Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Chanchal Chowdhury

যখন খাওয়ার ইচ্ছে ছিল, তখন খুব বেশি খাবার পাইনি: চঞ্চল চৌধুরী

একেবারে মাছে-ভাতে বাঙালি। বহু দিনের মঞ্চের কাজ করার অভিজ্ঞতাই বড় পর্দার অভিনয়ে তাঁকে সেই ধার এনে দিয়েছে। কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হাওয়া’র জন্য উন্মাদনা দেখে কী বললেন চঞ্চল?

বহু দিনের মঞ্চের কাজ করার অভিজ্ঞতাই বড় পর্দার অভিনয়ে তাঁকে সেই ধার এনে দিয়েছে।

বহু দিনের মঞ্চের কাজ করার অভিজ্ঞতাই বড় পর্দার অভিনয়ে তাঁকে সেই ধার এনে দিয়েছে। নিজস্ব চিত্র

শতরূপা বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ১০:১৪
Share: Save:

মাংস খেতে ইচ্ছে করছে বলে ‘হাওয়া’তে হেড মাঝি চান মিঞা যখন তার পোষা সাধের শালিকটা কেটে খেয়ে ফেলে, তখন তার ঘিনঘিনে হাসি আর তারিয়ে তারিয়ে খাওয়া দেখলে গা শিউরে ওঠে। কিছুতেই এই চানকে মেলানো যায় না আদতে মিষ্টভাষী আর হাসিখুশি পিছনের লোকটার সঙ্গে। চঞ্চল চৌধুরী। যিনি এখন এ পার বাংলারও ‘স্টার’।

কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে এসেছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা দেখলে তাক লেগে যায়। যখন জিজ্ঞেস করা হয়, এ রকম অভিনয় তিনি কোথায় শিখলেন, লাজুক হেসে বলেন, ‘‘আসলে অভিনয়টা তো করি না। চরিত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। সেই চরিত্রটার কথাবার্তা, চালচলন, তার চিন্তাটাকে নেওয়ার চেষ্টায় থাকি।’’

‘হাওয়া’ ছবির দৃশ্য।

‘হাওয়া’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

অভিনয় করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না কোনও দিন। পাবনার কামারহাট গ্রামের আট ভাইবোনের টানাটানির সংসার। বাবা রাধাগোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন সেই গ্রামের বাড়ির সংলগ্ন প্রাইমারি স্কুলের প্রধানশিক্ষক। ৩৪ বছর শিক্ষকতা করে এখন অবসরপ্রাপ্ত। মা নমিতার কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন চঞ্চল। ‘‘আমাদের মা স্বয়ং দুর্গা। তিনিই আমাদের সবাইকে খুব কষ্ট করে বড় করেছেন।’’

সেই গ্রাম থেকেই ধীরে ধীরে থিয়েটারে হাতেখড়ি। ‘‘আমি ছিলাম থিয়েটারের ব্যাকস্টেজের লোক। কী করে যে মঞ্চের সামনে এক দিন চলে এলাম নিজেই জানি না। আসলে আমার মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানের জন্য যেমন ভালবাসা, অভিনয়ের প্রতিও ভালবাসাটা তেমনই,’’ বলছেন তিনি। বোঝাই যায় তাঁর বহু দিনের মঞ্চশিক্ষা তাঁকে পর্দার অভিনয়ে দিয়েছে সেই ধার, যার জন্য তিনি বর্তমানে বিখ্যাত।

তার পর ধীরে ধীরে সিনেমা। গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’-এ কাজ করেছিলেন। কিন্তু কলকাতায় নিয়মিত কাজ না করার ফলে অনেকেই চঞ্চলকে তখন তেমন একটা চিনতেন না। সেই চেনা প্রায় সুনামির মতো আছড়ে পড়ে বাংলাদেশি ওয়েব সিরিজ় ‘কারাগার’ আসার পর। তাঁর সাংঘাতিক অভিনয় দেখে তামাম দর্শকের তাক লেগে যায়। নিমেষেই স্টার করে দেয় চঞ্চলকে। কেমন লাগে দুই বাংলার মধ্যে এই জনপ্রিয়তা? ‘‘আমি যখন অভিনয় করি, তখন এই জনপ্রিয়তার কথা মাথায় থাকে না। জনপ্রিয়তা পাব বলে কাজ করি না। অভিনয় একটা সাধনার ব্যাপার। সেই সাধনার মধ্যে দিয়ে তিলে তিলে নিজেকে গড়তে হয়। সারা ক্ষণ চরিত্র-সৃষ্টির চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। সেটাই চেষ্টা করি। তার পর প্রশংসা পেলে ভালই লাগে। সেটাই তো আমাদের পাওয়া,’’ বলছেন তিনি।

তা এই চান মাঝির আচার-আচরণ এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে কেমন করে আত্মস্থ করলেন? ‘‘আমার গ্রামের বাড়ির থেকে দু’মিনিট দূরেই পদ্মা নদী। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি মাঝি-মাল্লাদের। তাই তাদের আচার-আচরণ আমার খুবই চেনা। সেখান থেকেই আত্মস্থ করেছি চান মাঝির শরীরী ভাষা, কথাবার্তা,’’ বলছেন চঞ্চল।

কলকাতায় এসে কী খাওয়াদাওয়া হল? ‘‘যখন খাওয়ার ইচ্ছে ছিল, তখন খুব বেশি খাবার পাইনি। সেটা যে কারণেই হোক। দারিদ্রের একটা ব্যাপার থাকে, সামর্থের একটা ব্যাপার থাকে। এখন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটা হল অনেক কিছু খেতে চাইলেও খেতে পারি না। আর কতই বা খাব? মুখে স্বাদ লাগলে তিন বেলাই খাই পেট ভরে। আর খাওয়ার ইচ্ছে না থাকলে দু’দিনও না খেয়ে থাকি,’’ বলছেন অভিনেতা।

এখানে যেটা ভাল লাগছে খাচ্ছেন। সে রকম কোনও বাঁধাধরা মেনু নেই। তবে কলকাতার স্ট্রিট ফুড আগাগোড়াই তাঁর খুব পছন্দের। ‘‘আর আমি একদম মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছ-সব্জি-আলুভাজা আমার খুব প্রিয়। আমার দাদা-বৌদি এসেছেন আমার সঙ্গে। আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন কী খাব। আমি বললাম বাংলা খাবার খাব। তাই খেলাম’’, বললেন চঞ্চল।

চঞ্চলের বাবা এখন নবতিপর। চঞ্চলকে শক্তি জোগান তাঁর মা-বাবা। তাঁর ভাইবোনেরা মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়ি গিয়ে বাবা-মাকে ঢাকার বাড়িতে নিয়ে আসেন। বেশির ভাগই ওঁদের চিকিৎসার জন্যে। ‘‘তবে ওঁরা ঢাকাতে থাকতে চান না। বদ্ধ হাওয়া, চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে চান না। তাই আমাদের বাড়িতে সাত-আট দিন থাকার পরই হাঁপিয়ে ওঠেন। আমি এই কলকাতা আসার আগেই তাঁদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম,’’ বলছেন চঞ্চল।

অন্য বিষয়গুলি:

Chanchal Chowdhury Bangladesh Hawa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy