন। দূরদর্শন ও আকাশবাণী-তে কিশোর কুমারের গান ও সিনেমার সম্প্রচার বন্ধ করার আদেশ দেওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে। এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল জরুরি অবস্থার শেষ দিন পর্যন্ত।
মনে রাখতে হবে, সেই সময় দূরদর্শন ও আকাশবাণীই ছিল সব থেকে শক্তিশালী গণমাধ্যম। প্রভূত ক্ষতি হলেও কিশোরকুমার মানুষের স্বাধীনতার পক্ষেই ছিলেন। শোনা যায়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের পক্ষে গানটি গাওয়ার জন্য যিনি কিশোর কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁকে কিশোর কুমার বলেন, “এই গান কেন আমাকে গাইতে হবে?” উত্তরে সেই দূত তাঁকে বলেছিলেন, “মন্ত্রী চাইছেন, তাই আপনাকে গাইতে হবে।” এই ক্ষমতা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন কিশোর কুমার। নিষিদ্ধ করেও তাঁকে কব্জা করা যায়নি।
অর্থ-যশ-কীর্তি-রক্তচক্ষুর উপর যে-কোনও সময় তুড়ি দিয়ে এই শিল্পী তাই আপন আহ্লাদে গাইতে পারেন, 'ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব...'
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy