গোত্র ছবিতে মুক্তিদেবীর চরিত্রে অনসূয়া মজুমদার
‘মুখার্জিদার বউ’ থেকে একেবারে হিটলার মাসিমা! কেমন লাগছে?
একটা ছবি মুক্তির আগেই এত প্রাপ্তি! এত সাড়া! আমি খুব কৃতজ্ঞ নন্দিতা আর শিবপ্রসাদের কাছে। ‘গোত্র’ এমন একটা ছবি যা প্রাসঙ্গিকতায় অনেক মানুষের কাছে পৌঁছবে। ওঁদের ছবি মানেই কঠিন কোনও সামাজিক বার্তা সহজ করে বলা। এন্টারটেনমেন্টও থাকে। সে দিকটা যেমন ছিল তেমনই‘গোত্র’-র যা বিষয়ভাবনা তাতে যখন নিজে মুখ্য চরিত্র হয়ে কাজ করছি তখন মনে হয়েছে অভিনেতা হিসেবে সমাজের কোথাও কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারলাম।
এরকম কেন মনে হল?
এই যে আমাদের আশপাশ। ছেলেমেয়েরা খুব স্বাভাবিকভাবেই বাইরে থাকবে। পড়বে। চাকরি করবে। বৃদ্ধ বাবা-মা। কী করবেন তাঁরা? তাঁদের সহায়তা, নিরাপত্তার দায়িত্ব তো সমাজেরও।তাই কি হচ্ছে? হচ্ছে না।খবরের কাগজের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে এই মানুষগুলোর জীবনে মৃত্যুর কালো ছায়া। তাঁরা হয়তো হাঁটতে পারেন না বা ধীরে হাঁটেন, তো সেখানে তাঁদের যত্নের প্রয়োজন। আমরা ভাবছি না আর। ভাবছি আমার গায়ে আঁচ না লাগলে আমি কিছু বলছি না। এটা কিন্তু হতে পারে। কিন্তু এখানে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। তাঁরা অন্যের উপর নির্ভরশীল, তাই বলে তাঁদের মৃত্যুবরণ করতে হবে?ওই বয়স ঘিরে এত অনিশ্চয়তা কেন?এমনকি মৃত্যু! ‘গোত্র’এই অন্ধকার জায়গায় আলো ফেলবে।
‘গোত্র’-য় কাজের অফার কী ভাবে আসে?
আমি ‘মুখার্জিদার বউ’-এর ডাবিং করছিলাম। শিবপ্রসাদ ফোন করলেন। বললেন,‘ওই মাসের কয়েকটা দিন আপনি অন্য কাজ করবেন না।’আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি আর। কী চরিত্র বা গল্প। এতটাই খুশি হয়েছিলাম যে ওই ইউনিটে ওঁদের পরিচালনায় আবার কাজ করব। আসলে অভিনেতা তো একা একা তৈরি হয় না।
মানে?
‘মুখার্জিদার বউ’ বা ‘গোত্র’ ছবিতে আমার যে চরিত্র তার সঙ্গে অনসূয়ার কোনও মিল নেই। আমাকে সম্পূর্ণ ভাঙতে হয়েছে।
তারেক আলির চরিত্রে নাইজেল এবং মুক্তিদেবীর চরিত্রে অনসূয়া
এই ভাঙার জায়গা কি আপনি থিয়েটার থেকে নিয়ে এসেছেন?
হ্যাঁ, থিয়েটার থেকেই শিখেছি কো অ্যাক্টিং ইজ আ জয়। থিয়েটার শিখিয়েছে আমায়, কোনও চরিত্র করতে ভয় পাবে না।যে কোনও চরিত্র মনে করবে তোমার জন্যই লেখা। সে ছোট হোক বা বড়! ‘গোত্র’-র মুক্তিদেবী হতে সাহায্য করেছেন আমার পরিচালক নন্দিতা-শিবু। তারপর চিত্রনাট্য। তার পর আমার সহ-অভিনেতা।অভিনয় কিন্তু একা ব্যাট করার মাঠ নয়। অভিনয় করতে এসে শুধু নিজের কথা ভাবলে চলবে না। আমি আমার সহ-অভিনেতার ভাল শট দেওয়ার অপেক্ষায় থাকি। আর নিজের ভেতরে শান্তি প্রয়োজন। তবেই ক্রিয়েটিভিটি আসবে। আমায় সেটে কেউ রাগ করতে দেখেনি কখনও।
মনে হয়নি, সিনেমায় স্বীকৃতি দেরিতে এল?
আমি মৃণাল সেনের ‘মহাপৃথিবী’,গৌতম ঘোষের ‘গুড়িয়া’,বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘তাহাদের কথা’ করেছি।অপর্ণা সেনের সঙ্গেও কাজ করেছি। গোটা তিরিশেক ছবি হল। চূর্ণীর ‘তারিখ'-এ রাইমার মা করলাম। কিন্তু নন্দিতা-শিবু যে ভাবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে তুলে আনলেন তা আমার জীবনের মাইলস্টোন, আমি জীবনে এটা ভুলব না। আমাদের মতো অভিনেতাদের জন্য তো কেউ ভাবে না। ওঁরা ভেবেছে। আরও সিনিয়ররা ঠিক জায়গাটা পাবেন এরকম ভাবনার ছবি এলে।
নায়িকা হতে চাননি?
না না, আমার মধ্যে সেই ভাবনা কোনও দিন ছিল না। ওরকম ভাবনা থাকলে কেউ কাজে নিতই না আমায়।
লোকে এখন কী বলে ঘিরে ধরছে আপনাকে? মুখার্জিদার বউ নাকি মুক্তিদেবী?
দেখুন, আমি ভাবি কাজটা ঠিক করে হল কি না! লোকে ঘিরে ধরল কি না? ছবি মুক্তির পরে কী হবে সে নিয়ে ভাবি না। কাজটা ঠিক করে করার চেষ্টা করি।
অন্যরকম অনসূয়া
এই ধরনের কাজ করে এক্সপেক্টেশন কি বাড়ছে?
এক্সপেক্টেশন অনেক ছিল। সবগুলো পূর্ণ হয়নি। হয় না। এখন যে বয়সে এসেছি তাতে আই হ্যাভ টু লেট গো। আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইনা আর কিছু। এত ভাল চরিত্র পেয়েছি এই ছবিতে, এটা শুধু ভাল লাগা নয়, তৃপ্তির জায়গা। এই মুক্তিদেবী আলুথালু করে শাড়ি পরা...
আচ্ছা, এই মুক্তিদেবী কি শিবপ্রসাদের মা?
হ্যাঁ। নন্দিতা-শিবু আমাকে বলেছেন, উনি এখনও নাটক লেখেন। ওঁর মতো করে শাড়ি পরেছি। ওঁর আদলেই মুক্তিদেবীর নির্মাণ। ওই যে বলছিলাম, নন্দিতা-শিবু ওঁদের এত কাছের মানুষের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচন করেছেন আমায়! আমার এটাই প্রাপ্তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy