Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

থাকুন দুধে-ভাতে

মাছভাতের একদম ভেতো বাঙালি। কিন্তু হলিউডের মেগান ফক্স, জেসিকা বেইলের লো কার্ব ডায়েট নিয়ে ধন্যি ধন্যি পড়ে যাবার খবর ইন্টারনেটে পড়েছেন। তারপর নিজেদের খাদ্যাভ্যাস গেছেন ভুলে। যেন স্মার্ট ফোন হাতে নিয়ে ভাতের বদলে পাস্তা খাচ্ছি বললে বেশি স্মার্ট শোনায়। লিখছেন চিন্ময় রায়মাছভাতের একদম ভেতো বাঙালি। কিন্তু হলিউডের মেগান ফক্স, জেসিকা বেইলের লো কার্ব ডায়েট নিয়ে ধন্যি ধন্যি পড়ে যাবার খবর ইন্টারনেটে পড়েছেন। তারপর নিজেদের খাদ্যাভ্যাস গেছেন ভুলে। যেন স্মার্ট ফোন হাতে নিয়ে ভাতের বদলে পাস্তা খাচ্ছি বললে বেশি স্মার্ট শোনায়।

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

উঃফ্ ভাত!

সেদিন ৪৫ কেজি-র রুগ্ণ চেহারার ফর্সামতন একটা মেয়ে জিমে এসে বলল, ‘‘স্যার, গালের ফ্যাট আর ওজন কমাতে চাই।’’ উত্তরে বললুম, ‘‘আর ঝরালে নিজে ঝরে যাবে। তা কী খাওয়া হয়?’’ বলল, ‘‘ দিনে তিনবার খাই। ভাত-রুটি ভুলে গেছি। স্যুপ আর স্যালাডেই গ্ল্যামার ধরে রেখেছি।’’ বেচারি! পূর্বের সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে, অথচ পশ্চিমকে নকল করতে গিয়ে নিম্ন রক্তচাপের শিকার। সেই নিয়েই কিনা সিনেমায় নামার চাপ বাড়াতে চায়।

নেট ঘেঁটে গিনিপিগ

এক সময়ে সাড়া জাগানো প্রিতিকিন ডায়েট প্ল্যান এখন ‘প্রিমিটিভ’। ২০১৩-য় গুগলে সবচেয়ে বেশি হিট পালেও ডায়েট, যার রিং টোন হল লো কার্ব। হেল বেরি, মেগান ফক্সদের দিয়ে বলানো হল, উচ্চমানের প্রোটিন, প্রয়োজনীয় ফ্যাট, সব্জি, ফল—এ সব খেয়ে ওজন কমান। ভাত-রুটি, চিনি, দুগ্ধজাত খাবার, প্রসেসড ফুড ইত্যাদিকে কালো তালিকায় ফেলুন।

পালেও ডায়েট যদি মেগা হিট হয় তো ড্যাশ ডায়েট হল সুপার হিট। এই ডায়েটের মাহাত্ম্য হল উচ্চ রক্তচাপের রক্তচক্ষু এড়াতে কী কী খাবেন তার হদিশ। আর অ্যালঝাইমার ঠেকাতে মাইন্ড ডায়েট হল শুধুই হিট। আমাদের দুর্ভাগ্য, ডায়েট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অনেকেই নিজেদের গিনিপিগ বানাচ্ছেন। সুস্থ শরীরের ওজন কমাতে গিয়ে গ্যাসট্রাইটিস, আলসার, নিম্ন রক্তচাপ, অবসাদকে সাদরে আহ্বান করছেন।

শরীরের পেট্রল-ডিজেল

আগে বিজ্ঞানটা বুঝুন। কার্বোহাই়ড্রেট হল তাৎক্ষণিক জ্বালানি। ১ গ্রামে ৪ ক্যালরি শক্তি। দৌড়ঝাঁপ, দ্রুত হাঁটা, ফুটবল খেলা— এ সবের জন্য তাৎক্ষণিক এনার্জি আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। লো কার্ব, অথবা নো কার্ব ডায়েটে থাকলে এই সব কাজে এনার্জি-হীনতায় ভুগবেন। ফ্যাট হল লম্বা রেসের ঘোড়া। ১ গ্রামে থাকে ৯ ক্যালরি শক্তি। ধরুন, ৪০ মিনিট হেঁটেছেন। এর বেশির ভাগ জ্বালানি আসছে ফ্যাট থেকে। আর প্রোটিন হল দুঃসময়ের জ্বালানি, মানে রিজার্ভে থাকা পেট্রল। অসুস্থ বা যখন অন্য জ্বালানি শেষ, তখন ১ গ্রাম প্রোটিন ৪ ক্যালরি শক্তির জোগান দেয়।

মুজরিম কৌন?

রান্না করা ১০০ গ্রাম সাদা ভাতে থাকে ১৩০ ক্যালরি। ব্রাউন রাইস হলে ১১০ ক্যালরি। সেদ্ধ করা ১৯৯ গ্রাম মুরগির মাংস বা মাছে আছে ১১০ ক্যালরি। ১০০ গ্রাম সেদ্ধ ডিমে ১৫৫ ক্যালরি। ১০০ গ্রাম রুটিতে ১৭০ ক্যালরি। ১০০ গ্রাম হোলমিল্কে মাত্র ৬০ ক্যালরি। এসব তথ্য প্রমাণ করে কার্বোহাইড্রেট কিন্তু আসল আসামি নয়, বরং কেক, প্যাস্ট্রি, কুকিস, মিষ্টি, চিনি ইত্যাদি কার্ব খাওয়া ব্যবহারকারীই।

প্ল্যানিং-য়ের মাপকাঠি

কার শরীরে কোন ডায়েট প্ল্যান খাটবে তার জন্য অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। আপনি অ্যাক্টিভ, না সেডেন্টারি, আপনার বয়স, লিঙ্গ, বর্তমান খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি একটা দিক। পাশাপাশি শরীরের পেশির সঙ্গে মেদের অনুপাত দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। পেশির অনুপাত বেশি হলে কার্ব নেওয়া যেতেই পারে। পেশির শতাংশ ঠিক করে বিপাকের হার। বিপাকের হার বেশি হলে কার্ব কমানের দরকার নেই। এতগুলো ফ্যাক্টর অনুসন্ধান না করে, মেগান ফক্সকে নকল করা মানে ফাটকা বাজারে টাকা লাগানোর সমান।

বিশেষজ্ঞের মত

‘ডোন্ট লুজ ইয়োর মাইন্ড। লুজ ইয়োর ওয়েট’—বইটি ভালই লিখেছেন করিনা কপূরের ডায়েটিসিয়ান রুজুতা দিভেকর। করিনা কপূরের ‘তশান’ সিনেমা সাইজ জিরোর স্থপতি উনিই। ভাত-রুটির মতো কার্বের সমর্থনে রুজুতা বলেছেন, ‘‘ভাত খেলেই ওজন বাড়ে ধারণাটা ডাহা ভুল। ব্রাউন রাইসের রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বাড়ায় আর কোলন ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায়।’’

চালডালের মডেল

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো টুনামাছ, চিকেন ব্রেস্ট খেয়ে সুপার মডেলদের পাশে তাঁর পুরুষালি চেহারা দেখাচ্ছেন, ঠিক কথা। আবার আমাদের চুলবুল পাণ্ডে চালডাল খেয়ে সিক্স প্যাক দেখাচ্ছেন। সানিয়া মির্জার প্রিয় খাবার হল বিরিয়ানি। গ্রিক দেবতার মতো হৃত্বিক রোশনের শরীর। ওর খাদ্যতালিকায় আছে ভাত, ওটস-এর মতো কার্ব। ক্রিকেটার শিখর ধবন ভাত-রুটির শিকড়টা ভুলে যায়নি। ও কিন্তু একদম ‘লিন ও ম্যাচো’।

বাণিজ্যের ধান্ধা

লো কার্ব হোক, বা নো কার্ব—এসব প্রচারের পিছনে যে ব্যবসায়িক ধান্ধা সেটা বোঝা, রকেট বিজ্ঞান বোঝার মতো কঠিন নয়। কার্বের বদলে প্রোটিন নাও। ব্যস্ত জীবনে চিকেন স্ট্যু, ডিম সেদ্ধ বানানো একটা চাপ। তার সমাধান কী? না, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট। হোয়ে প্রোটিন, মেগা মাস, প্রো মাস—এ সব জোগান দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠছে নানান আন্তর্জাতিক কোম্পানি। সুতরাং যে জানো বুঝ হে সন্ধান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy