রেমালের সঙ্গে কতটা এঁটে উঠতে পারল টলিপাড়া? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রবিবার রাতে রাজ্যে রেমালের ধাক্কা। সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনেই বিপর্যস্ত দক্ষিণবঙ্গের জনজীবন। কলকাতায় সকাল থেকেই একনাগাড়ে বৃষ্টি। গাছ পড়ে একাধিক রাস্তা বন্ধ। গণপরিবহণও ব্যাহত। তার মধ্যেই রেমালের সঙ্গে সারা দিন লড়াই করল টলিপাড়া। কোথাও বন্ধ থাকল শুটিং। আবার কোথাও চ্যালেঞ্জ নিয়েই দিনভর চলল কাজ।
সম্প্রতি শহরে ‘ডিয়ার মা’ ছবির শুটিং শুরু করেছেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। ছবিতে জয়া আহসান, পদ্মাপ্রিয়া জানকীরমণ, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, চন্দন রায় সান্যালেরা রয়েছেন। পরিচালক কোনও ভাবেই শুটিং বন্ধ রাখার পক্ষপাতী নন। জানালেন, রবিবারেও রাত ৮টায় ইউনিট প্যাকআপ করেছেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে অনিরুদ্ধ বললেন, ‘‘ছবির একটা নিজস্ব ছন্দ আছে। আমি একা ছবি তৈরি করি না। এত জন মানুষ একসঙ্গে কাজ করছেন। আমরা একটা মেজাজে চলে এসেছি। এখান থেকে এখন বেরোনো মুশকিল।’’
অন্য দিকে, পরিচালক পাভেল তাঁর নতুন ছবি ‘পরান যাহা চায়’-এর শুটিং সোমবার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। পরিচালক বললেন, ‘‘সোমবার আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং করার কথা ছিল। কিন্তু রবিবার বিকালে পরিস্থিতি দেখে আমরা শুটিং পিছিয়ে দিয়েছি।’’ এই ছবিতে পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর মতো একাধিক বয়স্ক অভিনেতা রয়েছেন। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে পরিচালক বললেন, ‘‘বৃষ্টির মধ্যে তাঁদের কথা ভেবেই শুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। কারণ বৃষ্টিতে ভিজে ওঁদের শরীর খারাপ হোক, সেটা আমি চাই না।’’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ ও সুরিন্দর ফিল্মস সোমবার কলাকুশলীদের সুরক্ষার কথা ভেবেই শুটিং বন্ধ রেখেছিল। আবার, সোমবার দেবকে নিয়ে ‘টেক্কা’র এক দিনের শুটিং শেষ করার কথা ছিল পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। সূত্রের খবর, আবহাওয়া দেখে পরিচালক শুটিং বাতিল করেছেন।
সোমবার টলিপাড়ায় একাধিক ধারাবাহিকের শুটিং যেমন বন্ধ রাখা হয়েছিল, তেমনই আবার কিছু ধারাবাহিকের এপিসোড ব্যঙ্কিংয়ের কথা মাথায় রেখে শুটিং করা হয়েছে। তবে সব ফ্লোরেই অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ কিছুটা দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে। অনেকেই দ্রুত শুটিং শেষ করতে চেয়েছেন। আবার কোনও কোনও ফ্লোরে বৃষ্টির দিনেই দুপুরে খিচুড়ি-সহ আড্ডায় মেতেছেন কলাকুশলীরা। তবে আড্ডার মুখ্য বিষয় ছিল রেমাল সংক্রান্ত আলোচনা।
জি বাংলার ‘জগদ্ধাত্রী’, ‘যোগমায়া’, ‘অষ্টমী’ ও ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’ ধারাবাহিকগুলির শুটিং চলেছে। তবে খারাপ আবহাওয়ার জন্য ইউনিটকে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ‘অষ্টমী’ ধারাবাহিকের নামভূমিকায় অভিনয় করেন ঋতব্রতা দে। মুকুন্দপুরের সত্য স্টুডিয়োয় শুটিংয়ের ফাঁকে বললেন, ‘‘সকাল থেকে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। শহর থেকে একটু দূরে বলে ঝড়ের দাপটটা এখানে আরও বেশি বুঝতে পারছিলাম।’’ সোমবার গল্প অনুযায়ী অষ্টমী ও আয়ুষ্মানের বিয়ে। তাই ফ্লোরে কেউই হালকা মেজাজে থাকতে পারেননি। ঋতব্রতার কথায়, ‘‘ক্লাইম্যাক্স সিন। তাই সকাল থেকেই কাজের দিকেই মন দিয়েছিলাম।’’
ঠাকুরপুকুরে বলাকা স্টুডিয়োতে চলছে এই চ্যানেলেরই ‘জগদ্ধাত্রী’ ধারাবাহিকের শুটিং। চরিত্রাভিনেত্রী অঙ্কিতা মল্লিকের কলটাইম ছিল বিকালের দিকে। স্টুডিয়োর পথে যেতে যেতে বললেন, ‘‘এখনও ফ্লোরে পৌঁছতেই পারিনি। তাই জানি না কী পরিস্থিতি। তবে রাস্তায় জল জমেছে, গাছ পড়েছে। দেখা যাক, কী হয়।’’ কর্পোরেট সংস্থার মতো বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ নেই বলে অঙ্কিতা যে মুষড়ে পড়েছেন, তা কিন্তু নয়। বললেন, ‘‘দর্শকের কথা ভাবতেই হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। তবে শুনছি, আজ আগে প্যাক আপ হতে পারে।’’
সোমবার থেকেই শুরু হচ্ছে স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক ‘উড়ান’। তাই এপিসোড ব্যাঙ্কিংয়ের জন্য শুটিং বন্ধ রাখা সম্ভব হয়নি। অন্য দিকে, মুভিটোন স্টুডিয়োয় ‘রোশনাই’-এর সেটে সময় মতো পৌঁছে গিয়েছিলেন শন বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থাৎ গল্পের আরণ্যক। জানালেন, যানবাহনের সমস্যার জন্য ইউনিটের অনেকেই দেরিতে ফ্লোরে পৌঁছেছেন। শনের কথায়, ‘‘রাত থেকে বৃষ্টি চলছে। আমাদের ইনডোর শুটিং হচ্ছে বলে খুব একটা সমস্যা হয়নি।’’ এরই সঙ্গে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে আলাদা বার্তা দিলেন অভিনেতা। শন বললেন, ‘‘শটের ফাঁকে মোবাইলে শহরের পরিস্থিতি দেখছি। আমার মনে হয়, যে কোনও রকম দুর্ঘটনা এড়াতে খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষের আজকের দিনটা বাড়িতেই থাকা উচিত।’’
শহর থেকে দূরে দাসানি ২ স্টুডিয়োয় চলছে এই চ্যানেলের ‘গীতা এলএলবি’ ধারাবাহিকের শুটিং। পর্দার গীতা ওরফে হিয়া মুখোপাধ্যায় জানালেন, সোমবার বেশ কষ্ট করেই তাঁকে ফ্লোরে পৌঁছতে হয়েছে। কারণ, রাস্তায় অনেকটাই জল জমেছিল। বললেন, ‘‘ক্যাব চালক বলছিলেন স্টুডিয়োর আগের মোড়ে নেমে যেতে। অনেক বুঝিয়ে তার পর তিনি আমাকে স্টুডিয়োর দরজায় নামালেন।’’ তবে ফ্লোরে কেউই ছুটির মেজাজে ছিলেন না বলে জানালেন তিনি। হিয়ার কথায়, ‘‘ইউনিটের অনেকেই দূর থেকে আসেন। এত কষ্ট করে তাঁরা পৌঁছেছেন! তাই আরও মন দিয়ে আমরা শুটিং করার চেষ্টা করেছি।’’
সান বাংলার ‘কনস্টেবল মঞ্জু’, ‘দ্বিতীয় বসন্ত’, ‘বাদল শেষের পাখি’ ধারাবাহিকগুলির শুটিং হয়েছে সোমবার। ‘কনস্টেবল মঞ্জু’র অর্জুন অর্থাৎ অভিনেতা শুভ্রজিৎ সাহা সকাল সকাল ফ্লোরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু চিত্রায়ণ স্টুডিয়োয় শুটিং শুরু হয়েছে অনেকটা দেরি করে। শুভ্রজিৎ বেহালায় থাকেন। বললেন, ‘‘সকালে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েই দেখি, রাস্তায় গাছ পড়ে আছে। পুরসভার কর্মীদের কুর্নিশ জানাই। খুব তৎপরতার সঙ্গে ওঁরা কাজ করেছেন।’’ শুটিং শুরু হয়েছে দেরিতে। কারণ, শুভ্রজিৎ জানালেন, বৃষ্টির আওয়াজে সাউন্ড রেকর্ড করতে সমস্যা হচ্ছিল। বললেন, ‘‘যাবতীয় প্রতিকূলতা সামলেই আমরা সকলে শুটিং করেছি। অন্য রকম অভিজ্ঞতা হল।’’ উল্লেখ্য, রেমালের কথা মাথায় রেখেই সোমবার কালার্স বাংলা তাদের কোনও ধারাবাহিকের শুটিং করেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy