ছবির একটি দৃশ্য
সহজ পাঠের গপ্পো
পরিচালনা: মানস মুকুল পাল
অভিনয়: সামিউল আলম, নুর ইসলাম, স্নেহা বিশ্বাস
৭.৫/১০
সহজ কথা বলা বড় কঠিন। সহজ ভাবে বলা আরও কঠিন। জীবনের মারপ্যাঁচই আমাদের সহজ ভাবনাগুলোকে জটিল করে দেয়।
তবে এই জটিলতা বোঝে না শৈশব। তার স্পর্শ পরশপাথরের মতো। মুছে দিতে পারে সব কাঠিন্য। এই স্পর্শই এনে দেয় মানস মুকুল পাল পরিচালিত ‘সহজ পাঠের গপ্পো’। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ‘তালনবমী’ অবলম্বনে মানসের এই ছবি যেমন ‘সহজ’, তেমন ‘পাঠ’ও দেয় দর্শককে।
সেই পাঠ উপলব্ধি করা কঠিন। সেই পাঠ কঠিন যাপনের মধ্যেও সহজ চোখে জীবনকে দেখার পাঠ। যে সহজিয়া ছড়িয়ে আছে গ্রামবাংলার সবুজে ঘেরা আলপথে, আকাশে উড়তে থাকা গাঙচিলের ডানায়। যে সহজিয়ার ভরসায় রোজকার বিভাজন, বঞ্চনার নিত্যতার মধ্যেও আশা, স্বপ্ন নিয়ে জীবন বেঁচে থাকে। বাঁচেন আমাদের রাজ্যের, দেশের অধিকাংশ মানুষ।
ছবিতে গোপাল আর ছোটু, দুই ভাইয়ের চোখ দিয়ে এই দুনিয়াটার ছবিই দেখিয়েছেন মানসমুকুল। বিভূতিভূষণের অবলম্বন থাকলেও ‘সহজ পাঠের গপ্পো’ তার গণ্ডি ছাড়িয়ে স্বাধীন। সেই স্বাধীনতা পরিচালকের সাহস। সেই সাহসের জন্যই তাঁর ছবির কিছু কিছু দৃশ্য ‘পথের পাঁচালী’কে মনে পড়িয়ে দেয়। সেই সাহসের জন্যই মানস মুকুল তাঁর ছবিতে এমন একটা ট্রেনের দৃশ্য তৈরি করেন, যা পেলব নয়। তা ধাক্কা দেয় দর্শককে।
ঘোষিত ‘রাজনৈতিক’ ছবি না করেও যে যাপিত জীবনে বয়ে চলা নানা রাজনীতির স্রোতকে যে তুলে ধরা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন মানস মুকুল তাঁর চিত্রনাট্যে। নানা শ্রেণির মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি ধরা রয়েছে ছবিতে। গ্রামের উচ্চশ্রেণির পরিবারেও নারীকে নিয়ন্ত্রণ করে চলা অদৃশ্য পুরুষকণ্ঠটির মধ্য দিয়ে বোঝা যায় লিঙ্গ রাজনীতির বাস্তবতাও।
চন্দ্রদীপ গোস্বামী ও ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সঙ্গীত ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। গ্রামবাংলার দৈনন্দিন জীবন, সেই জীবনের মধ্যে থাকা অসাম্যের বাস্তবতা, সেই বাস্তবতা প্রত্যাখ্যানকে স্বীকার করেও সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই— এ সব বাঙ্ময় হয়ে ওঠে ছবির আবহসঙ্গীত ও শব্দের ব্যবহারে। মৃণ্ময় মণ্ডল ও সুপ্রতিম ভোলের সিনেম্যাটোগ্রাফি যোগ্য সঙ্গত করেছে। গোপালের চরিত্রে সামিউল আলম ও ছোটুর চরিত্রে নুর ইসলাম ইতিমধ্যেই শিশুশিল্পীর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত। দুই খুদেই পরিচালকের আবিষ্কার। নুরের মায়ময় চোখ দু’টি মনে থেকে যায়। তাদের মায়ের চরিত্রে স্নেহা বিশ্বাস ও অন্য চরিত্রে বাকিরা যথাযথ।
কেবল অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই নন, ছবিতে একটা পৃথক চরিত্র হয়ে ওঠে তাঁদের মুখের ভাষা। উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামাঞ্চলের কথ্য ভাষাই ব্যবহার করা হয়েছে গোটা ছবিতে। সেই ব্যবহারেই ছবি যেন আরও প্রাণবন্ত।
প্রাণের এই ছোঁয়া থেকে যায় ছবির নির্মাণে, কোনও ভান নেই বলে। তাই অল্প বয়সেই ছোটুর দাদা গোপাল বুঝে যায় জীবনের বাণিজ্যিক সত্যিটা। ছোটুর সারল্য অবশ্য তখনও অপাপবিদ্ধ। তার সংলাপই নাগরিক যাপন, নাগরিক অনুভূতি কতটা মেকি তা বোঝার ‘পাঠ’ দিয়ে যায় আমাদের। তাই এমন ছবি আরও হোক, থেকে যায় এই প্রত্যাশাটুকু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy