Kishore Kumar's Colourful Personal Life Was Lonely too dgtl
bollywood
কথা বলতেন গাছের সঙ্গে, চার বারের দাম্পত্যেও নিঃসঙ্গ কিশোর কুমার লুকিয়ে রাখতেন মনের বিষণ্ণ কোণ
এর পর কিশোর তাঁর গায়কিতে পাশ্চাত্য প্রভাব আনেন। মার্কিন শিল্পী জিমি রজার্স এবং নিউজিল্যান্ডের গায়ক টেক্স মর্টনের গান শুনে নিজের গায়কিরও সঙ্গী করে নেন ইয়োডলিংকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ১৬:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
প্রথাগত তালিম ছাড়াই হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। ‘বিস্ময়’ শব্দটা তাঁর জীবনেরই সমার্থক। তিনি কিশোর কুমার। জন্মবার্ষিকীতে সেই কিংবদন্তির জীবনের কিছু জানা-অজানা তথ্যে এক ঝলক ফিরে দেখা।
০২২২
আইনজীবী কুঞ্জলাল গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী গৌরীদেবীর ছোট ছেলে আভাসকুমারের জন্ম ১৯২৯-এর ৪ অগস্ট। ব্রিটিশ ভারতের সেন্ট্রাল প্রভিন্সের (আজকের মধ্যপ্রদেশ)-এর খণ্ডোয়া অঞ্চলে। সেখানে এক সম্পন্ন পরিবারের ব্যক্তিগত আইনজীবী হয়ে কর্মরত ছিলেন কুঞ্জলাল।
০৩২২
কিশোর কুমার যখন ছোট, তখনই তাঁর দাদা অশোক কুমার হিন্দি সিনেমার প্রতিষ্ঠিত তারকা। অভিনয় শুরু করেছিলেন আর এক দাদা অনুপকুমারও। অশোককুমার চেয়েছিলেন তাঁর মতো ভাইও অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করুন। কিন্তু অভিনয় নিয়ে আভাস আদৌ সিরিয়াস ছিলেন না।
০৪২২
অভিনয়ের বদলে আভাস প্রথমে কেরিয়ার শুরু করলেন বম্বে টকিজ-এর কোরাস শিল্পী হিসেবে। বিনোদন দুনিয়ায় পা রেখে তিনিও দুই দাদার মতো নিজের নাম পরিবর্তন করলেন। আভাসকুমার গঙ্গোপাধ্যায় থেকে হলেন কিশোর কুমার।
০৫২২
অশোককুমারের জন্মগত নাম ছিল কুমুদলাল গঙ্গোপাধ্যায় এবং অনুপকুমার ছিলেন কল্যাণকুমার গঙ্গোপাধ্যায়। দাদা অশোককুমারের ছবি ‘শিকারি’-তে প্রথম বার ১৯৪৬ সালে অভিনয় করেন কিশোরকুমার। ১৯৪৮ সালে ‘জিদ্দি’ ছবিতে প্রথম বার প্লেব্যাক করেন তিনি।
০৬২২
কেরিয়ারের প্রথম লগ্নে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ অবধি মোট বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে বেশির ভাগই ফ্লপ করেছিল বক্স অফিসে।
০৭২২
এরপর ‘নকরি’, ‘চার প্যায়সে’ ‘বাপ রে বাপ’ ছবির সাফল্য তাঁকে অভিনয়ের প্রতি আগের তুলনায় বেশি আগ্রহী করে তোলে। তবে তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিল সঙ্গীতের প্রতি ভালবাসা-ই।
০৮২২
কে এল সায়গল এবং পাকিস্তানি শিল্পী আহমেদ রুশদির প্রভাব ছিল কিশোর কুমারের উপর। এক ঘরোয়া আড্ডায় এস ডি বর্মন তাঁকে পরামর্শ দেন নিজস্ব গায়কি তৈরি করতে। এর পর কিশোর তাঁর গায়কিতে পাশ্চাত্য প্রভাব আনেন। মার্কিন শিল্পী জিমি রজার্স এবং নিউজিল্যান্ডের গায়ক টেক্স মর্টনের গান শুনে নিজের গায়কিরও সঙ্গী করে নেন ইয়োডলিংকে।
০৯২২
ক্রমে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজেশ খন্না, জিতেন্দ্র, দেব আনন্দ, অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠ হয়ে ওঠেন কিশোর কুমার। সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত পরিচালনায় ‘হাফ টিকিট’ ছবিতে নারী ও পুরুষ, দ্বৈত ভূমিকার কণ্ঠে তাঁর গান বাজিমাত করে।
১০২২
জীবনে কোনওদিন আপসের পথে পা রাখেননি কিশোর কুমার। জরুরি অবস্থার সময়ে তাঁর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় কংগ্রেসের। রাজনৈতিক দলের শর্তে রাজি হননি তিনি। তার মাসুলও তাঁকে দিতে হয়েছিল। ১৯৭৬ থেকে জরুরি অবস্থা শেষ হওয়া অবধি অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো এবং দূরদর্শন ছিল কিশোর কুমারের কণ্ঠহীন।
১১২২
খামখেয়ালি আচরণ ছিল কিশোর কুমারের বর্ণময় জীবনের অঙ্গ। তাঁর বাড়ির সামনে বোর্ড লাগানো ছিল। যেখানে ইংরেজিতে যা লেখা থাকত, তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘কিশোর কুমার হইতে সাবধান’। বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অনেকেই আজব ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন।
১২২২
শোনা যায়, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় প্রথমে ভেবেছিলেন ‘আনন্দ’ ছবিতে কিশোর কুমার এবং মেহমুদকে নেবেন। কিন্তু মনোমালিন্যের জেরে তাঁর প্রস্তাবে রাজি হননি গায়ক-অভিনেতা। পরে হৃষিকেশ তাঁর ছবিতে নেন অমিতাভ বচ্চন এবং রাজেশ খন্নাকে।
১৩২২
বাংলা, হিন্দি, মরাঠি, গুজরাতি, অসমিয়া, মালয়লম, ওড়িয়া, ভোজপুরি এবং কন্নড়-সহ বহু ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন কিশোর।
১৪২২
কিশোর কুমারের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রুমা গুহ ঠাকুরতা ( তখন রুমা দেবী)। ১৯৫০-৫৮, আট বছর স্থায়ী হয়েছিল তাঁদের দাম্পত্য। ১৯৫২ সালে জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র সন্তান, অমিতের।
১৫২২
রুমার সঙ্গে বিচ্ছেদের আগেই মধুবালার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কিশোর কুমার। ১৯৬০ সালে তিনি বিয়ে করেন নায়িকাকে। কিন্তু গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার এই বিয়ে মেনে নেয়নি।
১৬২২
কিশোর কুমার এবং মধুবালার দাম্পত্য সুখের হয়নি। শোনা যায়, বিয়ের এক মাস পরেই গুরুতর অসুস্থ মধুবালা ফিরে যান তাঁর নিজের বাংলোয়। ১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন মধুবালা। অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে শেষ দিকে যোগাযোগ রাখেননি কিশোর কুমার।
১৭২২
যোগিতা বালির সঙ্গে শিল্পীর তৃতীয় স্থায়ী হয়েছিল মাত্র দু’ বছর। শোনা যায়, মিঠুন চক্রবর্তীর প্রেমে পড়েই কিশোর কুমারের কাছ থেকে দূরে সরে আসেন যোগিতা। এর ফলে চরমে ওঠে কিশোর কুমারের সঙ্গে মিঠুনের বিরোধ। মিঠুনের জন্য নাকি গান-ই গাইতে অস্বীকার করেছিলেন কিশোর। ফলে বাপি লাহিড়ীর যাত্রাপথ অনেকটাই সুগম হয়।
১৮২২
যদিও ত্রিকোণ প্রেমের এই ঘটনা কোনওদিন স্বীকার করেননি কিশোর কুমার। তিনি বলতেন, যোগিতার সঙ্গে দাম্পত্য ছিল যেন নিছক রসিকতা। তাঁর কথায়, যোগিতা কোনওদিন নিজের বাড়ি ছেড়ে এসে তাঁর সঙ্গে সংসার করতে প্রস্তুত ছিলেন না।
১৯২২
যোগিতার সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদের পরে কিশোরকুমার বিয়ে করেন নায়িকা লীনা চন্দভরকরকে, ১৯৮০ সালে। দু’বছর পরে জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র ছেলে সুমিতের।
২০২২
লীনার প্রথম স্বামী সিদ্ধার্থ তাঁদের মধুচন্দ্রিমার দিনই এক দুর্ঘটনায় নিজের বন্দুকের গুলিতে আহত হন। এক বছর চিকিৎসা চলার পরে তিনি প্রয়াত হন। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত লীনা তাঁর আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলেন বয়সে ২১ বছরের বড় কিশোর কুমারের মধ্যে।
২১২২
কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে চিরকালের জন্য যেন কেটে গেল সুরের ছন্দ। দিনটা ছিল ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর। সকাল থেকেই কিশোর কুমার বলছিলেন, তাঁর দুর্বল লাগছে। উদ্বিগ্ন লীনা ডাক্তারকে খবর দিতে চান। এর পরেও মজা করে কিশোর কুমার বলেন, “তুমি যদি ডাক্তারকে খবর দাও, আমার কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হবে!” এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা।
২২২২
প্রয়াণের তিন দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে এখনও তাঁর হাত ধরেই বলিউড চিরকিশোর। কিন্তু বর্ণময় জীবনেও বার বার নিঃসঙ্গ হয়েছেন তিনি। এক বার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তাঁর কোনও বন্ধু নেই। তাই নাকি গাছের সঙ্গে কথা বলতেন। মনের সেই বিষণ্ণ কোণকে সযত্নে সবার অগোচরে রাখতে তিনি ছিলেন জুড়িহীন।