প্রতিবাদ মিছিলে হাসি! গর্জে উঠলেন কৌশিকী চক্রবর্তী। গ্রাফিক : শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে দফায় দফায় পথে নামছেন শিল্পীরা। সোমবার সন্ধ্যায়, শহরে প্রতিবাদ মিছিল করেন সঙ্গীতশিল্পীরা— ‘সব শিল্পীর এক স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর’। দক্ষিণ কলকাতার একটি প্রথম সারির স্কুল থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত প্রতিবাদী মিছিলে হাঁটেন রূপম ইসলাম, ইমন চক্রবর্তী, অনুপম রায়, লোপামুদ্রা মিত্র, কৌশিকী চক্রবর্তী, কল্যাণ সেন বরাট, মনোময় ভট্টাচাৰ্য, অন্তরা চৌধুরী, শুভমিতা চক্রবর্তী, রূপঙ্কর, অন্বেষা দত্তগুপ্ত-সহ টলিপাড়ার গানের জগতের শিল্পীরা। সেই প্রতিবাদ মিছিলের বেশ কিছু ভিডিয়ো ভাইরাল নেটপাড়ায়। একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, শিল্পীরা প্ল্যাকার্ড হাতে হাঁটছেন। বিচার চাইছেন আরজি কর-কাণ্ডের। কিন্তু কয়েক জন শিল্পীকে দেখা যায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন, এমনকি কোনও কথায় হেসেও ফেলছেন। তা দেখেই শুরু হয় সমালোচনা। শুধু নেটাগরিকেরা নন, টলিপাড়ার শিল্পীদের একাংশও শামিল এই সমালোচনায়। এরই পাশাপাশি সমালোচনা হচ্ছে সঙ্গীতশিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী সাজপোশাক, কানের দুল নিয়েও। তার পরেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন কৌশিকী। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে কৌশিকীর সাফ কথা, “আমার সাজপোশাক, কিংবা একটা আড়াই ঘণ্টার মিছিলে কেউ হেসে থাকলে, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী নই।”
গায়িকা একই ভাবে ক্ষুব্ধ, মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে রাত্রিকালীন প্রতিবন্ধকতা নিয়েও। আরজি কর-কাণ্ডের জেরে রাতে মহিলাদের নিরাপত্তা বিধানে কয়েক দফা নীতির কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। তারই একটি দফায় বলা হয়েছে, রাতের কাজ থেকে যথাসম্ভব অব্যাহতি দিতে হবে মহিলাদের। কিন্তু নারী হিসেবে এই লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন কৌশিকী।
পাশপাশি শিল্পীদের এই প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁদের উদ্দেশেও কৌশিকী বলেন, “সোমবার যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরা আড়াই ঘণ্টা হেঁটেছেন। কল্যাণ সেন বরাট অসুস্থ শরীর নিয়ে হেঁটেছেন। কাউকে একটু দাঁড়াতে হয়েছে। কারও চেনা-পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কেউ চা খেয়েছেন। আড়াই ঘণ্টা একসঙ্গে এতগুলো মুখ, যাঁরা একে অপরের পরিচিত, তাঁরা রাস্তা দিয়ে হাঁটলে রোবট হয়ে হাঁটতে পারবেন না নিশ্চই!”
আরজি কর-কাণ্ডে বিরল ভাবে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নেমেছেন সকলে। একই ভাবে সামান্য কোনও বিষয় নিয়েও শুরু হয়েছে সমালোচনার। এই প্রসঙ্গে কৌশিকী বলেন, “আসলে সমাজমাধ্যমটা এখন পাড়ার চায়ের দোকানের মতো হয়ে গিয়েছে। সকলেই সকলের নামে সমালোচনা করতে আসেন এখানে।” নিজের সাজপোশাক নিয়ে কৌশিকী বলেন, “আমি একটি অনুষ্ঠান থেকে প্রতিবাদ মিছিলে গিয়েছিলাম। মাথায় আসেনি যে কানের দুলটা না খুলে মিছিলে হাঁটলে তা অন্যায় হয়ে যাবে। আর মিছিলে কেউ যদি হেসে থাকেন, তা হলেও কোনও অন্যায় দেখি না। তাঁরা তো মানুষ! এই মানুষগুলোই চেয়েছিলেন স্পষ্ট একটা বার্তা যাক কর্তৃপক্ষের কাছে। আমাদের অধিকার, আমাদের আওয়াজটা পৌঁছানো দরকার ছিল। তার বদলে কে জল খেয়েছেন, কে হেসেছেন সেটা যাঁরা দেখতে পেয়েছেন তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইতে পারব না।”
সমালোচকদের একাংশ শিল্পী। এ প্রসঙ্গে কৌশিকী বলেন, “শিল্পী হলেও আমরা মানুষ তো। আমরা বাঙালি। ছোটবেলা থেকে বাঙালি ও কাঁকড়ার একটা গল্প শুনেছি। তেমনই কিছু একটা ঘটনা হয়তো এটা। তবে যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁরা আমাদের সঙ্গে পথে নামলে খুশি হতাম।”
কিন্তু যে কৌশিকী চক্রবর্তী তাঁর এত বছরের সঙ্গীতজীবনে সে ভাবে কোনও রাজনৈতিক আর্দশ প্রকাশ্যে আনেননি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেননি. কোন তাগিদে এ বার পথে নামলেন তিনি? গায়িকা জানান, শুধু এই শহর, রাজ্য নয়, এই দেশ, পৃথিবীতে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে নারী এবং সমস্ত শ্রেণির মানুষ স্বাধীন ভাবে, নির্ভয়ে বাঁচতে পারেন। সামান্য এই দাবি পূরণের জন্য পথে নামতে হচ্ছে বলেই তাঁর লজ্জা লাগছে বলেও জানিয়েছেন। কৌশিকী বলেন, “এই শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমাকে দাবি করতে হচ্ছে, আন্দোলন করতে হচ্ছে যাতে লিঙ্গের বিচার না করে আমাকে কাজ দেওয়া হয়। মেয়ে বলে সারা পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন আমি। যাঁকে কিছু ক্ষণের জন্য খাঁচা থেকে বের করা হয়। তার পর সময়ের মধ্যে খাঁচায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় অ্যালার্ম দিয়ে! আর এমনই যদি হয়, তবে এমন সমাজের অংশ হতে আমি পারব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy