বাঁ দিক থেকে মঞ্চে পরপর সোহিনী দাশগুপ্ত, ফারহা খাতুন, রত্নত্তমা সেনগুপ্ত (সঞ্চালিকা), দেবলীনা মজুমদার, অতিদি রায়
ক্যামেরার সামনে বহু যুগ ধরেই সাবলীল হতে দেখা গিয়েছে মহিলাদের। কিন্তু ক্যামেরার পিছনে? পরিচালনা, চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা-সহ ‘টেকনিক্যাল’ বিষয়গুলিতেও কি মেয়েদের অবাধ গতিবিধি? সত্যি কি সিনেমা জগতের প্রকৃত ছবি তেমনটাই? প্রশ্ন তুলল একটি আলোচনাসভা।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শহরে শুরু হয়েছে পঞ্চম ‘আর্টহাউজ এশিয়া চলচ্চিত্র উৎসব’। বুধবার, তারই তৃতীয় দিনে রুপোলি পর্দার পিছনে থাকা নারীদের প্রসঙ্গ নিয়ে আয়োজিত হয় আলোচনাসভা। অংশ নিয়েছিলেন পর্দার নেপথ্যে থাকা ৪ নারী— সোহিনী দাশগুপ্ত, অদিতি রায়, দেবলীনা মজুমদার এবং ফারহা খাতুন। তাঁরা সকলেই একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণ দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রের সফল পরিচালক।
এ দিনের আলোচনার সূত্রধর ছিলেন সাংবাদিক রত্নত্তমা সেনগুপ্ত। নিজের ছোটবেলার স্মৃতির পাতা উল্টোতে উল্টোতে জানান, কো-এড স্কুলে পড়াশোনার কারণে এই ভেদাভেদ গড়ে ওঠেনি তাঁর মধ্যে। কিন্তু তিনি দেখেছেন, পেশাগত জায়গায় আজও এই দ্বিধা রয়ে গিয়েছে। তাই অদিতির কাছে তাঁর প্রশ্ন ছিল, কবে থেকে কলা-কুশলী হিসেবে জায়গা করে নিতে পেরেছে নারী? কত বাধা পেরিয়ে অদিতি এখন সফল?
‘দাওয়াত-এ বিরিয়ানি’, ‘অন্য বসন্ত’, ‘অবশেষে’র পরিচালক অদিতি স্পষ্ট জানালেন, ‘‘পরিচালক হিসেবে আমি যখন ক্যামেরার পিছনে, তখন একটি ইউনিট চালাতে হয়েছে আমাকে। সেখানে নারী-পুরুষ সকলেই ছিলেন। এবং আমি সৌভাগ্যবান, কোনও দিন কারও থেকে আলাদা ব্যবহার পাইনি। হয়তো এই মনোভাব যুগ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গেই এসেছে।’’
ঠিক এই জায়গা থেকেই সঞ্চালকের কৌতূহল, প্রথম দিকের মহিলা পরিচালক হিসেবে নাম পাওয়া যায় মঞ্জু দে বা অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়ের। পরে সেখানে অপর্ণা সেন, নন্দিতা রায়, সুদেষ্ণা রায়, শতরূপা সান্যালের মতো পরিচালকের নাম যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এঁরা শুরু থেকেই কোনও না কোনও ভাবে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হয় অভিনয়, নয়তো পরিচালকের পরিবারের কেউ হিসেবে। সাধারণ মধ্যবিত্ত মেয়েদের জন্যও কি ততটাই সহজ ছিল এই পেশা? সঞ্চালিকার সঙ্গে এ ব্যাপারে সহমত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সহকারী সোহিনী। জানালেন, তিনি যখন সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন, বেঁকে বসেছিলেন তাঁর বাবা। গতে বাঁধা জীবনেই মেয়ে হাঁটবে, ইচ্ছে ছিল তাঁর। পরবর্তী সময়ে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের কাছে দীর্ঘদিন কাজ শিখে পরিচালনার দুনিয়ায় এসেছেন তিনি। সোহিনীর দাবি, ‘‘আমার জীবনে ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না।’’
সোহিনীর কথার ছায়া মিলল ফারহা খাতুনের বক্তব্যেও। সম্প্রতি, তাঁর পরিচালনায় তৈরি তথ্যচিত্র ‘হোলি রাইটস’ মেয়েদের তিন তালাক প্রথা, মহিলা কাজীর মতো স্পর্শকাতর বিষয় তুলে ধরেছে। নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সময়ে ফারহা বললেন, ‘‘প্রথম জীবনে ইচ্ছে ছিল সাংবাদিক হব। মেয়েদের দুর্দশা প্রকাশ্যে আনব। বাবাকে বলতেই তিনি এক ডাক্তারবাবুকে নিয়ে এলেন। যুক্তি, ডাক্তারবাবু বেশি পড়াশোনা করেছেন। আমার সিদ্ধান্ত ঠিক কিনা, তিনিই বলতে পারবেন।’’ কার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু? ফারহার আক্ষেপ, তিনি তাঁকে বুঝিয়েছিলেন সাংবাদিকতা করতে গেলে পুরুষ সহকর্মীর গায়ের ছোঁয়া লাগবে। এতে ফারহার আর বিয়ে হবে না! পরে ফিল্ম সম্পাদনা নিয়ে পড়াশোনা করেন ফারহা।
দেবলীনা উদাহরণ রাখলেন একাধিক বিদেশিনির। যাঁরা ১৮ শতকে দাপিয়ে নন-ফিকশন ছবি বানিয়েছেন। গোটা দুনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন করেছেন মাত্র ৭২ দিনে। সাংবাদিকতাতেও পিছিয়ে ছিলেন না। ক্যামেরার পিছনের দুনিয়াতেও বা আর পিছিয়ে থাকবে কেন নারী? তাই মহিলা পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার বা সম্পাদকের হামেশাই দেখা মেলে আজকের দিনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy