অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়।
সবিতাব্রত দত্ত-কেতকী দত্তের পরেও বিধায়ক ভট্টাচার্যের লেখা ‘অ্যান্টনি কবিয়াল’ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে। ১০০ রজনী অতিক্রান্ত সেই নাটকে কবিয়ালের ভূমিকায় অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়। ‘সৌদামিণী’ ইন্দ্রাণী হালদার। সেই কাজ কেউ মনে রাখেনি! এ রকমই আরও অনেক অজানা অভিমান উপুড় করলেন নীরবে ইন্ডাস্ট্রিতে ৫৪ বছর কাটিয়ে ফেলা গায়ক-নায়ক।
২০২০ সবার কাছেই বিষ কুম্ভ...
অরিন্দম: (হেসে ফেলে) আমার কাছে কিন্তু ভীষণ ব্যস্ততার। অনেক কিছু করেছি এ বছরে। প্রায় দেড় বছর পরে ছোট পর্দায় ফিরলাম ‘কন্যাদান’ ধারাবাহিক দিয়ে। শেষ কাজ করেছিলাম ‘ভানুমতীর খেল’। মাঝে রাজা চন্দের দুটো ছবিতে কাজ করলাম। জিৎ প্রোডাকশনসের ‘সুইৎজারল্যান্ড’-এও আছি। কাজ করেছি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদা ফেরৎ’-এ। আমার পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছে ‘চলো পটল তুলি’। চার সপ্তাহ ধরে চলছে ছবি। (একটু থেমে) আর্টিস্ট ফোরামের সম্পাদকের পদ ছেড়ে দিয়েছি।
দেড় বছরের বিরতির পরেই ছোট পর্দায় আপনি পাঁচ মেয়ের বাবা!
অরিন্দম: এ রকম চিত্রনাট্যই খুঁজছিলাম। যেখানে আমার করার কিছু থাকবে। এই জন্যই এত দিন ছোট পর্দা থেকে দূরে ছিলাম। 'বাবা' এর আগেও হয়েছি। তবে এক সঙ্গে পাঁচ মেয়ের বাবা এই প্রথম। মা-হারা মেয়েদের একা হাতে মানুষ করব আমি। যতদূর শুনেছি, আমাকে ঘিরেই গল্প। প্রোমো প্রকাশের এক দিনের মধ্যেই ২ লক্ষের বেশি ছুঁয়েছে ভিউয়ার্স। আসলে, মন ছোঁয়া কিছু হলেই দর্শকেরা তাতে সাড়া দেন।
কেমন লাগছে?
অরিন্দম: প্রায় ১৫ দিন শ্যুটিং হয়ে গেল। বেশ ভাল লাগছে। অবশ্য বাড়িতেও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এখনও হয়। আমার বোনেদের মানুষ করা, বিয়ে দেওয়া--সব করেছি। সেই অনুভূতিই যেন ফিরিয়ে দিচ্ছে ‘কন্যাদান’। আরও একটা কারণে ধারাবাহিক স্পেশাল আমার কাছে। পরিচালক বাবু বণিক আমারই ছাত্র। এই প্রথম ওর পরিচালনায় কাজ করছি। গুরু-শিষ্য পরম্পরা বলতে পারেন।
১৯৬৭ সাল থেকে অভিনয় জীবন ধরলে এ বছর আপনার ৫৩ তম বছর... কোনও উদযাপন নেই!
অরিন্দম: ৫৪তম বছর। ১৯৬৬-তে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয়। ১৯৬৭-তে সেই ছবি মুক্তি পায়। মহানায়ক, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হয়ে অভিনয়, গানের দুনিয়ার সমস্ত তাবড় শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছি। কাজ শিখেছি। কিন্তু কোনও দিনই নিজের ঢাক নিজে পেটাইনি। ফলে, নিঃশব্দে এতগুলো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেললাম। উদযাপন ছাড়াই! একটা সময় দুঃখ, ক্ষোভ-- সবই হত। এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।
অথচ ১৯৭৬-এর ‘হংসরাজ’ থেকে আপনি গায়ক-নায়ক...
অরিন্দম: শুধু গায়ক-নায়ক? নাটক, সঞ্চালনা, গান লেখা, সুর দেওয়া... যাকে বলে ‘জ্যাক অব অল ট্রেড’। ওই জন্যেই বোধ হয় কিছু হল না। আফসোস, একটা কি দুটো বিষয় ধরে চললে নামী-দামি হতে পারতাম হয়তো। এখন যেমন সবাই চলেন।
আর্টিস্ট ফোরাম থেকে সরে যাওয়াও কি এই অভিমান থেকেই?
অরিন্দম: হয়তো। (একটু থেমে) টানা সাত বছর সম্পাদকের পদে বসে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি অভিনেতাদের জন্য কিছু করার। অনেক দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছি। ইদানিং মনে হচ্ছিল, আমার সময় শেষ। এবার থামতে হবে। তাই থেমে গেলাম। কারওর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না জানিয়ে।
অভিযোগ আছে? কার বিরুদ্ধে? রাজনীতি না লবিবাজি?
অরিন্দম: রাজনীতি আগেও ছিল। বাম আমলে ইন্ডাস্ট্রির জন্য সরকারের সাহায্য নিতে হয়েছে। এখনও হয় প্রয়োজন পড়লে। এটা দোষের নয়। তবে অভিনেতাদের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক যোগ বোধহয় বাঞ্ছনীয় নয়। আর লবিবাজি, গ্রুপিজম তো নতুন কিছু নয়!
আপনি প্রত্যক্ষদর্শী না ভুক্তভোগী?
অরিন্দম: দুটোই। একটা উদাহরণ দিই। এক বার নচিকেতা ঘোষ ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র ‘লালকমল নীলকমল’ রেকর্ডিং করাবেন। সমস্ত শিল্পী নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছেন। কিছুতেই নীলকমলের গলা খুঁজে পাচ্ছেন না। শেষে ঠিক করলেন, ছেলে সুপর্ণকান্তি ঘোষকে দিয়েই নীলকমলের গান গাওয়াবেন। এমন অবস্থায় আমার মা ওঁর কাছে আমায় নিয়ে যান। গান শুনেই বললেন, আমার নীলকমল পেয়ে গিয়েছি। সুপর্ণ লালকমল করবে। তখন সুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। আর যাকে যা মানায় তাকে সেটাই দেওয়া হত। এখন শুধুই লবিবাজি। যে যাদের সঙ্গে পার্টি করবে, মদ খাবে তার বা তাদের ততটাই নামডাক, কাজের সুযোগ। ৫৪ বছরেও চা, কফি, মদ, সিগারেট ছুঁলাম না। আমার দ্বারা কিছু হলও না তাই! (হাসি)
দুই প্রজন্মের সাক্ষী আপনি। ঝুলিতে শুধুই অভিযোগ?
অরিন্দম: শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে বাধ্য, বরাবরই এই ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করেছেন কৌশলীরা। ছকে চলতে না পারলে অনেক কিছু করেও পরিচিতি নেই। যেমন, আমি। আর এখন সব কিছুই বড় বেশি যান্ত্রিক। রিয়্যালিটি শো-এর দাক্ষিণ্যে ভূমিষ্ঠ হয়েই তারকা। জীবনে কোনও সংগ্রামই নেই! তাই সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী।
স্টার জলসায় থিয়েট্রিক্যাল সিনেমা আসছে। চারটি কিংবদন্তি নাটক দেখবে দর্শক। আপনিও মঞ্চাভিনেতা। আপনাকে ডাকা হয়েছিল?
অরিন্দম: হ্যাঁ, বুম্বা আমায় ডেকেছিল। ‘শ্রীমতী ভয়ঙ্করী’র জন্য। আমি সময় দিতে পারিনি ধারাবাহিকের শ্যুটে ব্যস্ত থাকায়। তবে ‘অ্যান্টনি কবিয়াল’ করার সময় গানগুলো আমায় দেখিয়ে নিতে পারত বুম্বা। বিধায়ক ভট্টাচার্যের লেখা নাটক সবিতাব্রত দত্ত-কেতকী দত্তের পরে কাশী বিশ্বনাথে আবার মঞ্চস্থ হয়েছিল। সেখানে ‘অ্যান্টনি’ আমি। ‘সৌদামিণী’ চরিত্রে প্রথম মঞ্চে অভিনয় ইন্দ্রাণী হালদারের। ‘ভোলা ময়রা’ দুলাল লাহিড়ি। ‘মামাবাবু’ হয়েছিলেন কালী বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০০ রজনী পেরিয়েছিল ওই নাটক। সব গান গেয়েছিলাম নিজে। গান তুলিয়েছিলেন অনিল বাগচীর ছেলে অধীর বাগচী। এখনও সেই সুর কানে ভাসে (বলতে বলতেই গুনগুনিয়ে উঠলেন। তার পরেই শ্বাস ছেড়ে)... ওদের দোষ কি? ওরা হয়তো জানেই না! এ রকমই কত কাজ আমার অজানা থেকে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy