ভূ-স্বর্গ থেকে কলকাতায় প্রেমের টানে নিখিল।
নিখিল মাজোত্রা। কাশ্মীরী গায়ক। ভূ-স্বর্গ থেকে কলকাতায় প্রেমের টানে! বাংলায় এসেছিলেন গান শুনিয়ে হবু শ্বশুরবাড়িকে ‘ইমপ্রেসড’ করবেন বলে। আলু পোস্ত, মাছ খেয়ে বাঙালি রান্নার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ইচ্ছে, গানের অনুষ্ঠানে ‘সেরা’ হওয়া। বাংলাতেই গান-বাজনা করা। কলকাতায় ‘ঘর জামাই’ হওয়া!
প্রশ্ন: কলকাতায় স্বাগত, কেমন লাগছে নতুন শহর?
নিখিল: দারুণ লাগছে। গত তিন মাস ধরে এখানে। স্টার জলসার ‘সুপার সিজন ৩’ রিয়্যালিটি শো-এ অংশগ্রহণের দৌলতে। বাংলাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে বাংলা ভাষাকে। শিখছিও অনেক কিছু। সেটে সবাই আমায় সারাক্ষণ কিছু না কিছু শেখাচ্ছেন। আমিও যতটা পারছি চটপট শিখে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: কাশ্মীর থেকে কলকাতায় শুধুই গানের টানে?
নিখিল: (হেসে ফেলে) প্রেমিকা আর হবু শ্বশুরবাড়ির টানে। আমার প্রেমিকা বাঙালি। কলকাতায় থাকে। গানের প্রতিযোগিতায় আলাপ। তার পর প্রেম। প্রেমিকাও খুব ভাল গান গায়। ওর বাড়ির সবাইকে বশ করতে হবে। আমরা যাকে বলি ‘ইমপ্রেসড’ করা। তার জন্যই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছি।
প্রশ্ন: বাংলা গান গেয়ে দর্শকদের তো ইতিমধ্যেই ‘ইমপ্রেসড’ করে ফেলেছেন
নিখিল: বাংলা আমায় ভালবেসেছে বলে। রিয়্যালিটি শো-এর গুরু, বিচারকেরা আমায় হাতে ধরে প্রতি মুহূর্তে শেখাচ্ছেন বলে। ত্রুটি দেখলে সামনাসামনি ধরিয়ে দিচ্ছেন বলে। এবং একই ভাবে আমিও বাংলাকে ভালবেসেছি বলেই বোধহয় সব কিছু সম্ভব হচ্ছে।
প্রশ্ন: অন্য ভাষায় না দেখে গাইছেন, গাইতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে না?
নিখিল: ঈশ্বরের আশীর্বাদে এখনও যায়নি। আর সবাই পাখি পড়ার মতো করে শিখিয়ে দিচ্ছেন সব কিছু। আগে গানের কথা মুখস্থ করে নিচ্ছি। তার পর বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে অভ্যাস। শেষে মঞ্চে গিয়ে গাইছি। ছোট থেকেই যে কোনও জিনিস দ্রুত শিখে নিতে পারি। তাই হয়তো অসুবিধে হচ্ছে না।
প্রশ্ন: হঠাৎ মান্না দে-র ‘ভজহরি মান্না’ গান বাছলেন? খেতে খুব ভালবাসেন?
নিখিল: আমি খেতে প্রচণ্ড ভালবাসি। তবে তার জন্য না। একটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ওই গান আমায় দেওয়া হয়েছে। তবে এ সবের ফাঁকেই আমি কিন্তু আলু পোস্ত, মাছ খেয়েছি। কলকাতার রসগোল্লা, দই-ও। কী বলব! অসাধারণ লেগেছে। আমি প্রেমে পড়ে গিয়েছি। ওই জন্যেই বোধহয় ‘ভজহরি মান্না’ ঠিকঠাক গাইতে পেরেছি (হাসি)।
প্রশ্ন: সেই ভালবাসা থেকেই কি রান্নাঘরের সরঞ্জামকে বাদ্যযন্ত্রে পরিণত করলেন?
নিখিল: এটা আমাদের নিরীক্ষা ছিল। প্রথমে আমরা বেছেছি কি কি সরঞ্জাম বাদ্যযন্ত্র হতে পারে। তালিকায় ছিল হাতা, খুন্তি, কাঁটা চামচ। তার পর একে একে ঢুকে পড়ল ডেকচি, হাঁড়ি, প্রেসার কুকারও। গানের সঙ্গে তাদের সঙ্গত আমাদের ভাল লাগার পরে মঞ্চে উপস্থাপিত হয়েছে। সোনু নিগম এই অভিনব উপস্থাপনার খুব প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, রান্নার সরঞ্জামকে বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে একটা পুরো শো হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: ভাবনা কার?
নিখিল: চ্যানেলের। স্টার জলসা এই অভিনব ভাবনা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা সবাই খেটে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: শুধুই ভাল বলছেন! তিন মাসে কলকাতা বা রিয়্যালিটি শো-এর কোনও মন্দ চোখে পড়েনি?
নিখিল: জোর করে কী নিন্দে করি, বলুন? ‘গুরু’ এবং বিচারকেরা যা বলেন সবার সামনে বলেন। আড়ালে কেউ কিচ্ছু বলেন না। বাকি প্রতিযোগিরা ‘বন্ধু’ হয়ে গিয়েছেন। কারওর প্রতি কারওর পক্ষপাতিত্ব নেই, মনোমালিন্য নেই। খারাপ কিছু চোখে পড়লে অবশ্যই বলব।
প্রশ্ন: আপনি কোন গুরু বা বিচারকের বেশি ভক্ত?
নিখিল: গুরু নিয়ে কোনও বাছ বিচার নেই। সবাই ভাল। সবাই ভীষণ সাহায্য করেন। বিচারক কুমার শানু, সোনু নিগম, কৌশিকী চক্রবর্তীকে নিয়েও কোনও কথা হবে না। এঁদের গান শুনেই তো বড় হয়েছি। তবে তার মধ্যেও আমার দুর্বলতা সোনুজি। ওঁর গান, গলা, গায়কি অসাধারণ। এখনও সোনুজি যখন শো-এর মধ্যে গেয়ে ওঠেন, আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি।
প্রশ্ন: বাংলায় গান, কথা বলার চেষ্টা, সারাক্ষণ বাংলায় থাকা। মাতৃভাষা কি প্রবাসী হয়ে যাচ্ছে? হাঁফিয়ে উঠছেন না?
নিখিল: একেবারেই না। বাংলা শেখানোর বদলে বন্ধুরা আমার থেকে হিন্দি, কাশ্মীরী ভাষা শিখছেন। কাশ্মীর সম্বন্ধে জানছেন। ভাষা-সংস্কৃতির আদান-প্রদান হচ্ছে। ওই জন্যেই তো এখানে থাকতে এত ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: যে ভাবে বাঙালি অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় কাশ্মীর যাচ্ছেন, সখ্য গড়ে তুলছেন, কাশ্মীরী গান গাইছেন?
নিখিল: এখনও আলাপ হয়নি ওঁর সঙ্গে। ওঁর সম্বন্ধে শুনে খুব ভাল লাগছে। শীঘ্রই ওঁর সঙ্গে দেখা করব। ঠিক বলেছেন, যেখানে আদানপ্রদান থাকে সেই স্থান আপনা থেকেই ভাল লেগে যায়। নিজের দ্বিতীয় বাড়ি, শহর বলে মনে হয়।
প্রশ্ন: যে ভাবে আদা-জল খেয়ে লেগেছেন, হবু শ্বশুরবাড়ি আপনাকে মানতে বাধ্য! বাঙালি বৌকে কাশ্মীরে নিয়ে যাবেন?
নিখিল: সে সব এখনও ভাবিনি। তবে খুব ইচ্ছে, প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার। তার পর এখানেই থেকে যাব। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি। গানও গাই। এখন মনে হচ্ছে, গান ছাড়া বাঁচতে পারব না। এই শহরেই থেকে যাব। বাংলায় গান গাইব। ভাবছি ‘ঘর জামাই’ হব কলকাতার! (অট্টহাসি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy