Have a look at the colourful life of Urmila Matondkar dgtl
Urmila Matondkar
রামগোপালের স্ত্রীর চড় সহ্য করেন ঊর্মিলা, তাঁকেই অন্তরা মালির জন্য ছেঁটে ফেলেন পরিচালক!
রামগোপাল বর্মার সঙ্গে সম্পর্ক, শারীরিক নির্যাতনের শিকার থেকে শুরু করে এক রাতের মধ্যেই সুপারস্টার তকমা—মহারাষ্ট্রের এক মারাঠি পরিবারে জন্ম নেওয়া ঊর্মিলা মাতণ্ডকরের জীবন এক বর্ণময় অধ্যায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ১৫:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
রামগোপাল বর্মার সঙ্গে সম্পর্ক, শারীরিক নির্যাতনের শিকার থেকে শুরু করে এক রাতের মধ্যেই সুপারস্টার তকমা—মহারাষ্ট্রের এক মরাঠি পরিবারে জন্ম নেওয়া ঊর্মিলা মাতণ্ডকরের জীবন এক বর্ণময় অধ্যায়।
০২২৪
মাত্র ছয় বছর বয়সে মরাঠি ছবি ‘জাকোল’ দিয়ে ফিল্মি দুনিয়ায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। ছোট থেকেই শখ ছিল অভিনেত্রী হবেন। তাঁর দিদিও সিরিয়ালে অভিনয় করতেন। তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি শ্যাম বেনেগল পরিচালিত ‘কলিযুগ’। রেখা, রাজ বব্বরের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে এই ছবিতে কাজ করার সুযোগ হয় তাঁর। তখন যদিও তিনি খুবই ছোট।
০৩২৪
সাল ১৯৮৩। ঊর্মিলা অভিনয় করেন শেখর কপূর পরিচালিত ছবি ‘মাসুম’-এ। এই ছবিতে ‘লকড়ি কি কাটি’ গানটি তাঁর উপরেই আধারিত ছিল। প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেতা হিসেবে ঊর্মিলার প্রথম হিন্দি ছবি ‘নরসিংহ’। ওই ছবিতে ঊর্মিলা ছাড়াও ছিলেন সানি দেওল, ডিম্পল কাপাডিয়া এবং ওম পুরীর মতো অভিনেতা।
০৪২৪
বলিউড এবং দক্ষিণী ছবিতে পর পর কাজ করলেও স্টারডম যেন কিছুতেই ছুঁতে চাইছিল না ঊর্মিলাকে। অভিনয়ের প্রশংসা হচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু সুপারস্টার ট্যাগ কিছুতেই পাচ্ছিলেন না তিনি। এ অবস্থায় তাঁর জীবনে ‘গার্ডিয়ান এঞ্জেল’ হিসেবে আবির্ভাব ঘটে পরিচালক রামগোপাল বর্মার।
০৫২৪
১৯৯২ সাল নাগাদ রামগোপাল বর্মা ঠিক করেন ‘দ্রোহী’ বলে একটি ছবি বানাবেন। সে ছবিতে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। মাধুরীর বাজার তখন তুঙ্গে। কিন্তু ডেট ম্যাচ না করায় সেই ছবি নাকচ করে দেন মাধুরী। এ দিকে রামও ছাড়বার পাত্র নন। তিনি ঠিক করেন হুবহু মাধুরীর মতো দেখতে হবে এমন এক অভিনেত্রীকেই ওই ছবিতে কাস্ট করবেন তিনি।
০৬২৪
ইন্ডাস্ট্রিতে তখন ঊর্মিলার লুক কে মাধুরী এবং শ্রীদেবীর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছিল। রামও সেটা জানতেন। তাই মাধুরী ফিরিয়ে দেওয়ার পর ঊর্মিলাকে সেই ছবি অফার করেন তিনি। এ রকম একটি অফারের সন্ধানেই ছিলেন ঊর্মিলা। তিনি শোনামাত্র রাজি হয়ে যান।
০৭২৪
কে জানত মাধুরীর এই না-করা ছবি আশীর্বাদ হয়ে আসবে ঊর্মিলার জীবনে? ‘দ্রোহী’র শুটিংয়ের সময় এক দিন ডান্স কোরিওগ্রাফার অসুস্থতার কারণে সেটে আসতে পারেননি। এ দিকে শুটিংয়ের সমস্ত আয়োজন হয়ে গিয়েছে। একটি নাচের দৃশ্যে ঊর্মিলাকে রামগোপাল বলেন, “তোমার যে রকম ইচ্ছে মুভমেন্ট করো। আমি শুট করে নেব।” ব্যাস কেল্লাফতে!
০৮২৪
ঊর্মিলার শরীরী হিল্লোল দেখে রাম তখনই ঠিক করেন এঁকে নিয়ে আরও ছবি বানাবেন তিনি। তাঁর সৌন্দর্যে অবাক হয়ে যান পরিচালক। রামের নতুন অবসেশন হন ঊর্মিলা মাতণ্ডকর।
০৯২৪
ওই একটি নাচের দৃশ্য থেকেই জন্ম রামগোপাল বর্মার আইকনিক ছবি ‘রঙ্গিলা’-র। এক দিকে জ্যাকি শ্রফ এবং অন্য দিকে আমির খান। দুই সুপারস্টারের মাঝে জায়গা হয় ঊর্মিলার। জ্যাকি এবং আমিরের স্টারডমের কাছে ঊর্মিলার চরিত্র যাতে ফিকে না হয়ে যায় সে দিকে কড়া নজর ছিল রামের।
১০২৪
আর সে জন্যই ১৯৯৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘রঙ্গিলা’ মুক্তি পেতেই চারিদিকে হইহই পড়ে যায়। দর্শকের নতুন ক্রাশের নাম রাতারাতি হয়ে যায় ‘মিলি’ ওরফে ঊর্মিলা। ওই ছবির ফ্যাশন ডিজাইনার মণীশ মলহোত্রকেও রাম কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন, ছবিতে যেন ঊর্মিলাকে হুবহু শ্রীদেবীর মতো দেখতে লাগে। পরিচালকের কথা মেনে সে রকম জামাকাপড়ই বানিয়েছিলেন মণীশ।
১১২৪
বাকিটা ইতিহাস। এত বছর পরেও ঊর্মিলার সেই ‘আইরে আইরে’ আজও একই রকম জনপ্রিয়। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ঊর্মিলাকে। এক রাতের মধ্যেই তিনি পেয়ে যান সুপারস্টার তকমা। আর রামও পণ করে নেন, এই মেয়েকে তিনি সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যাবেন।
১২২৪
হলও তাই। রামের ছবি মানেই তখন ঊর্মিলা। তিনি ছাড়া ছবি করার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন রামগোপাল বর্মা। ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের বলে বেড়াতেন, ঊর্মিলা তাঁর ‘লাকি চার্ম’। এ দিকে ঊর্মিলাও রামগোপালের পরিচয় দিতেন মেন্টর হিসেবে।
১৩২৪
রামের ‘দউদ’ ছবিতে প্রথমে তিনি অশ্বিনী ভাবেকে নিলেও শেষমুহূর্তে সেই ছবিতেও জায়গা হয়ে যায় ঊর্মিলার। শুধু তাই নয়, ‘সত্য’ ছবিতে প্রথমে নেওয়ার কথা ছিল মহিমা চৌধুরীকে। তিনি ছবিতে সই-ও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু রামের সেই ছবিতেও বাদ পড়েন মহিমা। নেওয়া হয় ঊর্মিলাকে।
১৪২৪
অন্য দিকে ঊর্মিলাও তাঁর ‘গুরু’ রামের অনুমতি ছাড়া কোনও ছবিতে সই করতেন না। সুপারহিট ছবি ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবিতে করিশ্মা কপূরের চরিত্রটির অফার প্রথমে ঊর্মিলার কাছে আসে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ রাম বারণ করেছিলেন। ইন্ডাস্ট্রি মাথা চাপড়েছিল। শাহরুখ-মাধুরীর ওই ছবি না নিয়ে তিনি যে ভুল করছেন, সে বিষয়ে সাবধান করেছিলেন অনেকেই।
১৫২৪
রামের সঙ্গে ঊর্মিলার সম্পর্ক নিয়ে সে সময় সরগরম ছিল বলিউড। মুখে গুরু-শিষ্য বললেও তাঁদের সম্পর্ক যে আরও গভীর, তা বুঝতে কারও অজানা ছিল না। খবর পৌঁছয় রামগোপালের স্ত্রীর কাছে।শোনা যায়, স্বামীর এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি তিনি।
১৬২৪
চড় মেরে বসেন ঊর্মিলাকে। ঊর্মিলা কে চড়! মানতে পারেননি রামগোপালও। স্ত্রী-কে কয়েকদিনের মধ্যেই ডিভোর্স দিয়ে দেন তিনি।
১৭২৪
সব ঠিকই চলছিল। ঠিক এই সময়েই হঠাৎই রামের জীবনে প্রবেশ ঘটে অন্য এক নারীর। তিনি অন্তরা মালি। ঊর্মিলাকে ছেড়ে রাম মজেন অন্তরাতে। লিড রোলে ঊর্মিলার বদলে ক্রমে নিতে থাকেন অন্তরাকে। আর ঊর্মিলা?
১৮২৪
তাঁর পায়ের তলার মাটি ক্রমশ সরে যেতে থাকে। যে মানুষটাকে এতদিন নিজের সব কিছু ভেবে এসেছিলেন, তাঁর থেকেই এমন ব্যবহারে ভেঙে পড়েন তিনি। ছবির অফারও কম আসতে থাকে। রামগোপালের ছবিতেও পেতে থাকেন সাইড রোল।
১৯২৪
এ দিকে এত দিন যাবত রামের ছত্রছায়ায় থাকার জন্য সে ভাবে অন্য যোগাযোগও তৈরি হয়নি ঊর্মিলা। তাই হাতে গোনা ছবি পেতে থাকেন তিনি। এ দিকে বয়সও বাড়ছিল। পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল প্রতিযোগিতা।
২০২৪
সে সময় মাধুরী, ঐশ্বর্যা ছাড়াও দৌড়ে চলে এসেছিলেন প্রীতি, রানি, প্রিয়ঙ্কারা। বেশ কিছু ছবি করেছিলেন ঊর্মিলা, কিন্তু বক্স অফিসে সেগুলো খুব একটা দাগ কাটতে পারেনি।
২১২৪
এলেন রিয়ালিটি শো-র বিচারকের ভূমিকায়। কিন্তু সেখানেও যে প্রতিযোগিতা! অবশেষে ২০১৬ সালে মহসিন আখতার নামে এক কাশ্মীরি ব্যবসায়ীকে চুপি চুপি বিয়ে করেন ঊর্মিলা।
২২২৪
সেই সাদামাটা বিয়েতে বলিউডের বন্ধু বলতে উপস্থিত ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার মণীশ মলহোত্র। মণীশের এক হাউজ পার্টিতেই প্রথম বার মহসিনের সঙ্গে আলাপ হয় ঊর্মিলার।
২৩২৪
কিন্তু কানাঘুষো শোনা যায়, সেই বিয়েও খুব একটা সুখের হয়নি। মহসিন নাকি তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন করেন। যদিও ঊর্মিলা এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনওদিনও কিছু বলেননি। জানাননি কোনও অভিযোগও।
২৪২৪
গত বছর ঊর্মিলা যোগ দেন রাজনীতিতে। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে লড়াইও করেন। কিন্তু ভোটে হেরে দল থেকেই ইস্তফা দেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়েছে জনপ্রিয়তা। ‘রঙ্গিলা গার্ল’ আজ হারিয়ে গিয়েছেন গ্ল্যামারের অন্ধকারে।