Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Haimanti Shukla

Abhijit Banerjee: ‘ছেড়ে যেতে হবে সব’... স্মৃতিপথে হেঁটে অভিজিৎ-বিদায়ে হৈমন্তী, সৈকত, রূপঙ্কর

ছয়, সাত, আটের দশকের কিংবদন্তি শিল্পী, গীতিকার, সুরকারেরা বিদায় নিচ্ছেন ধীরে ধীরে। স্বাভাবিক ভাবেই স্বজনহারার শোকে ব্যথাতুর শিল্পীরা। সপ্তাহের প্রথম দিনেই গানের দুনিয়ায় ফের নতুন শোক। প্রয়াত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্মৃতিপথে হেঁটে পুরনো দিনের কথা ভাগ করে নিলেন হৈমন্তী, সৈকত, রূপঙ্কর।

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে হৈমন্তী শুক্ল, সৈকত মিত্র, রূপঙ্কর বাগচী

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে হৈমন্তী শুক্ল, সৈকত মিত্র, রূপঙ্কর বাগচী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:৪৯
Share: Save:

লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপ্পি লাহিড়ি— গানের দুনিয়ায় একে একে নিভিছে দেউটি! ছয়, সাত, আটের দশকের কিংবদন্তি শিল্পী, গীতিকার, সুরকারেরা বিদায় নিচ্ছেন ধীরে ধীরে। স্বাভাবিক ভাবেই স্বজনহারার শোকে ব্যথাতুর শিল্পীরা। সপ্তাহের প্রথম দিনেই গানের দুনিয়ায় ফের নতুন শোক। প্রয়াত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্মৃতিপথে হেঁটে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে পুরনো দিনের কথা ভাগ করে নিলেন হৈমন্তী শুক্ল, সৈকত মিত্র, রূপঙ্কর বাগচী।

এখনও সারেঙ্গিটা বাজছে...

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নেই। কথাটা শোনার পরেই মনে অনেক কথার ভিড়, জানিয়েছেন হৈমন্তী শুক্ল। স্মৃতিকাতর শিল্পীর কথায়, ‘‘অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর করা ‘এখনও সারেঙ্গিটা বাজছে’ আমার জনপ্রিয়তা দিয়েছে অবশ্যই। কিন্তু তাঁর আরও একটি ছবির গান এখনও শ্রোতারা শুনতে চান। ‘বালক শরৎচন্দ্র’ ছবিতে ওঁর সুরে গেয়েছিলাম, ‘শিব ঠাকুরের গলায় দোলে বৈঁচি ফলের মালিকা’। ছবিটা সাত দিনের মাথায় চলে গিয়েছিল। গানটা আজও জনপ্রিয়।’’ শিল্পীকে সুরকারের কাছে প্রথম নিয়ে যান গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন হৈমন্তীর মাত্র একটি গান প্রকাশিত, ‘এ তো কান্না নয় আমার’। ওই একটি গানই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরিচিত করেছিল গায়িকাকে। আস্তে আস্তে ব্যক্তিগত জীবনেও শিল্পীর অভিভাবক-স্থানীয় হয়ে ওঠেন সুরকার। গানের পাশাপাশি পরামর্শ দিতেন ভাল-মন্দের। হৈমন্তীর দাবি, ‘‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে র‌্যাপ গানও গেয়েছি দাদার সৌজন্যে। আজ সেই মানুষটাই নেই। আমরা যেন অনাথ হয়ে যাচ্ছি।’’

ছেড়ে যেতে হবে সব...

সৈকত মিত্র অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রথম চিনেছেন শ্যামল মিত্রের ছেলে হিসেবে। মিত্র বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল গীতিকার-সুরকারের। শিল্পীকে তিনি গান শেখাতেন। সাল ১৯৭৭। দুটো গান তিনি শেখাতে এসেছিলেন গায়ককে। ‘রূপসী রূপাঞ্জনা’ এবং ‘ছেড়ে যেতে হবে সব’। সৈকতের কথায়, ‘‘গান দুটো তোলানোর পরে খুবই আন্তরিক ভাবে বাবাকে বলেছিলেন— শ্যামলদা, বম্বেতে কাজ করে আপনি তো আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন। আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম, আপনি আমার সুরে গান গাইবেন তো? শুনে বাবা আপ্লুত। পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন, ‘তোমাদের সঙ্গে সেই কবে থেকে আলাপ!’’ সলিল চৌধুরীর তিন ঘনিষ্ঠ সহকারীর অন্যতম ছিলেন অভিজিৎ। শ্যামল মিত্রের সঙ্গে তাঁর আলাপ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘ছিপখান তিন দাঁড়’ কবিতা-গানের সূত্রে। সেই গানের সুরকারও ছিলেন অভিজিৎ। তবে শ্যামল মিত্র-অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুটির সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘হংসপাখা দিয়ে ক্লান্ত রাতের তীরে’। প্রতিটি গানের সুরের অর্থও তিনি বুঝিয়ে দিতেন প্রত্যেক শিল্পীকে। যা অন্যদের মতো আমিও শিখেছি। গানের প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ছিল বলেই এটা উনি করতে পারতেন।

নয় থাকলে আরও কিছু ক্ষণ...

রূপঙ্কর বাগচীর সম্বোধনে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ওঁর ‘মেসোমশাই’। অনেক ছোট থেকে চিনতেন। তাই গীতিকার-সুরকারের স্ত্রী শিল্পীর কাছে ‘মাসিমা’। তাঁর প্রয়াণের খবরও গায়ক প্রথম জানান নেটমাধ্যমে। রূপঙ্করের তৃতীয় অ্যালবামের তিনটি গান লেখার পাশাপাশি সুরও দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান শিল্পী। ছবিতেও কাজ করেছেন একসঙ্গে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করে রূপঙ্কর বলেন, ‘‘মেসোমশাই ভীষণ নিয়মনিষ্ঠ ছিলেন। ঈশ্বরে অসম্ভব বিশ্বাস। ঘড়ি ধরে খাওয়াদাওয়া, ওঠাবসা করতেন। সলিল চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর সলিল চৌধুরীকে উনি আত্তীকরণ করেছেন। ফলে, এই দু’টি বিষয় নিয়ে তিনি ছিলেন অনর্গল।’’ গায়কের দাবি, সুরকার হলেই যে ভাল লিখবেন, এমন কথা নেই। বিশেষত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়ে তার নজির ছিল না তেমন। তিনি দুটোই অনায়াসে পারতেন। বাংলা ভাষায় মারাত্মক দখল ছিল। এমন শিক্ষিত, নিয়মানুবর্তী, বিরল প্রতিভা সঙ্গীত দুনিয়ায় খুব কম আসেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Haimanti Shukla Abhijit Banerjee Music Composer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy