Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Tathagata Mukherjee

Tathagata Mukherjee: নুসরত, শ্রাবন্তীর পথ অপ্রচলিত, তাই ওঁদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে গলা টিপে মারতে হবে?

১৫ অগস্ট এলেই নেতিয়ে পড়া জাতীয়তাবোধ বাড়ির ছাদে, পাড়ার সেলুনে, গাড়ির বনেটে পতপত করে উড়তে থাকে।

চিৎকার করে বলতে চাই— ‘ফ্রিইইইইইইডম’!

চিৎকার করে বলতে চাই— ‘ফ্রিইইইইইইডম’! গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

তথাগত মুখোপাধ্যায়
তথাগত মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ১৫:৪১
Share: Save:

‘স্বাধীনতা’... শব্দটা বলেই দু’টি ডিগবাজি খেয়ে কোনওমতে সোজা হয়ে সিনেমা হলে ‘চিকনি চামেলি’ দেখার আগে জাতীয় সঙ্গীতে চুপ করে দাঁড়িয়ে দেশকে ভালবেসে ফেলা, আর যে ‘দেশদ্রোহী’টা সিটে বসে তার প্রেমিকাকে নিয়ে ‘রেবেল উইদাউট আ কজ’ খেলছিল, তাকে কান ধরে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিয়েই অমোঘ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা। এ ছাড়া টুকটাক ‘ভাবাবেগে জোরসে আঘাত’, ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’, বলার নিয়মিত প্র্যাক্টিসে দেশাত্মবোধের দুধ ওথলানো তো আছেই। আসলে স্বাধীনতা বেজায় গোলমেলে আর তেতো পাঁচন, গিললে মুখটা বিস্বাদ, না খেলে পেট ব্যথা। ১৫ অগস্ট এলেই নেতিয়ে পড়া জাতীয়তাবোধ বাড়ির ছাদে, পাড়ার সেলুনে, গাড়ির বনেটে পতপত করে উড়তে থাকে, এতে আমি নিঃসন্দেহ হই এই ভেবে যে, আমরা ঘনাদার ফিস ফ্রাই কিম্বা টেনিদার বার্গার ভালবাসতে পারি, কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা শুধুই বিক্রিবাটার এক্কা দোক্কা। ছোটবেলা যে কোনও মানুষকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করে। আমৃত্যু থেকে যায় সেই প্রভাব। স্যার ডারউইনই যখন সেই প্রভাবে আচ্ছন্ন, আমি তো নেহাতই যুগল হংসরাজ (শ্রীমান হংসরাজের সঙ্গে গোলাবেন না)।

‘দেশপ্রেম’ ঘটনা ১...

২০০০, ১৫ই অগস্ট, ভোর সাড়ে ছ’টা। বেলা অবধি বিছানায় পড়ে ঘুমোনোর স্বপ্ন দেখা নিষ্পাপ আমি এবং বালিশ আঁকড়ে জাতীয় ছুটি পালনরত মন, দু’জনেই গত রাতেই ভুলে গিয়েছি যে বাড়ির পাশে হিন্দি স্কুল। হঠাৎ হিমেশ রেশমিয়া এবং আরও গোটা পঞ্চাশেক পুরুষ-মহিলা কোরাস রেশমিয়া, ‘অ্যায় ওয়তন, অ্যায় ওয়তন, হামকো তেরি কসম, তেরি রাহোঁমে জাঁ তক লুটা জায়েঙ্গে’। মেশিনগানের গুলির মতো ক্রমাগত কণ্ঠবর্ষণে আমি তখন সত্যিই লুটিয়ে গিয়েছি। স্কুলের হেডস্যার যতটা সম্ভব বেসুরে দেশপ্রেমের চিৎকারটা লিড করছেন আর বাকিরা আরও নানান সুরে কামানের গোলার মতো ‘গান গাইতে শুধুই সাহস লাগে’-গোছের বার্তা নিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বিছানায় রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ আমি ছটফট করছি মৃত স্বপ্নের বালিশে। সদ্য কেটে ফেলা পাঁঠার মাথা, যার ধড়টা জানার চেষ্টা করছে এর পর নিশ্বাস নেবে কী ভাবে, বেলা অবধি ঘুমের স্বপ্ন তখন মোদীর ‘আচ্ছে দিন’-এর লিফলেট।

‘দেশপ্রেম’ ঘটনা ২...

ওই বছরেরই ঘটনা। সিনেমা দেখছি, ডেস্কটপে, ‘ব্রেভহার্ট’। মেল গিবসন স্কটিশ যোদ্ধা উইলিয়াম ওয়ালেস সেজেছেন। সিনেমার শেষ দৃশ্য। খোলা বাজারে বন্দি স্কটিশ স্বাধীনতা সংগ্রামী উইলিয়াম ওয়ালেসের উপর ইংরেজ শাসক এত নৃশংস অত্যাচার করে চলেছে যে বাজারে উপস্থিত ইংরেজ দর্শকরা পর্যন্ত বলে ফেলছে ‘মার্সি’ ( ক্ষমা)। কিন্তু ওয়ালেসের মুক্তি নেই, সে যত ক্ষণ না নিজে মুখে ‘মার্সি’ বলছে তত ক্ষণ তাকে মৃত্যু দিয়ে মুক্তি দেওয়া যাবে না, চলবে অকথ্য অত্যাচার। দর্শকদের ‘মার্সি’ বলার জোর বাড়ছে, ওয়ালেসের মুখ তখনও বন্ধ, সবাই চিৎকার করছে ‘মার্সি, মার্সি’... ওয়ালেসের উপর অত্যাচার ক্রমশ বাড়ছে, ভিড়েরও এই যন্ত্রণার দৃশ্য সহ্য করার ক্ষমতা কমে আসছে। ওয়ালেসের মুখ অল্প ফাঁক হয়, সেনাপতি অত্যাচার থামাতে নির্দেশ দেন। জনতা উইলিয়াম ওয়ালেসকে উৎসাহ দেয় ‘মার্সি’ বলার জন্য। ওয়ালেসের অভিব্যক্তিতে বুঝি, সে নিজের শেষ শক্তিটুকু সঞ্চয় করে কথা বলে ওঠার জন্য। নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ওয়ালেস চিৎকার করে বলে ওঠে... না, ‘মার্সি’ নয়... বলে ওঠে... ‘ফ্রিইইইইইডম’ (স্বাধীনতা)। পর্দার এ পারে বসে হদ্দ বোকা আমি বিশ্বাস করে ফেলি, আমিও স্বাধীন হয়ে গেলাম, একদম উইলিয়াম ওয়ালেসের মতো।

দেশ তো নিছক কাঁটাতার দেওয়া ভূমিখণ্ড, যাকে রাজনৈতিক কারণে ভাগ করা হয়েছে।

দেশ তো নিছক কাঁটাতার দেওয়া ভূমিখণ্ড, যাকে রাজনৈতিক কারণে ভাগ করা হয়েছে। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

দু’টিই স্বাধীনতার গল্প। তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে, হেডস্যার আর তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের দেশপ্রেমের বেসুরো গান গাইবার ব্যাপারে যতটা ছুৎমার্গহীন ভাবে স্বাধীন (তা শ্রোতাদের যতই যন্ত্রনা দিক না কেন), উইলিয়াম ওয়ালেসের মুক্তির স্বপ্ন কিন্তু ততটাই স্বাধীন। কিন্তু ওয়ালেসের স্বপ্ন আমাকে যতটা বাঁচতে শেখায়, হেডস্যারের গান আমায় ততটাই যন্ত্রণা দেয়। অথচ দুটোই স্বাধীনতার উদ্‌যাপন। এ এক অদ্ভুত সঙ্কট।

আমাদের দেশ কি সত্যিই স্বাধীন, নাকি আমরা ভারতীয়রা স্বাধীনতার মানে ভুলতে বসেছি— এ নিয়ে বহু তর্ক, আলোচনা, লেখালেখি, মারপিট হয়েছে। তাই এ নিয়ে বাতুলতা না করে আজ ১৫ অগস্টে আমরা তাকাই আমাদের নিজেদের স্বাধীনতার দিকে। উদ্‌যাপনের জন্য যার কোনও দেশের বা দিনের অজুহাতের প্রয়োজন নেই। ভগৎ সিংহ, নেতাজিরা বলেছেন, স্বাধীনতা কেউ কাউকে দেয় না, ওটা কেড়ে নিতে হয় (মতান্তরে অর্জন করতে হয়)। যে নরম লোকটা কর্পোরেট নোংরামিতে ক্লান্ত হয়ে ভাবছে আজ নৃশংস, পিশাচ বসের কানের গোড়ায় একটা বিরাশি শিক্কা বসাবে, তাকেও আজ মাথা নিচু করেই প্রোজেক্ট ফাইল জমা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে নায়িকা আজ ভীষণ ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চায় আর আপস নয়, এ বার লাইম লাইট ও মার্সিডিজ ছেড়ে পাহাড়ে একরত্তি বাড়িতে থাকতে শুরু করবে, সেও শ্যুটিংয়ে আজ কলটাইমে পৌঁছবে। মধ্যবিত্ত যে লোকটা আজ ভাবছে, ‘বিয়ে’ নামক প্রতিষ্ঠান আর সংসার নামক প্রহসন আর সে টানতে পারছে না, নন্দিনীর সঙ্গে গোপন প্রেম প্রকাশ করে পুড়িয়ে দেবে এই সাজানো বাগান, ভেঙে দেবে ‘পরকীয়া’ শব্দটিকে, সেও আজ মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে জামাইষষ্ঠী পালন করতে। যে বোন তার মামাতো ভাইকে ভালবেসেছিল, আজ তাকেই ভাইফোঁটা দিচ্ছে পারিবারিক ভিড়ে বসে। আমার মা ভাবছেন, ষাট বছর বয়সে এসে প্রথম সিগারেট কেন লুকিয়ে খেতে হয়!

একটি মানুষ যদি অন্য একটি মানুষকে ভালবাসতে পারে, ঘৃণা করতে পারে, তবে এক জন মানুষের, একজন নাগরিকের সর্বৈব অধিকার আছে সে দেশকে ভালওবাসতে পারে, ঘৃণাও করতে পারে।

একটি মানুষ যদি অন্য একটি মানুষকে ভালবাসতে পারে, ঘৃণা করতে পারে, তবে এক জন মানুষের, একজন নাগরিকের সর্বৈব অধিকার আছে সে দেশকে ভালওবাসতে পারে, ঘৃণাও করতে পারে। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

আমরা সবাই ভাবছি, আমরা কি স্বাধীন? নিয়মিত সাদামাঠা অভ্যেসের জীবনের বাইরে একটুখানি বাঁচতে গেলেই নড়াচড়া মাত্র শিকলের ঝনঝনানি শুনতে পাওয়া যায়। আষ্টেপৃষ্ঠে শিকলে বাঁধা আমরা জানিও না সভ্যতার দোহাইয়ে, সংস্কৃতির অজুহাতে নিজেদের হাত-পা কী ভীষণ রোজকার লোহার নিগড়ে বেঁধে ফেলেছি! সুবিধাজনক অবস্থান ছাড়া এতটুকু নড়তে নারাজ আমরা। ভাবি, পাছে শিকলের ঝনঝনানি কানে তালা ধরিয়ে দেয়। অতএব সবার আগে যা ছুট্টে পালিয়েছে, তা স্বাধীনতার বোধ। আমরা এক ধরনের আদিম স্থবিরতায় বিশ্বাসী, যার চলন খালি চোখে ধরা পড়ে না। সামাজিকতা, লৌকিকতা, সভ্যতার পতাকা নিয়ে অধিকাংশ ভারতীয় খায়, প্রাতঃকৃত্য করে তার পর একদিন দুম করে মরে যায়। মাঝে মাঝে ভাবে, সে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক, অথচ একটা আস্ত জীবন সামাজিক নিয়মেই ফূর্তি করে কাটিয়ে দেয় স্বাধীনতার ইউটোপিয়ায়। আজীবন সে তার পূর্বসূরিদের তৈরি করা নিয়মের বাইরে একটি কাজও করেনি, বরং প্রতি নিয়ত খুন করে চলেছে প্রত্যেকটি ব্যক্তিগত চাহিদা, ইচ্ছে, স্বপ্নকে। আর ক্রমাগত দাবি করছে সে স্বাধীন, সে মুক্ত। সমালোচনা করছে নীনা গুপ্তর যৌনজীবন নিয়ে, মাসাবার জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে, নুসরতের বিবাহিত জীবন নিয়ে। তাদের আলোচ্য বিষয় হল, নুসরতের (জাহান) অনাগত সন্তানের পরিচয় লুকিয়ে আছে পিতৃপরিচয়ে, তার মাতৃপরিচয়ে নয়, শ্রাবন্তী (চট্টোপাধ্যায়) কতগুলো বিয়ে করবে তার হিসেব, দেবলীনা (দত্ত) কেন হাটের মাঝে বলল গরুর মাংস রাঁধবে, ইত্যাদি। অথচ এ সবই সেই মহিলাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা! এদের পথগুলো প্রচলিত নয় বলে, যে ভাবে হোক সবাই মিলে গলা টিপে মারতে হবে এ সমস্ত স্বাধীনতাকে। এমন ভাবে সর্বত্র অসম্মান করতে হবে, যাতে কেউ আর স্বাধীন পথে হাঁটার, নিজের মতো বাঁচার, ব্যক্তিগত সত্যি কথা বলার সাহস না পায়, সমাজের পচে যাওয়া নিয়মগুলো না মুছে ফেলতে পারে।

মাঝে মাঝে আবার নিজেকে দেশপ্রেমী সাজানোর দাবি তৈরি হয়। ‘দেশ’ নামক যে ধারণাটিতে সুড়সুড়ি দিয়ে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল ফায়দা লুটছে আর দেশপ্রেমী সাজিয়ে গোলামির আস্তাবলে জাবর কাটানো হচ্ছে। সে ব্যাপারে চোখ বন্ধ আমাদের। আদপে ২০২১-এর ১৫ অগস্টে দাঁড়িয়ে আমরা কলুর সেই বলদ, যাকে বিশ্বাস করানো হয়ছে যে সে কলুর ঘানি টেনে তেল বার করতে ভালবাসে। সিস্টেমের তৈরি করা প্রতিটি নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আমরা হয়ে উঠেছি এ সিস্টেমের পতাকার ধারক, বাহক। যার কোনও ব্যক্তিগত চাহিদার স্বপ্ন নেই। কারণ, সমাজ তার অনুমোদন দেয়নি। তাই আমির খান অসহিষ্ণুতার কথা বলে দেশ ছাড়তে চাইলে দেশদ্রোহীর তকমা দেওয়া হয়। সিনেমা বয়কটের চাপ দেওয়ার খেলা শুরু হয়। দেশ তো নিছক কাঁটাতার দেওয়া ভূমিখণ্ড, যাকে রাজনৈতিক কারণে ভাগ করা হয়েছে। এর বাইরে কিছু নয়। দেশ মানে তো আসলে দেশের মানুষ। একটি মানুষ যদি অন্য একটি মানুষকে ভালবাসতে পারে, ঘৃণা করতে পারে, তবে এক জন মানুষের, একজন নাগরিকের সর্বৈব অধিকার আছে সে দেশকে ভালওবাসতে পারে, ঘৃণাও করতে পারে। দেশ একটা ‘ইমোশন’ বই আর কিচ্ছু নয়। যে আবেগ আমাদের গিলিয়ে দেয়, আমরা প্রথমে ভারতীয়। তার পর বাঙালি। তার পর কলকাতার লোক এবং সবশেষে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। টুকরো করে দেয় আমাদের পরিচয়। শেখায় বাঁকুড়া, মেদিনীপুর আর কলকাতার মানুষেরা আলাদা। খুব সূক্ষ্মভাবে গিলিয়ে দেওয়া দেশাত্মবোধ ভেদাভেদ তৈরি করে!

একটি যথার্থ মৃত্যুর কারণ খুঁজতে চাই, যা বেঁচে থাকাকে অন্তত একটা মানে দেবে।

একটি যথার্থ মৃত্যুর কারণ খুঁজতে চাই, যা বেঁচে থাকাকে অন্তত একটা মানে দেবে। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

আসলে আর পাঁচটা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতির মতোই স্বাধীনতা একটা বোধ। পাহাড়ে যে ছেলেটা নিজের হাতে তৈরি করা ক্যাফে চালায়, যে দিন ইচ্ছে হয় ক্যাফে বন্ধ করে পাহাড়ের ঢালে বসে বাঁশি বাজায়, যে দিন ইচ্ছে হয় না, রান্না করে না, সে ঢের বেশি স্বাধীন! এ সভ্যতার সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের চেয়ে স্বাধীন। ‘সম্পূর্ণ স্বাধীনতা’ বলে বোধহয় কিছু হয় না। কেউ যদি কোনওক্রমে পুরোপুরি সমাজ নামক ধারণাটিকে উপেক্ষা করে উঠতে পারে, তাও সম্পর্ক, অনুভূতি, বিশ্বাস, মায়ার বাঁধন থেকে নিজেদের মুক্ত করা অসম্ভব। কারণ, ওই প্রত্যেকটা বাঁধন নিজের হাতে যত্ন করে বাঁধা। জটিল তার গিঁট। যে মানুষ দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়েছে, স‌ে তার কাছের মানুষকে ব্যথা না দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় প্রতি নিয়ত। তবে কিসের স্বাধীনতা, কোথায় বাঁচার মুক্তি? আসলে হয়ত মুক্তি লুকিয়ে আছে বিযুক্তিতে। ভালবেসেও যে বিযুক্ত হতে জানে, সে-ই হয়ত বোঝে স্বাধীনতার মানে। পাহাড়ের ঢালের কফির দোকানের সেই ছেলেটির কারও কাছে কিছু প্রমাণের দায় নেই। জীবনধারণের জন্য, টিকে থাকার জন্য যেটুকু আপস, সেটুকুই দরকার। বাকি আর কিছু তোয়াক্কার প্রয়োজন নেই, শুধু নিজের মর্জির মালিক হয়ে প্রাণভরে বেঁচে নেওয়ায় বিশ্বাসী সে।

আষ্টেপৃষ্ঠে শিকলে বাঁধা আমরা জানিও না সভ্যতার দোহাইয়ে, সংস্কৃতির অজুহাতে নিজেদের হাত-পা কী ভীষণ রোজকার লোহার নিগড়ে বেঁধে ফেলেছি!

আষ্টেপৃষ্ঠে শিকলে বাঁধা আমরা জানিও না সভ্যতার দোহাইয়ে, সংস্কৃতির অজুহাতে নিজেদের হাত-পা কী ভীষণ রোজকার লোহার নিগড়ে বেঁধে ফেলেছি! গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ

যার কাছে যা নেই, সে তা-ই নিয়ে বার বার কথা বলে, অভিযোগ করে, আঙুল তোলে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি এবং আমার সিনেমা সেই উত্তরই খোঁজে। ‘ইউনিকর্ন’ থেকে ‘ভটভটি’ অবধি আমি যা ছবি বানিয়েছি, সে সমস্তই স্বাধীনতারই খোঁজ। মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়ার গল্প রয়েছে সেখানে। কখনও ওয়েব সিরিজ বানাতে গিয়ে খুনির হাতে তুলে দিয়েছি খুন করার যথেচ্ছ স্বাধীনতা, ভূতের ছোট ছবি বানাতে গিয়ে ভূতের হাতে তুলে দিয়েছি একাকীত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ— এ সব আমার ব্যক্তিগত পরাধীনতাকে ঢেকে ফেলার এক দৈন চেষ্টা। পরাধীনতার হীনমন্যতা থেকে তৈরি হওয়া দলিল, নিজের চরিত্রদের হাত ধরে মুক্তির পথ খোঁজা। আসলে আমিও প্রতিটি দিন, প্রতিটি মূহূর্ত স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই, নিশ্বাস নিতে চাই দায়হীন ভাবে। যেখানে ১৫ অগস্টে পতাকা তুলে, জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে প্রমাণ করতে হয় না, আমি স্বাধীন। সিস্টেমের সঙ্গে লড়াই লড়তে লড়তে সবাই যখন ‘মার্সি’ বলে আর্তনাদ করবে, তখন চিৎকার করে বলতে চাই— ‘ফ্রিইইইইইইডম’! একটি যথার্থ মৃত্যুর কারণ খুঁজতে চাই, যা বেঁচে থাকাকে অন্তত একটা মানে দেবে।

‘‘উই আর অল ইন দ্য গাটার, বাট সাম অব আস আর লুকিং অ্যাট দ্য স্টার্স’’— অস্কার ওয়াইল্ড।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

Tathagata Mukherjee nusrat jahan Srabanti Chatterjee Debolina Dutta freedom 75th Independence Day Nationalism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy