Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ছোট ছোট আনন্দগুলোই আমাদের জীবনের মূলধন’

এই প্রথম পর্দায় একসঙ্গে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং জয়া আহসান। তাঁদের মুখোমুখি আনন্দ প্লাসএই প্রথম পর্দায় একসঙ্গে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং জয়া আহসান। তাঁদের মুখোমুখি আনন্দ প্লাস

জয়া ও প্রসেনজিৎ। ছবি: স্বপ্নিল সরকার

জয়া ও প্রসেনজিৎ। ছবি: স্বপ্নিল সরকার

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

প্র: একটা রবিবারের জার্নি নিয়ে ছবির গল্প। সেলেব্রিটিদের জীবনের রবিবারটা ঠিক কেমন?

জয়া: কোনটা রবিবার, কোনটা ছুটির দিন আমার তো সেটাই ঘেঁটে যায়! ঢাকায় শুক্রবার ছুটির দিন। রবিবার সকলে কাজ করেন। তাই ঢাকায় থাকলে রবিবার মানে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। একবার ভুল করে কলকাতায় রবিবার ব্যাঙ্কে চলে গিয়েছিলাম (হাসি)! এখানে থেকে শিখেছি, রবিবার মানে জমিয়ে মাংস-ভাত খেতে হয়।

প্র: বোঝা যায় না, আপনি খাইয়ে...

জয়া: কী বলছেন? আমার খাওয়া দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। রেওয়াজদার গোস্ত তুলে তুলে খাই।

প্রসেনজিৎ: আরে, আমি কাউকে নিয়ে এতটা জেলাস হইনি। যতটা ওকে দেখে হয়েছি। জয়া সব খায় এবং অনেকটা পরিমাণে খায়, তাও মোটা হয় না! এটা আশীর্বাদের মতো। চারটে রাজভোগ, শিঙাড়া খেয়ে নিল, খেয়েই যাচ্ছে...

জয়া: আচ্ছা বুম্বাদার রবিবারের খাওয়াদাওয়াটা বরং আমি বলি। সকালে উঠে রাস্তার চায়ের দোকান থেকে ভাঁড়ে করে দুধ চা...

প্রসেনজিৎ: ছোটবেলায় গড়ের মাঠে ভাঁড়ের চা খেতে যেতাম। সেটা এখন আর সম্ভব নয়। তাই বাড়ির গেটের বাইরে একজন চাওয়ালার কাছ থেকে চা খাই। দু’ভাঁড়। (একটু থেমে) আসলে আমাদের রিল্যাক্সেশন, আনন্দ সবটা বদলে গিয়েছে। মানুষ হিসেবে আমরা বড্ড একা। মেকি। সেই সঙ্গে ভাল লাগার জায়গাগুলোও হারিয়ে গিয়েছে।

জয়া: ব্যস্ততার মাঝে আনন্দ করতে ভুলে গিয়েছ, না?

প্রসেনজিৎ: না, জাস্ট হারিয়ে গিয়েছে। পল্লবী (চট্টোপাধ্যায়) বলে, পার্টি করতে। কিন্তু সেই পার্টিতেও কি আমি নিজের মতো থাকব? পার্টিতেও আইসোলেটেড লাগে। তাই রবিবারটা নিজের ভাল লাগাগুলো ফিরে পেতে চেষ্টা করি। নিজের হাতে বাগান করি, গাড়ি ধুই... রিল্যাক্সড লাগে। আমার অফিসে, বাড়িতে যতজন কাজ করে, ওদের সকলকে দুপুরে বিরিয়ানি খাওয়ার টাকা দিই। আমি খাই না কিন্তু ওদের বিরিয়ানি পার্টিটা এনজয় করি। জিমে গেলে ওখানকার সকলের জন্য আইসক্রিম নিয়ে যাই। ওদের আনন্দটা আমাকে আনন্দ দেয়। এ ভাবেই ছোট ছোট আনন্দ খুঁজে নিতে চেষ্টা করি।

জয়া: হ্যাঁ, এই ছোট আনন্দগুলোই আমাদের জীবনের মূলধন।

প্র: অসীমাভর চরিত্রটার সঙ্গে কি প্রসেনজিতের ব্যক্তিগত মিল রয়েছে?

প্রসেনজিৎ: আমার জীবনে যে ক’টা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেগুলো সকলেই জানে। লুকোনোর কিছু নেই। আমার ভিতরে যত ভাঙা-গড়া, মান-অভিমান, রাগ-দ্বেষ আছে— সবটা অসীমাভর মধ্যে ঢোকাতে হয়েছে। ইনফ্যাক্ট এসে গিয়েছে।

প্র: পুরনো ঘটনা মনে পড়ছিল?

প্রসেনজিৎ: ভীষণ ভাবে। একটা সময় তো এসেছিল, যখন নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। কম বয়সে অনেক ইমপালসিভ ছিলাম। এটা এখন আর হবে না।

জয়া: আমরা আর্টিস্টরা এই জায়গাটায় স্বার্থপর। দুঃখ, ভাল লাগা, খারাপ লাগা ভিতরে জমিয়ে রেখে দিই। সময় মতো উগরে বার করি। নিজেদের ভিতরের আবেগ চরিত্রের মধ্যে ঢেলে দিই।

প্র: এই ছবির জন্য আপনারা ওয়র্কশপ করেছিলেন?

জয়া: এই চিত্রনাট্যটা অন্য রকম অ্যাক্টিং ডিমান্ড করেছে। এমনিতে দু’বার স্ক্রিপ্ট পড়েই আমি জিনিসটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিই। এ ক্ষেত্রে সময় লেগেছিল।

প্রসেনজিৎ: চরিত্র দুটো ফুটিয়ে তুলতে আমাদের অসম্ভব মানসিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এর কৃতিত্ব পরিচালকের। এমনি এমনি সেন্সর বোর্ড ‘ইউএ’ দেয়নি। সেক্স, ভায়োলেন্স কিচ্ছু নেই।

প্র: জয়া, প্রথম বার প্রসেনজিতের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা বলুন।

জয়া: এই রে! কী অস্বস্তি লাগে বুম্বাদার সামনে ওকে নিয়ে কথা বলতে।

প্রসেনজিৎ: দাঁড়া, একটু ঘুরে আসি।

জয়া: আরে না, না...

প্রসেনজিৎ: তুই কথা বল। আমি এখুনি আসছি...

জয়া: প্রথমে নার্ভাস ছিলাম। তবে কাজ করতে গিয়ে একবারও মনে হয়নি, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এতটাই মাটির মানুষ। আর এই লোকটা শুধু নিজের চরিত্র নিয়ে কনসার্নড নয়। গোটা সিনেমাটা নিয়ে ভাবে। সকলের সিন ওর মনে থাকে।

প্রসেনজিৎ: (ফিরে এসে) আমার মাথায় থাকে। সেটে কন্টিনিউয়িটি সবচেয়ে ভাল আমি বলতে পারি।

জয়া: আচ্ছা, বুম্বাদা আমার ভুলগুলো বলো না?

প্রসেনজিৎ: তুই কোনও ভুল করিসনি। জয়া ভাল অভিনেত্রী জানতাম। কিন্তু ওর মধ্যে ভাল কাজের মারাত্মক একটা খিদে রয়েছে। এই জায়গা থেকে ওকে আমি রেসপেক্ট করি।

প্র: এ দিকে প্রসেনজিৎ রয়েছেন। ও দিকে জয়া আপনি। তা-ও দুই বাংলার একসঙ্গে ছবি করায় জট কাটছে না কেন?

প্রসেনজিৎ: এই ভাগাভাগির জন্য আমরা কোটি কোটি বাঙালির কাছে পৌঁছতে পারছি না। আমি তো ছেলেকে বলব, ‘তুই বাংলা সিনেমা করিস না।’ যে মানুষটা ৩০-৩৫ বছর নিজের শ্রম দিয়েছে এই ইন্ডাস্ট্রিকে, তার পক্ষে এই কথাটা বলা কতটা কষ্টের বুঝতে পারছেন?

জয়া: এটা আনফরচুনেট। অনেক বার কথা এগিয়েও ভেস্তে যাচ্ছে।

প্র: জয়া, এই সাক্ষাৎকারের আগে প্রসেনজিৎ চেয়েছিলেন আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে। ‘কী করে বছরে ১০টা ছবি আপনি করছেন?’

জয়া: কোথায় ১০টা ছবি? অন্য কারও সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে।

প্রসেনজিৎ: আছে, আছে। তোর আর ঋত্বিকের (চক্রবর্তী) মাসে একটা করে ছবি আসে।

জয়া: ‘রবিবার’ রিলিজ় করছে। তার পর ‘অর্ধাঙ্গিনী,’ ‘ভূতপরী’, আর অতনুদারই ‘বিনিসুতোয়’, ব্যস।

প্র: প্রসেনজিৎ, আপনার আগামী বছরের প্ল্যানিং হয়ে গিয়েছে?

প্রসেনজিৎ: আমার ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফিক্সড। কবে কোন ছবি করব, কবে রিলিজ় সবটা।

জয়া: বুঝুন... এই লোকটা এতক্ষণ আমাকে ঠুকছিল। কী সাংঘাতিক! তোমার মধ্যে সত্যিই অসীমাভ লুকিয়ে আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Prosenjit Chatterjee Jaya Ahsan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy