অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক
তিন পুরুষের বাস কালীঘাটে। ছোট থেকেই চেনেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারকে। তাই নির্বাচনের আগে সকলে যখন আখের গুছিয়ে সরে গেলেন, খারাপ লেগেছে অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের। সেই অনুভূতিই কি তাঁকে ঠেলে দিল রাজ্য রাজনীতিতে? অভিনয় সামলে কী ভাবে দলনেত্রীর পাশে থাকবেন তিনি? আনন্দবাজার ডিজিটালকে সবিস্তার জানালেন কাঞ্চন।
প্রশ্ন: প্রথম বার রাজনীতির মঞ্চে এলেন। কেমন দেখলেন চারপাশ?
কাঞ্চন: দেখলাম, কী ভাবে নিজের ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নিয়ে প্রকৃত কাজের সময়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পাশ থেকে একে একে সরে গেলেন সকলে। ভীষণ খারাপ লেগেছে এই আচরণ।
প্রশ্ন: সেই খারাপ লাগা থেকেই শাসক দলে যোগদান?
উত্তর: অন্য ভাবনা থাকলে, চাওয়া-পাওয়ার হিসেব থাকলে ১০ বছর অপেক্ষা করতাম না। আরও আগেই যোগ দিতাম। শুনতে ন্যাকামি মনে হলেও, এটাই সত্যি। আমার চেহারা তো দেখেছেন সকলে। বেশি খেতে পারি না। হজম হয় না। গায়েও লাগে না। সব কিছু দেখেশুনে মনে হয়েছে, এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাই যোগ দিলাম।
প্রশ্ন: তার আগেই সহ-অভিনেতা সায়নী ঘোষ, দেবলীনা দত্তকে হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন...
উত্তর: ক্ষমতায় আসার আগেই বিরোধী দলের এই আগ্রাসী মনোভাব! শাসনে এলে সাধারণের সঙ্গে কী ব্যবহার করবে ভেবে দেখেছেন? মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তার উপরে ফি দিন দাম বাড়ছে পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের। জীবনদায়ী ওষুধের উপরে বসছে জিএসটি। অভিনেতার পাশাপাশি, আমিও তো এই রাজ্যের বাসিন্দা। তাই বাংলা বাঁচাতে, টলিউড-সহ সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে এদের ঠেকাতেই হবে। সবুজ শিবিরে যোগদানের এটিও একটি কারণ।
প্রশ্ন: টলিউড নাকি স্বরূপ বিশ্বাস আর মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের দখলে? কিছু টলিউড তারকার এমনই অভিযোগ...
উত্তর: আমি ২৫ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছি। ডান-বাম কোনও দলেই ছিলাম না। তবুও ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে গিয়েছি সকলের ভালবাসার জোরে। কেউ তো কখনও বলেননি, কাঞ্চন মল্লিক কাজ করতে পারবে না! আমার কথা ছেড়ে দিন। রিমঝিম মিত্র, শর্বরী দত্ত, কৌশিক রায়, জুনিয়র কৌশিক চক্রবর্তীরাও তো তা হলে কাজ করতে পারতেন না। দুই কৌশিক দিব্যি কাজ করছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ধারাবাহিকে। অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া প্রতিভার উপরে নির্ভর করে। হুমকি, ধমকি দিয়ে কিচ্ছু হয় না। সমস্ত মিথ্যে, সবটাই বাজে রটনা।
প্রশ্ন: প্রত্যেকটা উত্তর বলছে রীতিমতো অনুশীলন করে মাঠে নেমেছেন...
উত্তর: ‘জনতা এক্সপ্রেস’-এর সঞ্চালনা দিয়ে কেরিয়ার শুরু। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতাম। ভুললে চলবে? কথা বেচে পেট চালাই। আর রাজনীতিও তো এক রকমের জনসংযোগ।
প্রশ্ন: সেই জন্যেই সব দলে এত তারকার ভিড়?
উত্তর: তারকারা কিন্তু বাম জমানাতেও প্রকাশ্যে রাজনীতি করতেন। শ্রদ্ধেয় অনুপকুমার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে, রাজনীতিতে বা নির্বাচনের মঞ্চে তারকাদের ভিড় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
প্রশ্ন: সায়নী ঘোষ তৃণমূলে যোগ দিয়ে শ্রীলেখা মিত্রের কটাক্ষের শিকার। আপনি নন। এটা কাঞ্চন মল্লিকের পজিটিভিটি না ইউএসপি?
উত্তর: লোকের বলার মুখ আর চলার পথ আটকানো যায় না। ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে, লোগো কা কাম হ্যায় কহেনা’। এ সব দিকে কান দিলে কাজটাই মাটি হবে। তার চেয়ে কাজে মন দেওয়াই ভাল।
প্রশ্ন: অভিনয় সামলে কী ভাবে কাজ করবেন?
উত্তর: মানুষের পাশে থেকে, তাঁদের জন্য কাজ করতে চাই। আমফানের সময়েও সকলের অগোচরে সাধ্য অনুযায়ী পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আর্তদের। মায়ের কাছে শুনেছি, দান করে জাহির করলে সেই দানের মূল্য থাকে না। আমিও তাই কী কী করব, জানিয়ে ঢাক পেটাতে রাজি নই।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে কাজ করতে গিয়ে কখনও মতে না মিললে?
উত্তর: অন্য শিবিরে যোগ দেব না, গ্যারান্টি। কাঞ্চন মল্লিকের ট্র্যাক রেকর্ড বলছে, টানা ২৫ বছর ধরে একটি নাট্য সংস্থাতেই কাজ করে গিয়েছে সে। দল বদলানো আমার ধাতে নেই (হাসি)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy