Kamini Kaushal Refused Dilip Kumar For The Sake of Her Expired Elder Sister’s Daughters dgtl
bollywood
মহানায়কের প্রেম ফিরিয়ে দেন বোনঝিদের মুখ চেয়ে, চল্লিশের দশকে বিদেশে সম্মানিত হন এই নায়িকা
কিছুটা বাধ্য হয়েই বিয়ে করেছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন কামিনীর দিদি। তাঁর দুই মেয়ে কুমকুম, কবিতা তখন শিশু। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে কামিনী বিয়ে করেন তাঁর প্রয়াত দিদির স্বামী বি কে সুদ-কে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০৯:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
পুতুলখেলার বদলে তিনি ব্যস্ত থাকতেন ঘোড়ায় চড়তে, স্কেট করতে এবং আকাশবাণীতে বেতার-নাটকে অংশ নিতে। অভিনেত্রী কামিনী কৌশলের শৈশব ও কৈশোর ছিল বাকিদের থেকে আলাদা।
০২২৫
অবিভক্ত ভারতের লাহৌরে তাঁর জন্ম ১৯২৭ সালের ১৬ জানুয়ারি। জন্মগত নাম ছিল উমা কশ্যপ। তাঁর বাবা ছিলেন নামী উদ্ভিদবিজ্ঞানী। অধ্যাপনা করতেন পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে।
০৩২৫
মাত্র সাত বছর বয়সে পিতৃহারা হন কামিনী। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবথেকে ছোট।
০৪২৫
তার পর অবশ্য তাঁর জীবনের ছন্দ থেমে থাকেনি। লাহৌরের কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন তিনি।
০৫২৫
১৯৪৬ সালে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ। চেতন আনন্দ তাঁকে ‘নীচা নগর’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। অল্পস্বল্প অভিনয় অবশ্য তার আগে থেকেই করেছিলেন তিনি।
০৬২৫
লাহৌর রেডিয়োতে তিনি শিশুশিল্পী হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। পরে দিল্লিতে অভিনয় করেন মঞ্চে। তাঁর বাবা নিজে উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসাবে ৫০টি বইয়ের লেখক হলেও কোনওদিন মেয়ের এই শখে বাধা দেননি।
০৭২৫
চেতন আনন্দ এবং তাঁর স্ত্রী উমাকে কলেজজীবন থেকেই চিনতেন কামিনী। প্রসঙ্গত উমা নিজেও ‘নীচা নগর’-এর এক জন অভিনেত্রী ছিলেন। দুই উমা-য় যাতে সমস্যা না হয়, চেতন নতুন নাম নিতে বললেন নবাগতাকে।
০৮২৫
নবাগতা উমা কাশ্যপ এ বার চেতনকেই অনুরোধ করলেন তাঁকে নতুন নাম বেছে দেওয়ার জন্য। বললেন, ‘ক’ দিয়ে নাম রাখতে। কারণ তাঁর দিদির দুই মেয়ের নাম ছিল ‘ক’ দিয়েই। ছোট থেকেই তারা ছিল মাসি-অন্ত প্রাণ। চেতন এ বার নবাগতা নায়িকার নাম রাখলেন ‘কামিনী’। রয়ে গেল সেই পরিচয়ই।
০৯২৫
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘নীচা নগর’ চূড়ান্ত প্রশংসিত হয়। কান চলচ্চিচত্র উৎসবে ‘পাম দি’ওর’ পায় ছবিটি। দর্শক ও চলচ্চিত্র সমালোচক, দুই মহলেই সমাদৃত হয় কামিনীর অভিনয়।
১০২৫
এর পর কামিনী আবার লাহৌরে ফিরে যান। তাঁর কাছে প্রচুর অভিনয়ের সুযোগ আসতে থাকে। তিনি মুম্বই (তখন বম্বে) এসে শুটিং করে আবার লাহৌর ফিরে যেতেন।
১১২৫
কেরিয়ারের শুরুতে যখন ধীরে ধীরে পরিচিত পাচ্ছেন, তখনই বিয়ে করে নেন কামিনী। কিছুটা বাধ্য হয়েই বিয়ে করেছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন কামিনীর দিদি। তাঁর দুই মেয়ে কুমকুম, কবিতা তখন শিশু। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে কামিনী বিয়ে করেন তাঁর প্রয়াত দিদির স্বামী বি কে সুদ-কে।
১২২৫
বি কে সুদ ছিলেন বম্বে পোর্ট ট্রাস্টের উচ্চপদস্থ ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ের পরে স্বামীর কর্মস্থলই হল কামিনীর নতুন ঠিকানা। মুম্বইয়ে থাকার ফলে শুটিংয়ের কাজেও সুবিধে হয় কামিনীর।
১৩২৫
কামিনী ছিলেন সেই নায়িকাদের মধ্যে এক জন, যিনি প্রথম থেকেই কেরিয়ারের পাশাপাশি সংসারও সামলেছিলেন। তা ছাড়া নিজের সময়ে তিনি ছিলেন উচ্চশিক্ষিত অভিনেত্রী।
১৪২৫
মুম্বইয়ে এসে কামিনী ভরতনাট্যম-এর প্রশিক্ষণ নেন। সমসাময়িক প্রথম সারির সব নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। এমনকি, অশোককুমার ছাড়া বাকি নায়কদের ক্ষেত্রে কামিনীর নাম-ই টাইটেল কার্ডে আগে লেখা হত। তার পরে আসত নায়কের নাম।
১৫২৫
১৯৪৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জিদ্দি’। কামিনীর বিপরীতে ছিলেন দেব আনন্দ। বক্স অফিসে সুপারহিট হওয়ার পাশাপাশি আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক আছে এই ছবির। তা হল, এই ছবিতে প্রথম বার নায়িকার জন্য প্লে ব্যাক করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
১৬২৫
তার আগে লতা গাইতেন পার্শ্বনায়িকাদের জন্য। নায়িকাদের লিপে থাকত শামসাদ বেগম বা সুরিন্দর কৌরের মতো শিল্পীদের গান। ‘জিদ্দি’ -তে প্রথম ডুয়েট করেন লতা-কিশোর।
১৭২৫
কামিনীর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘ দো ভাই’, ‘আগ’, ‘শহিদ’, ‘পাগড়ি’, শবনম’, ‘আরজু’, ‘শাহেনশা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘নাইট ক্লাব’, ‘জেলর’ এবং ‘ব্যাঙ্ক ম্যানেজার’। কেরিয়ারের প্রথম দিকের এই ছবিগুলিতে তিনি ছিলেন নায়িকা।
১৮২৫
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নায়িকা থেকে চরিত্রাভিনেত্রীর ভূমিকাতেও পা রাখতে দ্বিধা করেননি কামিনী। কেরিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধে ‘ শহিদ’ ( ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত), ‘উপকার’, ‘পুরব অউর পশ্চিম’, ‘সন্ন্যাসী’, ‘শোর’, ‘রোটি কাপড়া অউর মকান’, ‘দশ নম্বরি’, ‘আনহোনি’, ‘প্রেমনগর’, ‘মহা চোর’ এবং ‘দো রাস্তে’-এর মতো ছবিগুলিতে কামিনী নিজের প্রতিভার ছাপ রাখেন চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবেও।
১৯২৫
সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন টেলিভিশনেও। দূরদর্শনের তাঁর পুতুলনাচের শো জনপ্রিয় হয়েছিল। বেসরকারি চ্যানেলে জনপ্রিয় ‘শান্নো কি শাদি’ ধারাবাহিকে প্রবীণা কামিনী কৌশল ধরা দিয়েছিলেন নতুন রূপে। ব্রিটিশ টেলিভিশনের ‘দ্য জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন’ সিরিয়ালে তিনি ছিলেন ‘আন্ট শালিনীর’ ভূমিকায়।
২০২৫
কয়েক দশকের বিস্তৃত কেরিয়ারে প্রেম এসেছিল কাজের হাত ধরেই। ছবিতে দিলীপকুমারের সঙ্গে কামিনী কৌশলের জুটি ছিল জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে।
২১২৫
সেলুলয়েড-বন্দি না থেকে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনেও পা রেখেছিল প্রেম। দিলীপকুমার এবং কামিনী দু’জনেই স্বীকার করেছেন তাঁদের সম্পর্কের কথা। এও জানিয়েছেন, প্রেম ভেঙে যাওয়ার পরে মানসিক ভাবে দু’জনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
২২২৫
দিলীপকুমারের প্রস্তাবে সাড়া দিতে পারেননি কামিনী। কারণ তিনি তখন বিপত্নীক বি কে সুদের দ্বিতীয় পক্ষের ঘরনি। মাতৃহীন দুই বোনঝির দায়িত্ব থেকেই সম্পর্ক থেকে পিছিয়ে আসেন তিনি।
২৩২৫
প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিয়ে সংসারকে অবহেলা করার সিদ্ধান্তকে সমীচীন বলে মনে হয়নি কামিনীর। দিলীপকুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা অজানা ছিল না স্বামী বি কে সুদের কাছেও। কিন্তু তিনি রুষ্ট হননি। কামিনী পরে বলেছিলেন, তাঁর স্বামী বুঝেছিলেন প্রেম যে কোনও সময়ে সবার জীবনেই আসতে পারে।
২৪২৫
সংসার এবং কেরিয়ার কামিনী সামলিয়েছিলেন দক্ষ হাতে। সম্পর্কের প্রভাব পড়তে দেননি ঘরোয়া জীবনে। প্রয়াত দিদির তথা নিজের স্বামীর প্রথম পক্ষের দুই মেয়ে এবং নিজের তিন ছেলের মধ্যে কোনওদিন বিভাজন করেননি। সমান স্নেহ ও যত্নে বড় করেছেন পাঁচ সন্তানকে।
২৫২৫
৯৩ বছর বয়সি কামিনী এখনও আগের মতোই ব্যক্তিত্বময়ী। বিভিন্ন দিকে সমান সক্রিয় অতীতের নামী এই নায়িকা। জীবনকে আকণ্ঠ উপভোগ করছেন নবতিপর বয়সকে উপেক্ষা করেই।