কাজী নজরুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।
কাজী নজরুল ইসলামের গান ব্যবহারের অনুমতি নয়! নজরুলের সাহিত্যকর্ম (কবিতা) আত্তীকরণ করে একটি রচিত সুরের অংশ হিসাবে পুনর্নিমাণ (রিক্রিয়েট) এবং শব্দগ্রহণের অনুমতি চেয়েছিলেন ‘পিপ্পা’ ছবির নির্মাতারা। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে নজরুলের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর সঙ্গে এই মর্মে ছবির প্রযোজকদের দু’লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজী (কাজী সব্যসাচীর কন্যা) রবিবার বলেন, “চুক্তির কথা প্রয়াত কল্যাণী কাজী (নজরুলের ছোট ছেলে কাজী অনিরুদ্ধের স্ত্রী) এবং তাঁর বড় ছেলে অনির্বাণ ছাড়া কেউ জানতেন না! মনে হচ্ছে, আমাদের পরিবারের গাফিলতিতেই ‘কারার ঐ লৌহকপাট’-এর মতো গানের এমন বিকৃতি ঘটল। আমি অত্যন্ত লজ্জিত।”
চুক্তিপত্রে অনির্বাণ সাক্ষী হিসাবে সই করেছেন। কল্যাণী এবং অনির্বাণের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাঁদের দু’জনকেই নজরুলের একমাত্র উত্তরাধিকারী ধরে নিয়ে ছবির প্রযোজক রয় কপূর ফিল্মসের তরফে চুক্তি করা হয় বলে নজরুলের পরিবারের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে। অনির্বাণের সহোদর কাজী অরিন্দমের দাবি, “লোকে বলছে, আমরা টাকা নিয়ে দাদুর গান বিক্রি করেছি! এটা অসম্মানজনক। চুক্তির বিষয়ে আমি পুরো অন্ধকারে ছিলাম। আমার মা-ও তখন অতি বৃদ্ধা। ইংরেজিতে লেখা চুক্তির খুঁটিনাটির দায় দাদাকেই (অনির্বাণ) নিতে হবে।” অরিন্দম এবং তাঁর আমেরিকা প্রবাসী বোন অনিন্দিতা চুক্তিপত্রটি অনির্বাণকেই প্রকাশ করতে হবে বলে দাবি করেছেন। অনির্বাণ দেওয়ালির পরেই চুক্তিপত্রটি প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিতর্ক শুরুর পরে তিনি অরিন্দমকে চুক্তিপত্রটি পাঠান বলে দাবি করেছেন। নজরুলের গানে যিনি সুর দিয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই এ আর রহমানকে বার্তা পাঠানো হলেও এখনও পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। তবে পিপ্পা-র নির্মাতা রয় কপূর ফিল্মসের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা আইনত সব দিক রক্ষা করেই যা করার করেছি।”
আইনের মারপ্যাঁচে কল্যাণী, অনির্বাণদের ভুল বুঝিয়েই চুক্তিটি সম্পন্ন হয় বলে সংশ্লিষ্ট কারও কারও ধারণা। চুক্তিতে বার বার নজরুলের সাহিত্যকর্ম বা কবিতার কথাই বলা হয়েছে। গানের কথা নেই। নজরুলের সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা, পুনর্বিন্যাস (রিফর্ম্যাট) ও সংক্ষিপ্তকরণের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ। খিলখিল কাজী এ দিন বলেন, “এই সব কারণেই কেউ দাদুর গান ব্যবহার করলে আমরা রেকর্ডিং না-শুনে ছাড়পত্র দিই না।” তাঁর কথায়, “যা হয়েছে তা শুধু নজরুল ইসলামকে নয়, বাংলা সংস্কৃতি, বাঙালি জাতিকে অপমান!”
কারার ঐ লৌহকপাট যিনি প্রথম রেকর্ড করেছিলেন, সেই গিরিন চক্রবর্তীর কন্যা চন্দা চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন বলেন, “আমার বাবা দেশপ্রেমের আবেগ কণ্ঠে নিয়ে এ গান গেয়েছিলেন! এ গানের ইতিহাস জানলে রহমান কখনওই এ ভাবে গানটিকে উপস্থাপনা করতেন না!” বর্ধমানের শাঁখারিপুকুরের বাসিন্দা, নজরুলগীতি শিল্পী চন্দা ব্যথিত, রহমানের সুরে গানটির মর্মবস্তুই পাল্টে গিয়েছে।
নজরুলের জীবনীকার, তথা প্রবীণ নজরুল গবেষক বাঁধন সেনগুপ্ত বলছিলেন, ‘‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের কারাবরণের পরে ১৯২১ সালে তাঁর পত্রিকা ‘বাঙ্গলার কথা’র জন্য ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ কবিতা হিসেবে লেখেন নজরুল। বন্ধু মজফফর আহমেদের স্মৃতিকথায় আছে, চিত্তরঞ্জন-পুত্র লেখা চাইতে এলে কয়েক মিনিটে কবিতাটি লিখে দেন নজরুল। এর পরে হুগলি জেলে বন্দিদশায় সুর বসিয়ে অমর গানটির সৃষ্টি নজরুলের। ১৯২৪ সালে ‘ভাঙার গান’ বইটিতে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’-এর প্রকাশ। ১৯২৪-এর ১১ নভেম্বর বইটি নিষিদ্ধ করে ব্রিটিশ সরকার। তা ফের প্রকাশিত হয় স্বাধীন ভারতে, বিদ্রোহী কবি যখন রুদ্ধবাক, অসুস্থ!’’ ব্রিটিশ ভারতে বই নিষিদ্ধ হওয়ার ১০০ বছর বাদের এই নভেম্বরে গানটির অমর্যাদায় অনেকেই কষ্ট পাচ্ছেন।
তথ্য সহায়তা: সুপ্রকাশ চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy