‘আবার প্রলয়’-এর একটি দৃশ্যে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
বাইপাস সংলগ্ন এক হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে দেখা গেল তিনি একের পর এক সাক্ষাৎকার দিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে ধূমপানের জন্য কিছু ক্ষণের বিরতি চাইলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। তবে সেই অবসরেই একান্তে পাওয়া গেল তাঁকে। বললেন, ‘‘সময় নষ্ট করে তো লাভ নেই। চটপট প্রশ্ন শুরু করুন।’’
প্রশ্ন: ‘ক্যাওড়া শব্দের ইংরিজিটা ঠিক জানি না’— ‘আবার প্রলয়’-সিরিজ়ের ট্রেলারে আপনার এই সংলাপ তো ভাইরাল। সত্যিই কি এর ইংরিজি প্রতিশব্দ আপনার জানা নেই?
শাশ্বত: (প্রচণ্ড হেসে) জানি না। আরে মশাই, সব বাংলা শব্দের কি আর ইংরেজি হয়? সেটা শুধুই বাঙালির।
প্রশ্ন: দশ বছর পর আবার পর্দায় অনিমেষ দত্ত। চরিত্রটার কতটা পাল্টেছে?
শাশ্বত: সিনেমায় তো কিছুই ছিল না। একটা বা দুটো দৃশ্যে মারপিট ছিল। সিরিজ়ের ট্রেলারে যা দেখেছেন সেটা সামান্যই। অনিমেষ দত্ত এখন অনেক বেশি পরিণত। এটুকু বলতে পারি, এই সিরিজ়ের পর অনিমেষ দত্তের অনুরাগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
প্রশ্ন: পুরুলিয়া থেকে এ বারে সুন্দরবন। তার উপর ট্রেলারে আপনাকে অ্যাকশন করতে দেখা যাচ্ছে। বয়সের সঙ্গে ঝুঁকিও তো থাকে।
শাশ্বত: আমার ভাগ্য ভাল, এখনও পর্যন্ত কোনও চোট- আঘাত লাগেনি। তবে সম্ভাবনা প্রবল ছিল। কারণ, এমন এমন পরিস্থিতিতে অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিং হয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু ইউনিট সেটা খুবই ভাল ভাবে সামলেছে।
প্রশ্ন: আপনি বরাবরই বলেছেন রাজ ( চক্রবর্তী, সিরিজ়ের পরিচালক) না চাইলে অনিমেষ দত্ত তৈরি হত না।
শাশ্বত: প্রিয়া সিনেমায় হাফ টাইমের পর পর্দায় শুধু একটা জুতো দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। তাতে যা হাততালি আর উচ্ছ্বাস দেখেছিলাম সেটা রাজ চক্রবর্তী না থাকলে হত না। রাজ এক জন ‘স্টার মেকার’। আমাকে দিয়ে ও ছবিতে বা এ বার সিরিজ়ে যা যা করিয়ে নিয়েছে, সেটা ও না থাকলে হয়তো আমি কোনও দিন ভাবতে পারতাম না।
প্রশ্ন: অভিনয়ের সময় অনিমেষ দত্ত এবং শবর দাশগুপ্তকে আলাদা রাখেন কী ভাবে?
শাশ্বত: (হেসে) ওটাই তো অভিনেতার কাজ। শবর আসলে অনেকটাই মার্জিত। মদ্যপান করে না। ধূমপান করে না। খারাপ কথা বলে না। সে দিক থেকে অমিমেষ সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে।
প্রশ্ন: বলিউডে এখন ‘কপ ইউনিভার্স’-শব্দবন্ধ খুবই চর্চিত। সেখানে আপনি কিন্তু বাংলায় দুটো জনপ্রিয় পুলিশ চরিত্রে অভিনয় করে ফেললেন।
শাশ্বত: আমার ভাগ্য ভাল। এর জন্য আমি অরিন্দম (শীল, পরিচালক) এবং রাজের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, অরিন্দম চিরকালই বলেছিল, ও আমাকে নিয়েই শবর করতে চায়। রাজও আমাকে ছাড়া অনিমেষ দত্তকে নিয়ে কোনও প্রোজেক্ট করতে রাজি ছিল না।
প্রশ্ন: রাজ অনেক দিন ধরেই বাংলায় একটা ‘পুলিশ ব্রহ্মাণ্ড’ তৈরির চেষ্টা করছেন। উনি নাকি দেবের কথা ভেবেছেন। সেখানে অনিমেষ থাকবে কি না, তা নিয়ে ওঁর সঙ্গে আপনার কোনও কথা হয়েছে?
শাশ্বত: এখনও কথা হয়নি। তবে তৈরি হলে আমার কোনও আপত্তি নেই।
প্রশ্ন: পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সম্প্রতি রাজ্যের প্রশাসনিক পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। শবর বা অনিমেষের মতো পুলিশ অফিসারের কি প্রয়োজন বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে?
শাশ্বত: অবশ্যই। পাড়ায় পাড়ায় এ রকম পুলিশ অফিসারের থাকা উচিত।
প্রশ্ন: দু’জনের মধ্যে দায়িত্বটা কে ভাল পালন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে?
শাশ্বত: আমার তো মনে হয় অনিমেষ দত্ত।
প্রশ্ন: বিগত কয়েক বছরে পর পর বলিউডের কাজে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছে। বাংলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?
শাশ্বত: যখন ‘কহানি’ করেছি, তখন বাংলার কাজের জন্য মুম্বইয়ে ডেট অ্যাডজাস্ট করেছি। এখন আমি ঠিক করেছি, বাংলায় বেছে বেছে কাজ করব। যে আমাকে নিয়ে ভাববে, গল্প ভাল লাগলে আমি রাজি। তা না হলে আমি একটু বাইরের কাজেই মন দিচ্ছি। কারণ, সে ক্ষেত্রে দর্শকের বৃত্তটা বেড়ে যায়। এক জন অভিনেতা হিসাবে এই ইচ্ছার মধ্যে তো কোনও দোষ নেই। তা ছাড়া বাংলায় প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দুটো চিত্রনাট্য আমাকে ফেরত পাঠাতে হচ্ছে!
প্রশ্ন: কেন বলুন তো?
শাশ্বত: গল্প এবং চরিত্র পছন্দ হচ্ছে না তাই। যাঁদেরটা পছন্দ হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে তো কাজ করছি।
প্রশ্ন: আপনি, টোটা রায়চৌধুরী, যিশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়— সবাই যদি বাইরে চলে যান, তা হলে তো টলিউডে একটা শূন্যতা তৈরি হবে।
শাশ্বত: যাঁরা মনে করেন যে, তাঁরা বাংলা ইন্ডাস্ট্রি চালাচ্ছেন, এই ভাবনাটা তো তাঁদের মাথায় আসা উচিত। কোন ছবিতে আমি অভিনয় করব, সেটা তো প্রাথমিক ভাবে আমার উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে প্রযোজক এবং পরিচালকের উপর। তাই আমি ভেবে কী করব! কোন ছবিটা করব না, সেই সিদ্ধান্তটুকু শুধু আমার উপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন: ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’ দেখলেন?
শাশ্বত: সবে তো ছবি মুক্তি পেল। এখনও সময় পাইনি। তবে সবাই খুব প্রশংসা করছে।
প্রশ্ন: ছবিতে টোটা রায়চৌধুরী অভিনীত চরিত্রের প্রস্তাব আগে নাকি আপনার কাছে এসেছিল। কিন্তু আপনি রাজি হননি। কোনও আফসোস হয়?
শাশ্বত: না, আমি তো রাজি হইনি। কারণ, আমি নাচতে জানি না। ওরা দেড় মাসে কত্থক শেখার দাবি করে। আমি জানতাম, তালিম নিয়েও আমি পারব না। এটা ছেলেখেলার জিনিস নয়। কাজটা নেওয়ার জন্য নিয়ে পরে হতাশ করায় আমি বিশ্বাসী নই। ওরাও আমার কথা বুঝে আমার সততার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং এটাও বলেছে যে ভবিষ্যতে অন্য কোনও চরিত্রে প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন। টোটা কিন্তু আমার থেকে অনেক ভাল নাচ জানে। ওই চরিত্র সেটাই দাবি করে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি, ‘দ্য নাইট ম্যানেজার’ ওয়েব সিরিজ়ে সমকামী চরিত্রে আপনার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। এই চরিত্রে রাজি হওয়ার আগে মনে কোনও দ্বিধা ছিল?
শাশ্বত: এই প্রথম এ রকম কোনও চরিত্র পেয়েছি বলেই তো রাজি হয়েছি। আগে তো কেউ ভাবেনি। অনিল কপূর, আদিত্য রায় কপূর— ওই রকম একটা তারকাখচিত সিরিজ়! এই সুযোগ কেউ ছাড়ে নাকি।
প্রশ্ন: অনিল কপূরের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
শাশ্বত: সিরিজ়ে একটি (লবস্টারের) দৃশ্যে আমি রেগে বেরিয়ে চলে যাই। শটের পর অনিলজি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘বেঙ্গল টাইগার’। তার পর প্রথম ভাগ মুক্তির পর ওঁকে একটা মেসেজ করেছিলাম, ‘স্যর আমরা সফল’। উনি মনে হয় প্রায় ১০০টা ‘এস’ সমেত একটা ‘ইয়েস’ লিখে পাঠিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: ‘কল্কি ২৯৯৮’ ছবির টিজ়ারে আপনাকে এক ঝলক দেখা গিয়েছে।
শাশ্বত: ওইটুকুতে কিছুই বোঝা যাবে না। শুধু এটুকু বলব, ছবিতে আমার ইনট্রোডাকশন দৃশ্যটা তিন দিন ধরে শুট করা হয়েছিল। তা হলে বুঝে নিন, বাকিদের ক্ষেত্রে কী করা হতে পারে।
প্রশ্ন: পরবর্তী পর্যায়ের শুটিং কবে?
শাশ্বত: অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে আমার কোনও দৃশ্যের শুটিং হয়নি। বেশির ভাগ দৃশ্য ছিল দীপিকার (পাড়ুকোন) সঙ্গে। আগামী মাসে কমল হাসনের সঙ্গে শুটিং শুরু করব।
প্রশ্ন: দীপিকার থেকে কিছু শিখলেন?
শাশ্বত: অনেক কিছু। হায়দরাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিয়োতে আমরা শুটিং করছিলাম। সকাল ১০টা থেকে পর পর আমার শট। ও মেক আপ ভ্যানের বাইরে বসেছিল। দুপুরের দিকে আমাকে দেখেই বলল, ‘‘স্যর, আপনাকে আবার ডেকেছে! দেখুন আমাকে এখনও একবারের জন্যও ডাকল না।’’ সে দিন বিকেল ৫টায় ও শট দিতে ফ্লোরে গেল, হাসিমুখে। মুখে বিরক্তির লেশমাত্র দেখিনি।
প্রশ্ন: আপনার মেয়ে হিয়া দীপিকার গুণমুগ্ধ। আপনার মুখে তা শুনে দীপিকা নাকি ওঁর জন্য উপহার পাঠিয়েছিলেন?
শাশ্বত: হ্যাঁ। আমি হোটেলের ফেরার আগে ওঁর টিমের একটি মেয়ে এসে একটা খাম দিয়ে গেল। খুলে দেখি দীপিকার একটা সাদা-কালো সুন্দর ছবি। সেখানে আমার মেয়ের নাম করে ওর একটা স্বাক্ষর। স্পোর্টসম্যানের মেয়ে স্পোর্টসম্যান হলে হয়তো এ রকমই হয়!
প্রশ্ন: আপনি বলিউডের তাবড় অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেও মাটিতে পা রেখে চলেন। এ দিকে টলিপাড়ায় এই প্রজন্মের অভিনেতাদের একাংশের জীবনযাত্রা দেখে অনেকেই চোখ কপালে তোলেন।
শাশ্বত: আমি কারও সঙ্গে অভিনয় করছি মানে তো আমি তাঁর মতো হয়ে যাচ্ছি না। তাই কী কাজ করছি, সেটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেখনদারি করতে পারি না, সেটা হয়তো আমার খামতি!
প্রশ্ন: কিন্তু একটা বা দুটো কাজ করে এই যে বিলাসবহুল জীবন...।
শাশ্বত: (থামিয়ে দিয়ে) তাই আত্মহত্যাও বাড়ছে! পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অবসাদ! আমি জানি, যাঁরা ছোট পর্দায় কাজ করছেন, বলা ভাল, অভিনেতার থেকে অভিনেত্রীই বেশি, ডাক্তার তাঁদের অবসাদ কমাতে কী ওষুধ দিয়েছেন, তা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। এই বয়সে আমি তো এখনও অবসাদের স্বীকার হইনি।
প্রশ্ন: এক সময় আপনি তোপসে এবং অজিতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ইদানীং ব্যোমকেশ-ফেলুদার ভিড় নিয়ে অনেকেই আপত্তি জানাচ্ছেন।
শাশ্বত: তা-ও কোনও এক জন করলে বিষয়টা অন্য রকম হত! বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন করছেন বলে একটু গুলিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: ব্যোমকেশ লুকে দেবকে কেমন লাগল?
শাশ্বত: লুক হিসাবে বেশ ভাল লেগেছে। একদম অন্য রকম দেখতে লাগছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy