টোটা রায়চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।
সাক্ষাৎকারের জন্য সময় দিয়েছিলেন রাত ১০টার পর। কারণ বুধবার মুম্বইয়ে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সারা দিন ধরে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন টোটা রায়চৌধুরী। সব শেষ করতে পারেননি। মুম্বই থেকে ফোন করেই বললেন, ‘‘সবে হোটেলের ঘরে ফিরলাম। বাকিদের বলেই এলাম, এ বার একটু বাংলাকে সময় দিতে হবে। কারণ বাংলা এখনও আমার কাছে সবার আগে।’’
প্রশ্ন: ছবি মুক্তির পর এই প্রথম আপনি মুম্বইয়ে। ওখানে সবাই চন্দন চট্টোপাধ্যায় বলে সম্বোধন করছেন না কি টোটা রায়চৌধুরী?
টোটা: (হেসে) চন্দন চট্টোপাধ্যায়ের জন্যই টোটা রায়চৌধুরীকে বেশি ডাকা হচ্ছে। চন্দন ছাড়া আমার এখানে আলাদা করে জায়গা পাওয়া সুযোগ ছিল না।
প্রশ্ন: ছবি মুক্তির পর মুম্বইয়ে কী রকম প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
টোটা: এখানে এসে বুঝলাম, ছবিটা শোরগোল ফেলে দিয়েছে। বিনোদনের সঙ্গে সামাজিক বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা সকলের ভাল লেগেছে। কর্ণস্যর (জোহর, পরিচালক) নিজেও বলেছেন, যে এত ভাল রিভিউ পেতে উনি নাকি অভ্যস্ত নন।
প্রশ্ন: কর্ণের সঙ্গে দেখা হয়েছে?
টোটা: না, বৃহস্পতিবার ছবির সাংবাদিক সম্মেলনে দেখা হবে। তবে কথা হয়েছে।
প্রশ্ন: কী বললেন কর্ণ?
টোটা: নিজে সকলকে মেসেজ করেছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। উনি খুব খুশি।
প্রশ্ন: আর টলিউড কী বলছে?
টোটা: যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছেন, ‘‘তোমরা দু’জনে (টোটা এবং চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়) বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছ।’’ আমি নিজেও সব সময় সেটাই খেয়াল রাখার চেষ্টা করি, বাংলার বাইরে কাজ করলে যেন বাংলার নাম খারাপ না হয়।
প্রশ্ন: আচ্ছা ‘রকি অউর রানি...’-র পর টলিউডে আপনার শত্রু বাড়ল না কি কমল?
টোটা: সত্যি বলতে এগুলো নিয়ে কোনও দিনই মাথা ঘামাতাম না। আর এই বয়সে এসে প্রশ্নই ওঠে না। যত দিন পারব ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। তা ছাড়া ভবিষ্যতে অন্য পরিকল্পনাও রয়েছে।
প্রশ্ন: একটু খোলসা করা যায়?
টোটা: আর হয়তো বছর ১৫ অভিনয় করব। তার পর অন্য রকম অবসরের পরিকল্পনা রয়েছে। সারা দেশ ঘুরে চুটিয়ে ইংরিজি থিয়েটার করব। ছোট ছোট পাহাড়ি জনপদে সময় কাটিয়ে সেখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা নিয়ে লেখার ইচ্ছে রয়েছে। আসলে একটাই তো জীবন, তাই ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে পূরণ করার আর খুব বেশি সময় হাতে নেই।
প্রশ্ন: চন্দন চরিত্রটির মধ্যে নারীসুলভ ভঙ্গি রয়েছে। কত্থক নাচে। অভিনয়ের আগে কোনও ভয় কাজ করেছিল?
টোটা: অন্য ছবির ক্ষেত্রে হয়তো একটু-আধটু ভাবনাচিন্তা করি। কিন্তু এই ছবিতে আমি কিছুই ভাবিনি। শুধু মাথায় ছিল, নিজের সেরাটা দিতে হবে। কারণ ছবিটা কর্ণ জোহরের।
প্রশ্ন: সম্প্রতি কর্ণ বলেছেন, চন্দন চরিত্রের মধ্যে দিয়ে ওঁর ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। চরিত্রের প্রস্তাব আসার সময় কি আপনি সেটা জানতেন?
টোটা: আমাকে উনি কিছুই বলেননি। উনি কিন্তু খুবই বুদ্ধিমান। হয়তো জানতেন, বলে দিলে আমি ওঁকে অনুকরণ করার চেষ্টা করতাম। শুধু বলেছিলেন, ‘‘তুমি অডিশনে যা করেছ, ক্যামেরার সামনে সেটা করলেই হবে।’’
প্রশ্ন: ছবিতে ‘ডোলা রে’ গানে আপনার এবং রণবীরের নাচ এখন চর্চায়। কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
টোটা: কর্ণের বক্তব্য ছিল, শুধু নাচতে জানলেই হবে না কত্থক শিখতে হবে। কলকাতায় পারমিতা মৈত্রের কাছে তালিম নিতে শুরু করলাম। তার পর মুম্বইয়ে বৈভবী মার্চেন্ট গানের কোরিয়োগ্রাফি সম্পূর্ণ করলেন। তার পর ওখানে নিকিতা বানাওয়ালিকরের কাছে নাচটা তুলতে হল। কলকাতা-মুম্বই মিলিয়ে চার মাসে প্রায় চল্লিশটা ক্লাস করতে হয়েছিল। পাশাপাশি নিজের বাড়িতে নিয়মিত অভ্যাস তো ছিলই।
প্রশ্ন: শুনেছি, আরও এক বাঙালি অভিনেতার কাছেও প্রস্তাব গিয়েছিল। তিনি নাচতে পারেন না বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
টোটা: আমি কিন্তু শুনেছিলাম, আমাকে ছাড়া কলকাতার আরও দু’জনের কথা ভাবা হয়। কিন্তু তাঁরা নির্বাচিত হননি। কাস্টিং ডিরেক্টর শানু শর্মা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। অডিশন পাঠানোর আধ ঘণ্টার মধ্যে নাকি ওঁরা আমাকে নির্বাচন করেন। পরে আমি কর্ণস্যরকে প্রশ্নও করি যে, আপনি ৩০ মিনিটের মধ্যে আমাকে কী দেখে নির্বাচন করলেন? উনি বলেছিলেন, ‘‘আমি সব সময়েই আমার সহজাত প্রবৃত্তিতে বিশ্বাসী। এবং তোমার অডিশন দেখে মনে হয়েছিল, আমি যথার্থ চন্দন চট্টোপাধ্যায়কে খুঁজে পেয়েছি।’’ ঋতুদার (ঋতুপর্ণ ঘোষ) ক্ষেত্রে ‘চোখের বালি’-র সময়েও অনেকেই বলেছিলেন, আমি পারব না। কিন্তু ঋতুদা নাকি বলেছিলেন, ‘‘ও আমার ‘শুভ মহরত’-এ কাজ করেছে। আমি জানি ও পারবে।’’ আসলে পরিচালকদের একটা অন্য রকমের দূরদৃষ্টি থাকে, তার সঙ্গে কারও তুলনা চলে না।
প্রশ্ন: মাঝে এ রকমও শোনা গিয়েছিল যে মুম্বইতে কাজের জন্য আপনি এখন টলিউডে কাজের সংখ্যা কমিয়েছেন।
টোটা: দেখুন, ‘অজীব দাস্তান্স’ বা ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’-এর পর প্রচুর হিন্দি কাজের প্রস্তাব আসে। কিন্তু সব চরিত্রই একই রকমের। আমি রাজি হয়নি। অপেক্ষা করেছিলাম। কারণ, আর যা-ই হোক না কেন, আমি টাইপকাস্ট হতে চাই না।
প্রশ্ন: টলিপাড়ার গোষ্ঠীবদ্ধ রাজনীতি আপনি জানেন। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে থেকে এখনকার অভিনেতা হিসাবে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন। ‘রকি অউর রানি...’ দেখে আপনার স্ত্রী কী বলছেন?
টোটা: স্ত্রী (শর্মিলি) কিন্তু আমার সব থেকে বড় সমালোচক। যেটা পছন্দ নয়, মুখের উপর বলে দেয়। তবে এই ছবিতে স্ত্রী এবং মেয়ে, দু’জনেই আমার অভিনয় পছন্দ করেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই ছবির শুটিং শুরু করেছি। আমার পরিবার আমার লড়াইটা জানে। স্ত্রী একটাই কথা বলেছে, পরিশ্রমের যে কোনও বিকল্প নেই, সেটাই আরও এক বার প্রমাণিত হল।
প্রশ্ন: ‘রকি অউর রানি...’ মুক্তির পর বলিউড থেকে প্রস্তাব নিশ্চয়ই আসতে শুরু করেছে?
টোটা: অনেকগুলোই এসেছে। তবে এখনও সেটা আলোচনার স্তরে (হাসি)।
প্রশ্ন: তার মানে আপাতত মু্ম্বইতে পাকাপাকি ভাবে থেকে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলছেন?
টোটা: বাংলায় আমি কাজ শিখেছি। আমাকে তৈরি করেছেন বাংলার দর্শক। মুম্বইয়ের জন্য বাংলাকে ছাড়তে পারব না।
প্রশ্ন: কিন্তু টলিউডে তা হলে কম কাজ করছেন কেন?
টোটা: আসলে এখন মানুষ একটুতেই বড্ড রিরক্ত হয়ে যান। একই জিনিস দেখতে পছন্দ করেন না। আমি জানি, বছরে ছ’টা ছবি করলে দর্শক কিন্তু আমাকে দেখতে চাইবেন না। কোনও দিনই প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করিনি। বরং লম্বা ইনিংসে বিশ্বাসী। স্বমহিমায় বিরাজ করতে হলে আমাকে বেছে বেছে কাজ করতেই হবে।
প্রশ্ন: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘নিখোঁজ’ ওয়েব সিরিজ়ে রাজি হলেন কেন?
টোটা: চিত্রনাট্যে আমার জায়গা, পরিচালক এবং প্রযোজক— এই তিনটে জিনিস না দেখে আমি এখন আর রাজি হই না। অয়ন (পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী) টলিপাড়ার তথাকথিত প্রচলিত ধারার বাইরে অন্য একটা গল্প নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। পছন্দ হয়েছিল।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক অতীতে টলিপাড়ায় একাধিক তারকার নামে দুর্নীতির অভিযোগ। সব ছবি নাকি চলছে না। ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতিকে কি আপনাকে ভাবাচ্ছে?
টোটা: (একটু ভেবে) করোনার পর হয়তো ছবির সংখ্যা কমেছে। কিন্তু ছোট পর্দা থেকে ওয়েব সিরিজ় বা সিনেমা— বাংলায় কিন্তু ভাল কাজ হচ্ছে। আর রইল দুর্নীতি, সেটা তো তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমার মনে হয়, তা নিয়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কোনও বক্তব্য থাকবে না।
প্রশ্ন: ‘শ্রীময়ী’ সিরিয়ালে আপনার অভিনীত রোহিত সেনের চরিত্র এখনও দর্শক মনে রেখেছেন। সিরিয়ালে ফিরবেন নাকি?
টোটা: প্রস্তাব তো আসতেই থাকে। আসলে তখন হাতে সময় ছিল। অনেকেই জানেন না, শুরুতে আমার চরিত্রটা তিন মাসের জন্য ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পরে চরিত্রটা জনপ্রিয় হয়ে গেল বলে দৈর্ঘ্য বাড়ল। কিন্তু এখন অতটা সময় আর দিতে পারব কি না জানি না। নন ফিকশন হলে তবুও ভেবে দেখতে পারি।
প্রশ্ন: ‘নিঁখোজ’-এর রোমিত কি ‘শ্রীময়ী’-র রোহিতকে ছাপিয়ে যেতে পারবে?
টোটা: (হেসে) কঠিন। কারণ রোহিত সেনকে মানুষ হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন। কয়েশো এপিসোডে তাঁকে দেখেছেন। ছ’টা এপিসোডে রোমিত তার সঙ্গে এঁটে উঠবে! তবে দুটো চরিত্রের মননশীলতার মধ্যে মিল রয়েছে। রোমিতকে দর্শকের খারাপ লাগবে না এটুকু বলতে পারি।
প্রশ্ন: পরিচালক সন্দীপ রায় যখন ফেলুদার সন্ধান করছেন, তখন আপনি আপনার ইচ্ছের কথা ওঁকে জানিয়েছিলেন। ‘হত্যাপুরী’ দেখেছেন?
টোটা: দেখেছি। খুব ভাল লেগেছে। বাবুদার একটা নিজস্ব পরিচালনার স্টাইল আছে। পরেরটাও দেখব।
প্রশ্ন: সম্প্রতি দুই ব্যোমকেশের টিমকে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছে। এ বার ওয়েব সিরিজের ফেলুদার মুখে বড় পর্দার ফেলুদার প্রশংসা...।
টোটা: কেন নয়। এই হৃদ্যতাও তো শিক্ষণীয়। একে অপরের পাশে দাঁড়ালে তো ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে ভাল। কারণ একটা প্রজেক্ট সফল হলে আরও দশ জন প্রযোজক ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হন। আর সেটা ফ্লপ করলে ইন্ডাস্ট্রি পাঁচ জন প্রযোজক হারায়। ওদের মতো আমাদের দুটো ফেলুদার টিমও ভাল সেট হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: তার মানে প্রতিযোগিতা নেই?
টোটা: স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা সব সময়েই ভাল। তাতে উভয় পক্ষেরই অনুপ্রাণিত হওয়ার সুযোগ থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy